শরীর ও মন
পায়ুপথের রোগ যখন ক্যান্সারের ঝুঁকি
ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
১৯ জুলাই ২০২৩, বুধবার
পায়ুপথের বিভিন্ন রোগকে অনেকেই পাইলস বলে জানে কিন্তু এটি ভুল ধারণা। পায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়। পায়ুপথে সাধারণত ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোঁড়া, প্রোলাপস, রক্তজমাট, পলিপ বা টিউমার হয়ে থাকে।
ফিসার:
সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পায়ুপথের সামনে অথবা পেছনে ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হলে তাকে ফিসার বলে। যার ফলে তীব্র বা মাঝারি ব্যথা ও জ্বালাপোড়া হয়। মলত্যাগের সময় সামান্য রক্ত যায়, পায়ুপথ সরু হয়ে যেতে পারে। এই রোগের প্রধান চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়। এ ছাড়া কুসুম গরম পানিতে ছেঁক দিয়ে ভালো থাকা যায়। কাজ না হলে কোনো জটিলতা দেখা দিলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
পাইলস:
চিকিৎসাবিদ্যায় পাইলসকে বলা হয় হেমোরয়েড। বাংলায় একে অর্শরোগও বলা হয়।
ফোঁড়া:
পায়ুপথের ভেতরে ও বাইরে ছোট-বড় নানাধরনের ফোঁড়া হতে পারে। ডায়াবেটিস এর অন্যতম কারণ। অস্ত্রোপচার না করলে এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরে ফিস্টুলা হওয়ার ঝুঁকি খুব বেশি।
ফিস্টুলা:
ফিস্টুলা হলো একটি নালি, যার একটি মুখ পায়ুপথের বাইরে, অপরটি ভেতরে থাকে। সাধারণত ফোঁড়া হওয়ার কারণে এটি হয়। এর চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। তবে নালির ভেতরের মুখ যদি খুব উপরে হয় বা আঁকাবাঁকা হয়, তবে অস্ত্রোপচার ব্যর্থ হতে পারে। কাজেই অস্ত্রোপচারের আগে ফিস্টুলোগ্রাম, এমআরআই বা কিছু প্রয়োজনীয় টেস্ট করে নেয়া ভালো।
প্রোলাপস:
পায়ুপথ দিয়ে অনেক সময় রেকটাম বৃহদন্ত্রের কোনো অংশ আংশিক বা পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারে। একে প্রোলাপস বলে। এই রোগ ছোট বাচ্চাদেরও হতে পারে। অনেক সময় এই রোগ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সমস্যা বেশি হলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। পেট না কেটে পায়ুপথ দিয়েও অপারেশন করা যায়। রেপারোস্কপির মাধ্যমেও অপারেশন করা যায়।
যেসব কারণে ক্যান্সারের ঝুঁঁকি থাকে:
পরিপাকতন্ত্রে অন্ত্র হলো একটি ফাঁপা পেশির নল যা পাকস্থলি থেকে মলদ্বারে যায়। এটি খাদ্য ভাঙার জন্য এবং অপ্রাচ্য বর্জ্যকে মলদ্বারের দিকে সরানোর জন্য অত্যাবশ্যক। কোলন ক্যান্সার হলো বৃহৎ অন্ত্রের ক্যান্সার। এটি নিয়ে বিব্রত বা লজ্জিতবোধ করার পরিবর্তে একজন রোগী চিকিৎসককে লক্ষণগুলো সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলা উচিত।
আশার কথা হলো- অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য, যদি প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা যায়। প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং যথাযথ চিকিৎসা হলে অনেকে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে সুস্থভাবে জীবনযাপন করতে পারেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে সতর্কতা চিহ্ন বা উপসর্গ:
প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে মলের সঙ্গে রক্ত, আম যাওয়া, মল ত্যাগের অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া। এটি একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি যাতে মনে হতে পারে অন্ত্রটি খালি করতে হবে কিন্তু আসলে কিছুই বের হয় না। এই সমস্যার অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে রক্তস্বল্পতা, পেটে ব্যথা এবং কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া। যদিও এই উপসর্গগুলো আলসার, হেমোরয়েড বা ক্রোনস ডিজিজের মতো অন্য ছোটখাট সমস্যার ফলে হতে পারে, তবে এ ধরনের লক্ষণ দেখলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ঝুঁকির কারণ: ধূমপান, মদ্যপান, অতিরিক্ত চর্বি বা লাল মাংস বেশি খাওয়া, অতিরিক্ত ওজন বা স্থ’ূথলকায়, আলসারেটিক পোলাইটিস, ক্রনস ডিজিজ।
কলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা:
১. সার্জারি: প্রাথমিক পর্যায়ের অন্ত্রের ক্যান্সারের জন্য সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
২. রেডিওথেরাপি ও কেমো থেরাপি: এটি সাধারণত সার্জারির পরে ব্যবহার করা হয় যাতে কোনো ক্যান্সার সেল থেকে গেলে তা ধ্বংস হয়ে যায়। এটি সাধারণত এডভান্স ক্যান্সারের জন্য ব্যবহার করা হয়। অপারেশনের পূর্বে রেডিওথেরাপি দিয়ে রেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করা হয়। রেডিও ও কেমো দেয়ার পর সার্জারি করতে হয়। অপারেশনের পরেও কেমো থেরাপি দেয়া হয়।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ)
কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯ গ্রিন রোড, একে কমপ্লেক্স, লিফট-৪, ঢাকা।
ফোন-০১৭১২৯৬৫০০৯