ঢাকা, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২১ রজব ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

রাইট টু ফ্রিডমের ওয়েবিনারে প্রশ্ন

সরকার ভালো কাজ করলে ইনক্লুসিভ ইলেকশনে ভয় কেন?

তারিক চয়ন
৯ আগস্ট ২০২৩, বুধবারmzamin

সরকার যদি মনে করে তারা দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন করেছে তাহলে ইনক্লুসিভ ইলেকশন দিতে কেন এতো ভয়? মানুষকে কেন তাদের পছন্দ নির্বাচন করতে দেওয়া হচ্ছে না? ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন রাইট টু ফ্রিডমের আয়োজনে “বাংলাদেশে মানবাধিকার সুরক্ষা" শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় এমন প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার ঢাকা সময় রাত ৮টায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন কোনো মানদণ্ডেই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। আগের নির্বাচনগুলোকে কেন্দ্র করে যেহেতু নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন, গুম, খুন দেখা গেছে তাই আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ যেনো নিরাপদে ভোট দিতে পারে; নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ যেনো নিরপেক্ষ থাকে সে প্রত্যাশাই করছি। বাংলাদেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মনে রাখা উচিত, র‍্যাবের অতীত কর্মকাণ্ডের জন্যই তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা এসেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী, মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। নির্বাচন আসলেই এটা বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক এক জরিপের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তৃণমূলের মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন যে, তারা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে হুমকি পান। নিষেধাজ্ঞার পরও যেসব গুম-খুনের সাথে রাষ্ট্রীয় সংস্থা জড়িত সেগুলোর তদন্ত হয় নি। তিনি 
হাইকোর্ট বেঞ্চের এক সিনিয়র বিচারপতির সাম্প্রতিক বক্তব্য তুলে ধরেন। ওই বিচারপতি হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, "হাইকোর্টের সেই অবস্থান নেই। অনেক ক্ষেত্রে আমরা আদেশ দিলে কিছু হয় না। জামিন আদেশ থাকা সত্ত্বেও যখন গ্রেফতার করা হয়, ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়, তখন মৌখিক আদেশে আর কি হবে।" আলী রীয়াজ বলেন, এমন এক অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী নির্বাচনই বলে দেবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র থাকবে নাকি দেশটি স্বৈরতন্ত্রের পথে যাবে। পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন না হলে সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ক্যাম্পেইনার ইয়াসামিন কবিরত্নে বলেন, বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং কূটনীতিকদের আশ্বস্ত হওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত, দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলা উচিত। দেশের মানবাধিকার রক্ষার দায় সরকারের বলেও তিনি মনে করেন।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সংগঠন মায়ের ডাক এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার পর গুমের ঘটনা নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, আগের ভিক্টিমদের স্বজনদের অভিযোগগুলো সঠিক ছিল। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের অধিকাংশই সরকারের পক্ষে কাজ করছে। বিকল্প ছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। কিন্তু, ফেসবুকও এখন সরকারের সাথে কাজ করবে বলে জানা যাচ্ছে। সানজিদা বলেন, আমি জানি আমার ভাই গুম হওয়াতে কেমন লাগে। আমরা কেউই জানিনা তাদের সাথে কি করা হয়েছে। সরকারেরই দায়িত্ব তাদের খুঁজে বের করা। গুমের শিকার ব্যক্তিরা ক্রিমিনাল ছিলেন না, তারা শুধুই বিরোধী দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশে ফেসবুক পোস্টের জন্য জেল খাটতে হয় উল্লেখ করে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, মানবাধিকার লংঘনে অন্যের দিকে আঙ্গুল তুললেও অন্যের ভুল ধরে নিজের অপকর্মের দায় এড়ানো যায় না। এ প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা নতুন নয়। যুক্তরাষ্ট্রেও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটে। কিন্তু, এসব উদাহরণ টেনে মানবাধিকার লংঘনকে বৈধতা দেওয়া যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার তিন মূলনীতির একটি ছিলঃ মানবিক মর্যাদা।সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সত্য বলতে হবে, এজন্যই আপনারা সাংবাদিক। সাংবাদিকদের কারো পক্ষ নেওয়া উচিত নয়। মিথ্যা তথ্য বা বিভ্রান্তি ছড়ালেও সেগুলো স্থায়ী হয় না, মানুষ ঠিকই এক সময় সত্যটি জানতে পারে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে সরকার মানবাধিকার রক্ষা করছে এমন দাবির বিষয়ে ইয়াসামিন কবিরত্নে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে সরকার ভালো কাজ করলেও তাদের এভাবে রেখে দেওয়াটা যথেষ্ট নয়। এই আশ্রয় দিয়ে মানবাধিকার লংঘনকে কাউন্টার দেওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, শরণার্থী জীবনের মতো কষ্টের আর কিছু নেই। শুরুতে সাধারণ মানুষ রোহিঙ্গাদের সাহায্য করলেও 'রোহিঙ্গা' শব্দটি এখন গালি দিতে ব্যবহার করা হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য অনেক কিছু করতে হবে। তিনি বলেন, গুমের শিকার ব্যক্তিদের নিয়ে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেকেই এমন বাজে সব কথা বলেন যা থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বুঝে নিতে পারে তাদের বন্ধুরাষ্ট্রে কি ধরনের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

আলী রীয়াজ প্রশ্ন করেন, সরকার যদি মনে করে তারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে ভালো কাজ করেছে, দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন করেছে তাহলে ইনক্লুসিভ ইলেকশন দিতে তাদের কেন এতো ভয়? তিনি বলেন, মানুষকে তাদের পছন্দ নির্বাচন করতে দিন।

আয়োজক সংগঠন রাইট টু ফ্রিডমের বোর্ড মেম্বার জন ড্যানিলোয়িচের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর (অব.) উইলিয়াম বি মাইলাম। উপস্থিত ছিলেন রাইট টু ফ্রিডমের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুশফিকুল ফজল আনসারী।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Bangladesh Army

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

১০

সহযোগীদের খবর/ হাসিনাকে রেখেই এগোবে ভারত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status