ঢাকা, ২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

আবুধাবিতে অগ্নিকাণ্ডে ৪ বাংলাদেশি নিহত

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে
১ জুন ২০২৩, বৃহস্পতিবার

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির শারজাহতে একটি সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে নোয়াখালীর ৩ জনসহ  ৪ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। নিহতদের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোরে শারজার ওই সোফা কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ডমুরুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড তারাবাড়িয়া গ্রামের দুলাল কোম্পানী পাটোয়ারী বাড়ির আবদুল কাদেরের ছেলে মো. ইউসুফ মিয়া (৪৫), একই গ্রামের মীর আহম্মদের বাড়ির মীর হোসেনের ছেলে তারেক হোসেন বাদল (৪২) ও আতর আলী হাজী বাড়ির আবদুল ওহাবের ছেলে মো. রাসেল (২৬)। অপর নিহতের বাড়ি কুমিল্লা নাঙ্গলকোট এলাকায়। সরজমিন নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের লোকজন ও আত্মীয়-স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

একই গ্রামের ৩ জনের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসী। নিহত রাসেলের মা শরীফা বেগম বলেন, ২ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রাসেল দ্বিতীয়।

বিজ্ঞাপন
ঢাকার একটি ব্যাগ কারখানায় চাকরি করে সংসার চালাতো সে। দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। দেড় বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান থাকলেও সেও শারীরিকভাবে অসুস্থ। জীবিকার তাগিদে ও পরিবারের খরচ চালাতে প্রায় ৬-৭ লাখ টাকা ধারদেনা করে ২০২২ সালে আবুধাবিতে যায় রাসেল। একই এলাকার আরও কয়েকজন থাকায় একটি সোফা কারখানায় চাকরি করতো রাসেল। প্রতিদিনের মতো সোমবার রাত ১টার দিকে তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে সে। পরদিন রাতে ডিউটি আছে তাই দ্রুত ঘুমিয়ে পড়বে বলে মোবাইলে বিদায় নেয় রাসেল। 

মঙ্গলবার দুপুরে আবুধাবিতে থাকা এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে রাসেল মারা গেছে। নিজের ভাঙাচুরা ঘর, তার উপর ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে যে পরিমাণ দেনা হয়েছে, তা পরিশোধ কীভাবে করবেন আর সংসার কীভাবে চলবে এমন কথা বলে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন শরীফা বেগম। নিহত ইউছুফ মিয়ার বড় ছেলে মহিনুল ইসলাম মিলন বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে আবুধাবি যায় তার বাবা ইউছুফ মিয়া। এরপর থেকে সোফা কারখানাটিতে চাকরি করতেন তিনি। সবশেষ ৫ বছর আগে দেশে আসার পর ছুটি শেষে পুনরায় কর্মস্থলে ফিরে যান তিনি। এক বছর আগে মালিকের কাছ থেকে কারখানাটি ক্রয় করে নিজের দেশের শ্রমিক দিয়ে সেটি পরিচালনা করে আসছিলেন।

 এত বছর কষ্ট করে একার আয়ে সংসার চালিয়ে আসছিলেন তিনি। ভালো সময় আসার আগে এমন দুর্ঘটনা আমাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলে তারেক হোসেন বাদলকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন বাবা মীর হোসেন। চার ছেলের মধ্যে দু’জনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। এরই মধ্যে চলে গেলেন বাদল। মীর হোসেন বলেন, কয়েক বছর ওমান থাকার পর ভিসায় সমস্যা হওয়ার কারণে গত বছর দেশে ফিরে আসেন বাদল।

 একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজনসহ তার ৩ ছেলে রয়েছে। ৮ মাস আগে এক আত্মীয়ের সহযোগিতায় আবুধাবিতে গিয়ে এলাকার ইউছুফের সোফা কারখানায় চাকরির নেয় বাদল। দুই ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার সংসার চালানোর দায়িত্ব তার কাঁধে ছিল। বাদল চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবারের সব শেষ হয়ে গেছে। নিহতের পরিবার ও স্বজনদের দাবি যেহেতু আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। শরীরের যেটুকু অংশ রয়েছে সেটুকু যেনো বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। ডুমুরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন কানন মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঢাকায় থাকার কারণে নিহতদের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে নিহতদের বাড়িতে পাঠিয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হবে।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status