ঢাকা, ৪ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৭ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

শরীর ও মন

অটিজম শিশু ও আমাদের আচরণ

ডা. এম এ হক, পিএইচডি
১৬ জুলাই ২০২৩, রবিবার
mzamin

স্বাভাবিক শিশুদের থেকে অটিজম শিশুদের আচার-আচরণ ভিন্নরকম। এরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে না। অন্যান্য শিশুর সঙ্গে এদের মিশতেও সমস্যা হয়। এদের সামাজিক যোগাযোগে ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে অনেক সময় অভিভাবকদের বিরূপ আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। আমাদের দেশে সচেতনতার অভাবে অটিজম শিশুর বড় হয়ে ওঠার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের চারপাশের অনেক পরিবারেই কোনো না কোনো অটিস্টিক শিশু দেখতে পাই। মানসিক বিকাশের জন্য এদের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।

আমাদের দেশে কোনো পরিবারের একজন সদস্য অটিস্টিক থাকলে সে পরিবারের অন্য সদস্যদের জীবনে তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অটিস্টিক শিশুর আচরণগত অস্বাভাবিকতা থাকায় সমাজের অনেকের মনে বিরক্তির সৃষ্টি হয়। অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে আশপাশের লোকেরা বিরক্ত হয়। কারণ অটিজম শিশুটি হয়তো হঠাৎ করে হেসে উঠলো বা কেঁদে ফেললো অথবা তার অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়ে সে চিৎকার করলো বা লাফালাফি করলো- এসব সবার কাছে অস্বাভাবিক।  তারপর ফিসফিস করে বলবে- এমন বাচ্চা নিয়ে রেস্টুরেন্টে কেন আসে! এমন বাস্তবতায় অনেক বাবা-মা অহেতুক বিড়ম্বনা থেকে বাঁচতে অটিস্টিক শিশুকে পাবলিক প্লেসে নিতে চান না।

অটিজম দৃশ্যমান কোনো শারীরিক সমস্যা নয়। অনেক সময় এসব শিশুরা একে ওকে ধাক্কা দেয়, থুথু দেয়, কামড়ে দেয়, লাথি মারে বা ঘুষি মারে। অনেক সময় অন্যান্য লোকজন কোনো অটিস্টিক শিশুর এসব আচরণ দেখে ধারণা করেন যে, শিশুটি দুষ্ট অথবা তার বাবা-মা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব আচরণের ফলে তাদের পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাবা-মায়েরা হতাশায় ভোগেন, পারিপার্শ্বিক সমাজ এবং পারিবারিকভাবেও তারা হেয় হন। দিনে দিনে তারা নিকটাত্মীয়দের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এমনকি পারিবারিক অনুষ্ঠানসমূহে তাদের নিমন্ত্রণও করা হয় না।

করণীয়: অটিজম শিশুদেরকে সহজভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। এদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। এদেরকে ভালোবাসা ও স্নেহ দিতে হবে। যথাযথ চিকিৎসার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা পেলে এসব শিশু একসময় স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে। অটিস্টিক শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হয় বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। এসব শিশুকে দেখে বিরক্তবোধ বা উপহাস করা যাবে না। অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সবার সহানুভূতি দেখানো প্রয়োজন। সকলে যদি অটিস্টিক শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাহস ও উৎসাহ দেয় এবং আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে অবশ্যই একদিন অটিস্টিক শিশুরা সুস্থ হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সক্ষম হবে। তারা পরিবার ও দেশের বোঝা না হয়ে বরং সম্পদে পরিণত হবে।

লেখক:  ডা. এম এ হক, পিএইচডি; এম. ফিল; ডিএইচএমএস। চিকিৎসক ও গবেষক (ক্রনিক ডিজিজ অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার)।
চেম্বার: ড. হক হোমিও ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিসার্স সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্রান্ড, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১৪৪ গ্রীন রোড, পান্থপথ, ঢাকা। মোবাইল: ০১৭১২-৪৫০ ৩১০;

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status