শরীর ও মন
ফ্রিকেলস বা ত্বকে ছোট ছোট তিল হলে
অধ্যাপক ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
৩০ আগস্ট ২০২৩, বুধবার
ফ্রিকেলস সাধারণত বংশগত হয়, আবার অতিবেগুনি (UV) রশ্মির সংস্পর্শে আসার কারণেও হতে পারে। ফ্রিকেলস এটি এমন ধরনের দাগ যার বর্ণ বাদামী, আকারে ২-৪ মিমি এর মতো গোলাকার, ত্বকের সমান স্তরে অবস্থান করে এবং মূলত ত্বকের কোনো ক্ষতি সাধন করে না। তবুও সবাই এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে থাকেন। যদিও এটা কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যা নয়, এটি অনেকের কাছেই বিব্রতকর। দেখা যায় ফর্সা ত্বকে এ দাগ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটা অনেকটাই বংশগত, পরিবারের কারো এ সমস্যা থেকে থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফ্রিকেলস সূর্য রশ্মিতে আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করে তাই সান এক্সপোজড জায়গাগুলোতে বেশি হতে দেখা যায়, এছাড়া সারা শরীরেই ফ্রিকেলস হতে পারে।
প্রকারভেদ
ফ্রিকেলস সাধারণত দুই ধরনের হয়-
এফিলাইডস
এরা সমতল এবং লালচে বাদামী রঙের হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় এবং শীত এলেই চলে যায়। এই রকমের ফ্রিকেলস বংশগত হতে পারে।
লেনটিজাইন্স
লেনটিজাইন্স সম্ভবত ছোট ছোট ট্যানের দাগের মতো বাদামী বা কালো রঙের হতে দেখা যায়। এ ধরনের তিল এফিলাইডস থেকেও গাঢ় রঙের হয়।
কতিপয় লক্ষণ
ফ্রিকেলস প্রধানত কালো বা বাদামী দাগ যা মুখের ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে; বিশেষ করে নাকের দুই পাশের জায়গাগুলোতে। ফর্সা বা ফ্যাকাসে ত্বক এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। রোদের আলোতে ফ্রিকেলস আরো স্পষ্ট ও তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হয়।
ফ্রিকেলস হওয়ার কারণসমূহ
১. ফ্রিকেলস বা তিল এর আসল কারণ জেনিটিকাল। কারো পরিবারে বাবা-মা দু’জনের তিল থাকলে তার হবার সম্ভাবনা ৮০%। আর যে কোনো এক জনের থাকলেও এ মাত্রা ৬০-৬৫ %।
২. রোদ ফ্রিকেলসের প্রধান শত্রু। অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিতে ঘোরাঘুরির ফলেও হতে পারে। অনেকে আছেন গাড়িতে চলাফেরা করেও ফ্রিকেলস কবলিত হন এবং ভাবেন গাড়িতে থাকার কারণে তার ত্বক হয়তো সূর্য রশ্মির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এ ধারণা ভুল। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে খুব সহজেই সূর্য রশ্মি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ত্বকে এবং তৈরি করতে পারে ফ্রিকেলস।
৩. হরমোনাল ইমব্যালেন্সের জন্য-ও ফ্রিকেলস হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ ইস্ট্রোজেন ক্ষরিত হয় ও ত্বকের উপরিভাগে মেলানিন সহ অন্যান্য পিগমেন্ট বাড়িয়ে দিয়ে ফ্রিকেলস সৃষ্টি করে।
প্রচলিত ধারণা ও সমাধান
অনেকের মতে ফ্রিকেলস কখনো পুরোপুরি ভাবে সেরে উঠে না। আসলে এ কথা সঠিক নয়। পরিমিত চর্চায় এ সমস্যার সমাধান অবশ্যই সম্ভব। ফ্রিকেলস প্রচলিত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় ব্লিচিং উপাদান। এটি ত্বকের কালো দাগগুলোকে সাময়িক হালকা করে দেয় বা কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্ত মুখকেই কালো করে দেয় ফলে ফ্রিকেলস উপস্থিতি কম লক্ষণীয় হয়। তবে এটি যেহেতু ত্বকের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর এর ব্যবহার আস্তে আস্তে কমে আসছে। এখনকার প্রসাধনীগুলোতে ব্লিচের পরিবর্তে তরল নাইট্রোজেন, শক্তিশালী রাসায়নিক পীল, লেজার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্রিকেলস পরিত্রাণে ডার্মাটোলজি চিকিৎসকের মাধ্যমে নিরাময় করা উত্তম।
ফ্রিকেলস পরিত্রাণে খাদ্যাভ্যাস
যদিও এমন বিশেষ কোনো খাবার নেই যা ফ্রিকেলস সারিয়ে তোলে, তবু এমন কিছু খাবারের নাম এখানে দেয়া হলো যা আপনার ফ্রিকেলস সারানোর চিকিৎসায় সাহায্য করবে। টাটকা সবুজ শাক-সবজি, দুধ, ডিম, বীজ, ভিটামিন এ, বি, সি, ফ্যাটি এসিড ইত্যাদি নিয়মিত গ্রহণ করুন। দেখবেন ত্বকে আসবে প্রাকৃতিক জেল্লা।
মেনে চলুন
-যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
-যদি বের হতেই হয় তবে ভালো মানের এবং ব্র্যান্ডের সানব্লক ব্যবহার করুন। যখনই রোদে বের হবেন প্রতিবারই লাগিয়ে নিতে ভুলবেন না।
-রোদে গেলে ছাতা, স্কার্ফ, বড় হ্যাট ব্যবহার করুন।
-সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
লেখক: চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ (সাবেক) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। প্রয়োজনে: ০১৭১১-৪৪০৫৫৮