শিক্ষাঙ্গন
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ভোগান্তি
ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে নিতে সমস্যা কোথায়?
রাবি প্রতিনিধি
(৩ মাস আগে) ২৮ মে ২০২৩, রবিবার, ১:৪৬ অপরাহ্ন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৯ মে থেকে। এতে ৩৯৩০টি আসনের বিপরীতে তিনটি ইউনিটে চূড়ান্ত পর্যায়ে আবেদন করেছেন ১ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থী।
রাবি'র এই ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজশাহীতে প্রতিবারের ন্যায় এবারও কমপক্ষে তিন লক্ষ মানুষের আগমন ঘটতে যাচ্ছে। তবে ছোট্ট শহর রাজশাহীতে হঠাৎ করে এত মানুষের আগমনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় নানাবিধ সংকট। এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী-অভিভাবকের আবাসন নিয়ে পড়তে হয় মহা সংকটে। সেই সাথে যাতায়াতের ক্ষেত্রেও আছে নানা ভোগান্তি। ইতোমধ্যেই মহানগরের বেশির ভাগ হোটেল-মোটেলের কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ম্যাচ এবং আবাসিক হলগুলোতে তীব্র আবাসন সংকটের। গাদাগাদি করেও থাকার সুযোগ হয় না অনেকের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে আয়োজন করতে বাঁধা কোথায়?
গত বছর ভর্তি পরীক্ষার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকগণের ভোগান্তি এড়াতে বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চিন্তাভাবনা আছে। তবে এ বিষয়ে এ বছর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, ক্যাম্পাসের বাইরে পরীক্ষা নিতে রাজি নন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অধ্যাপকগণের একটি বড় অংশ। তবে গুঞ্জন আছে, রাজশাহী মহানগরের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রচ্ছন্ন চাপও আছে যেন পরীক্ষা রাবি ক্যাম্পাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি প্রশ্নফাঁসের শঙ্কা, জনবল সংকট, একক ভর্তি পরীক্ষার প্রজ্ঞাপনের কারণেই বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা নেযওয়া সম্ভব হচ্ছে না
তাঁরা বলছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এযাবৎকালে প্রশ্নফাঁসের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় গত ১৫ এপ্রিল। তবে তারও আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সামনের বছরগুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না, তাই আলাদা করে শুধু একটি শিক্ষাবর্ষের জন্য বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটাই সরে আসে রাবি প্রশাসন।
তবে প্রশাসনের এমন দাবি মানতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কিছু শিক্ষক। এদের মধ্যে একজন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন,"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিভাগীয় শহরে সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারে, তবে রাবি কেন পারবে না? প্রশ্নফাঁস এড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধান করবে; এবং আমি মনে করি এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় লোকবল রয়েছে। বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন চাইলেই শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি নিরসন করতে পারতো।"
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং রাবি শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন,"বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে; তবে আমাদের বুঝতে হবে যেই বলয়ের মধ্যে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রমটি সম্পন্ন করে থাকি, সেটা যেন দুর্বল না হয়ে যায়।"
তবে বিশ্ববিদ্যালয় অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের প্রচ্ছন্ন চাপকেই বেশি দায়ী করছেন। তাঁরা বলছেন, বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা না হাওয়ার পেছনে প্রশাসনের উপর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাপকেই বেশি দায়ী বলে মনে করছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষাকে ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠে রাজশাহী মহানগরীর হোটেল-মোটেল, পরিবহন ও ম্যাস মালিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য। জানা গেছে, শুধু এই সময়টুকুতেই হোটেলগুলো সবচেয়ে বেশি আয় করে থাকে। আবাসন সংকটকে কাজে লাগিয়ে হোটেলে রুম ভাড়া তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়ে দেন হোটেল মালিকরা। ভর্তি পরীক্ষা বিভাগীয় শহরে হলে এই আয় অনেকটাই কমে যাবে। গুঞ্জন আছে, মহানগরের আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রচ্ছন্ন চাপও আছে বিভাগীয় শহরে যেন পরীক্ষা না হয়।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, “গত দু'বছর ধরে দেখছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সমন্বয় সভা হয় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কার্যালয়ে। অথচ এটা হওয়ার কথা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান; ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় স্বাধীনভাবে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিকে পুঁজি করে একটা বড় বাণিজ্য হয় রাজশাহী শহরে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট রয়েছে। এছাড়া, আগামীতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কী সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে তাও বলা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যেই আপনারা জেনে গেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়েছে। এসব বাস্তবতায় এ বছর বিভাগীয় শহরে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।”