প্রথম পাতা
হাসনাবাদের মানুষ ভাগ্যবান!
শরিফ রুবেল
৯ জুন ২০২৩, শুক্রবার
লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত দেশ। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানীতেও তীব্র লোডশেডিং হচ্ছে কয়েক দিন ধরে। কিন্তু অনেকটা ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদের দোলেশ্বর এলাকায়। গত এক মাসে এখানে বিদ্যুৎ গেছে এমন তথ্য জানাতে পারেনি কেউ। লোডশেডিং যে একেবারেই নেই তথ্য মিলেছে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিস থেকেও। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জোনে চাহিদার সমান বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সব সময়। তাই লোডশেডিং দিতে হয় না। এই দোলেশ্বর এলাকায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের পৈতৃক বাড়ি। এটি তার নির্বাচনী এলাকারও অংশ। গতকাল সরজমিন এলাকা ঘুরে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র মিলেছে। লোডশেডিং না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারাও খুশি।
পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে নেমেই ইকুরিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ এর হাসনাবাদ জোনাল অফিস। এই জোনে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৮ মেগাওয়াট। প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ৩৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন ওই অফিসের একজন কর্মকর্তা। চাহিদার চেয়ে কখনো কমবেশি হয়নি। চাহিদা অনুযায়ী জোগান পেলে লোডশেডিং দিতে হবে কেন এমন প্রশ্ন করেন ওই কর্মকর্তা। যদিও তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
সরজমিন দেখা যায়, দোলেশ্বর আব্দুল মান্নান কলেজ রোড এলাকায় প্রতিটি দোকানে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। এলাকার লোকজনের মধ্যেও বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো অভিযোগ লক্ষ্য করা যায়নি। কলেজ রোডসহ হাসনাবাদ, ইকুরিয়া, আব্দুল্লাহপুর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত বাড়িগুলোর অধিকাংশের জেনারেটর নেই। যাদের আছে, তাদের কখনো জেনারেটর চালাতে হচ্ছে না। ইউপিএস-আইপিএস’র প্রয়োজন পড়ছে না ।
আব্দুল মান্নান কলেজ রোডে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাসার পাশের বাসিন্দা মো. সেন্টু মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এখানে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। আমি দুই তিন মাসের মধ্যে কোনো লোডশেডিং দেখি নাই। এজন্য লোকজনের ভোগান্তিও নেই। এই গরমে বিদ্যুৎ গেলে টেকা যেতো না। তবে দিনের বেলা কখনো কখনো গেলেও ১০ থেকে ১৫ মিনিটের ভেতর চলে আসে। গত ১৫ দিনে ঘণ্টাব্যাপী কখনো বিদ্যুৎ যেতে দেখিনি। কলেজ রোডে রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে। এজন্য মাঝেমধ্যে রাস্তার বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হয়। তখন অল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে। সেটাও বিদ্যুতের লোকেরা আগেই এলাকাবাসীকে জানিয়ে দেন। এটার জন্যই এমন হয়। না হলে বিদ্যুৎই যেতো না।
হাসনাবাদ মধ্যপাড়া হানাফিয়া জামে মসজিদের সামনে বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক নূর হোসেন বলেন, দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ পাচ্ছি। তবে গতকাল সন্ধ্যায় একবার গেছিল, পরে ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে আসছে। এখানে কোনো লোডশেডিংয়ের সমস্যা নাই। শুধু আমার এলাকা না, আশপাশের এলাকায়ও বিদ্যুৎ যায় না। লাইনে সমস্যা হলে মাঝেমধ্যে মাইকিং করেই বন্ধ করে দেয়। মন্ত্রীর এলাকা বলে বিদ্যুৎ যাচ্ছে না এমন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা হতে পারে। এটা স্বাভাবিক বিষয়। মন্ত্রীর এলাকা। আবার বিদ্যুৎমন্ত্রী। তাই এতটুকু সুবিধা তো পেতেই পারে। হয়তো মন্ত্রী সাহেবের কোনো নির্দেশনা থাকতে পারে। আর বিদ্যুৎমন্ত্রীর এলাকায় বিদ্যুৎ গেলে কেমন দেখায়। এজন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য।
ইকুরিয়া এলাকার বদরউদ্দিন নামের একজন বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় বিদ্যুৎ গেলে ইজ্জত থাকে? এ কারণে এই এলাকায় বিদ্যুৎ যায় না। ইকুরিয়ায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না, এমন আমি কখনো দেখিনি। আরও মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেন। তারাও একই কথা বলবে। মন্ত্রী সাহেব তার এলাকার লোকজনের কথা ভাবেন। গরমে তাদের কষ্ট হোক। এটা হয়তো তিনি চান না। এমন হতে পারে। এজন্যই আমাদের এলাকায় কোনো লোডশেডিং হয় না। ২৪ ঘণ্টায় আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি। মাঝেমধ্যে গেলেও হালকা বাড়ি মেরে আবার চলে আসে। একে লোডশেডিং বলা যায় না। বিদু্যুৎ গেলেও সর্বোচ্চ পাঁচ-দশ মিনিট থেকে চলে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৪ হাসনাবাদ জোনাল অফিসের একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, আমাদের যে চাহিদা, সেটাই পাচ্ছি। কোনো কম-বেশি নেই। তাহলে লোডশেডিং দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সুবিধাভোগীদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখেন। তারা বলতে পারবে না যে, এই এলাকায় কখনো লোডশেডিং হয়েছে। তবে সংস্কার কাজ ও লাইন মেরামতের জন্য মাঝেমধ্যে কিছু এলাকার সংযোগ বন্ধ রাখতে হয়। এটা রুটিনওয়ার্ক। আমাদের প্রতিদিন ৩৮ মেগাওয়াট দরকার। ৩৮ মেগাওয়াটই পাচ্ছি। এজন্য লোডশেডিংয়ের কথা ভাবতে হচ্ছে না। তবে সামনে যদি চাহিদার তুলনায় কম সাপ্লাই পাই। তাহলে লোডশেডিংয়ের কথা ভাবতে হতে পারে। তিনি জানান, সারা দেশে চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও হাসনাবাদ জোনে কখনো এমন ঘটনা ঘটেনি।
জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ দক্ষিণ থানার কদমতলী, আব্দুল্লাহপুর, জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া কোন্ডা ও শুভাঢ্যা এলাকা নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সংসদীয় আসন ঢাকা-৩। এসব এলাকা সরজমিন ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় এসব এলাকায় লোডশেডিং তেমন নেই। দিনে দু-এক বার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনা ঘটলেও রাতে তারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ গেলেও ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই চলে আসছে। কদমতলী এলাকার বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, দিনের বেলায় ২ বার যায়। ২ বার মিলে প্রায় ১ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। তবে ঘন ঘন যাওয়া আসার ঘটনা ঘটে না। রাতে কখনো বিদ্যুৎ যায় না। রাতে ঠিকঠাকই পাচ্ছি। এজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।