নির্বাচিত কলাম
ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা সমাধান
সফল না ব্যর্থ হবে চীন?
মোহাম্মদ আবুল হোসেন
২৭ জুন ২০২৩, মঙ্গলবার
চীনা নেতৃত্ব ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে ভারসাম্য বা সমাধানে অগ্রসর হচ্ছে বা হতে চাইছে তা হবে ইসরাইলকে সাপোর্ট দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে। যদিও ফিলিস্তিন এখনো অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল, ত্রাণ সহায়তা কর্তন করে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে, তবু চীনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রয়োজন মাহমুদ আব্বাস ও তার প্রশাসনের। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনে চীনের সহায়তা ও বিনিয়োগ অনুল্লেখ্য। শান্তি সংলাপের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের ভেতরেই বেশ কিছু বড় প্রতিবন্ধকতা আছে। তা হলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণভাবে বৈধতা, অভ্যন্তরীণ বিভাজন অন্যতম
মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে আরও বৃহত্তর পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন। সৌদি আরব-ইরানকে তারা মনের কালিমা দৃশ্যত সরিয়ে দিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে বাঁধতে সক্ষম হয়েছে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের কদর বেড়েছে। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে একত্রিত করে নতুন এক শক্তির জানান দিচ্ছে চীন। তারই অংশ হিসেবে তারা এবার দশকের পর দশক ধরে চলা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সমস্যা সমাধান করতে চায়। এ প্রচেষ্টায় পশ্চিমা বিশ্ব, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী সহ অনেকে ব্যর্থ হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে বেইজিং সফর করেছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তার এ সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে রিয়াদে ‘চায়না-আরব স্টেটস সামিটে’র পর চীন সফরকারী প্রথম একজন আরব প্রেসিডেন্ট আব্বাস। তার এই সফর এমনই ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি ইস্যু সমাধানে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আব্বাসের সফরের মধ্যদিয়ে চীন ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সম্পর্কের একধাপ অগ্রগতি হয়েছে। তারা কৌশলগত অংশীদারিত্বে একমত হয়েছেন। শি জিনপিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এবং নতুন তিনটি পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ করবে ফিলিস্তিন। সাম্প্রতিক সময়ে এই তিনটি নতুন পরিকল্পনার কথা প্রকাশ করেছে বেইজিং। তা হলো- গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ এবং গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ। পশ্চিমা ঘরানার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি বিকল্প মডেল হিসেবে সম্মিলিতভাবে এই তিনটি মডেলকে দেখা হয়। এ ছাড়া তারা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলেছেন। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে চীনের নতুন এই পরিকল্পনা সফল হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা চলছে। কঠিন সত্য হলো, বেইজিং এই দুই দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপনে সফল হবে না। তা সত্ত্বেও তারা ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে নিজেদের বিজয়ী দেখার চেষ্টা করতে পারে।

চীনের পরিকল্পনার মধ্যে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘে একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে সমর্থন করবে। যেখানে জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী করার কথা বলা হবে। এক্ষেত্রে ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনা হবে জাতিসংঘের রেজ্যুলুশনের ওপর ভিত্তি করে। এর উদ্দেশ্য, ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে চূড়ান্ত দফায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। কয়েক দশক ধরে এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের রক্তে সিক্ত হচ্ছে মাটি। মায়ের বুক খালি হচ্ছে। ছোট্ট শিশুদেরকে হত্যা করা হচ্ছে নির্মমভাবে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে চীনের আগ্রহ বৃদ্ধি পেলো কেন? এর উত্তর খুব সোজা। চীন চাইছে মধ্যপ্রাচ্যকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্বকে ভাগ করে ফেলতে। তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় বিশ্বের পূর্বাংশ। তাই বেশ কিছু লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে তারা। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যাপক লক্ষ্য স্থির করেছে বেইজিং। প্রথমত, সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তা বিস্তৃত করার চেষ্টা করছে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সম্পর্কের ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রাচ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আগ্রহ দেখাচ্ছে চীন। তার লক্ষ্যে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক শান্তিরক্ষায় নিজেকে বৈশ্বিক নেতৃত্বে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে চীন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল বিরোধ সমাধানে যেকোনো রকম অগ্রগতি তাদের সেই ভাবমূর্তিকে দৃঢ় করবে। আর সেটাই হবে তাদের গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভের একটি লক্ষ্য। তৃতীয়ত, সিনজিয়াং, হংকং, তাইওয়ান ও ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা চাপকে কাটিয়ে উঠে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে চায় চীন। এসব বিষয়ে তারা সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কয়েক দশকের চলমান সংঘাত ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে লড়াইয়ে চীন মধ্যস্থতা করে এর একটি টেকসই সমাধান করবে, শেষ দুটি লক্ষ্য পূরণে তা অত্যাবশ্যক নয়। তা সত্ত্বেও প্রকৃতপক্ষে একটি অগ্রবর্তী শান্তি প্রক্রিয়ায় চীনের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়, যদিও তারা মধ্যপ্রাচ্যের কূটনীতিতে ভালো করেছে।
চীনের এই লক্ষ্য পূরণে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলের সবচেয়ে কট্টর সরকার। তাদের দখলদারিত্ব, আগ্রাসী সামরিক তৎপরতা, প্রযুক্তিগত একনায়কতন্ত্র দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যদিয়ে তারা মৌলিক রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বৃহত্তর অর্থে ধর্ম এবং জাতিগত জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট সৌদি আরব-ইরানের মধ্যকার উত্তেজনার মতো করে দেখলে চলবে না। এটা দুই দেশের মধ্যে একই রকম অবস্থানের মধ্যে সংঘাত নয়। এই যুদ্ধ বা লড়াই হলো দখল হয়ে যাওয়া মানুষদের এবং দখলদারদের মধ্যে লড়াই। একপক্ষ নির্যাতিত। অন্যপক্ষ নির্যাতনকারী। ফিলিস্তিনের ভূমিতে আরও বসতি সম্প্রসারণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের দখলীকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইল দ্রুতগতিতে বসতি সম্প্রসারণ করছে। দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি এরই মধ্যে একরকম বাধা হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রহে সুস্পষ্ট সুবিধা আছে। বেশ কিছু আরব দেশকে সঙ্গে নিয়ে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘আব্রাহাম একর্ড’ চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যদিয়ে ওইসব ফিলিস্তিনিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে যারা ২০১৭ সালের বিক্ষোভে মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। সিএনএন’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংলাপ তার অগ্রাধিকারে নেই। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আব্রাহাম একর্ড এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে শান্তির বিষয়টি আসবে প্রথমে।
ফলে চীনা নেতৃত্ব ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে ভারসাম্য বা সমাধানে অগ্রসর হচ্ছে বা হতে চাইছে তা হবে ইসরাইলকে সাপোর্ট দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে। যদিও ফিলিস্তিন এখনো অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপর নির্ভরশীল, ত্রাণ সহায়তা কর্তন করে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে, তবু চীনের অর্থনীতি এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রয়োজন মাহমুদ আব্বাস ও তার প্রশাসনের। বর্তমান সময়ে ফিলিস্তিনে চীনের সহায়তা ও বিনিয়োগ অনুল্লেখ্য। শান্তি সংলাপের ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনের ভেতরেই বেশ কিছু বড় প্রতিবন্ধকতা আছে। তাহলো ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণভাবে বৈধতা, অভ্যন্তরীণ বিভাজন অন্যতম।
পক্ষান্তরে বৈশ্বিকভাবে ইসরাইলের তৃতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। ১৯৯২ সালে ইসরাইলে তাদের বাণিজ্য ছিল ৫ কোটি ডলার। তা ২০২১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০ কোটি ডলার। চীনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তারা ইসরাইলকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অবনমনের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাণিজ্যের এই ক্রমবৃদ্ধির প্রবণতা পরিবর্তন হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮-২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে ইসরাইল। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চীন থেকে ১০৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে ইসরাইল। ২০২০ সালে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে ইসরাইল। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে এক্ষেত্রে চীনকে দেখা হয় জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হিসেবে। ফলে চীনের বিষয়ে অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে স্ক্যান বা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া। এর ফলে ইসরাইলে মন্থর হয়ে পড়ে চীনের বিনিয়োগ। এ জন্য ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে বাণিজ্যকে ব্যবহারের সুযোগ পাবে না চীন। উপরন্তু, দুঃসংবাদ হলো ইসরাইলে বর্তমানে অতি উগ্র ডানপন্থি সরকার। তারা ফিলিস্তিনি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে ফিলিস্তিন এবং ইসরাইলের মধ্যে শান্তি স্থাপনে কোনো ফলপ্রসূ অর্জনে চীনা প্রচেষ্টা কাজে আসবে বলে মনে হয় না।
পাঠকের মতামত
ইহুদিরা হলো অভিশাপ্ত জাতী! তারা সারা পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকবে কিন্তু তাদের কোন নিজস্ব রাষ্ট্র হবে না! -এমনটাই ধারণা একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর! বর্তমান যে রাষ্ট্রটি বিদ্যমান আছে তা ১৯১৭ সালে সম্পাদিত একটি বৃটিশ কলোনী! যা তরান্বিত হয় হিটলারের ইহুদী নিধনের পর থেকে! ধৰ্মীয় বাচ বিচারে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা সবচেয়ে বেশী ইহুদী নিধন করলেও ১৯৪৭ সাল থেকে তার দায় মুসলিমদের এলাকা দখলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যার মাধ্যমে "ইসরাইল" ইহুদী কলোনী গড়ে উঠেছে! ইহুদিরা এলাকাটি তাদের পবিত্র মাতৃভূমি দাবী করে, ফলে কোনো শান্তী চুক্তি তারা মানে না এবং ভবিষ্যতেও তারা মানতে চাইবে না! অতএব রক্তপাত অব্যাহত থাকবে۔۔۔۔এটাই আমার বিশ্বাস!
ফিলিস্তিন সমস্যার কোন দিন কোন সমাধান হবে না। একদিকে চিন থাকবে, অন্যদিকে আমেরিকা আরো দূরে থাকবে এর অর্থ হলে ফিলিস্তিন সব সময় বন্ধুকের নলেই থাকবে। মুসলমান হয়েও যারা মুসলমানের নেতৃত্ব দেন তারাই আমেরিকা এবং ইসরাইলের সঙ্গে বন্ধুত্ত্ব গড়ে তুলে ফিলিস্তিন সমস্যার আরও জটিল করে তুলছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা নিজেরাই নিজেদের কবর তৈয়ার করছে, নিজেদের মধ্যে আত্মকলহে র মাধ্যমে, সেক্ষেত্রে কেউ কোন দিন তাদের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।
এইসবই আমেরিকার চালবাজি কথা-বার্তা। যে শিশু জন্মই হলো না সে শিশু ক হবে কি না হবে তার মন্তব্য না করাই ভালো। ফিলিস্তিন -ইসরাইল সম্পর্ক যদি সত্যিই একটা মাত্রা পায় সেই ক্ষেত্রে আমেরিকার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেকটাই হ্রাস পাবে। ভেকধারী মোড়ল আমেরিকার প্রভাব এখন এমনিতেই কমের দিকে। তাদের মাথাব্যথা এইক্ষেত্রে একটু বেশিই হবে।