শিক্ষাঙ্গন
ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
কামরুল হাসান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
(৬ দিন আগে) ২৭ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫:৪৫ অপরাহ্ন

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু কর্মকর্তা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল আহসান লিমন ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। গুঞ্জন আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো ধরণের অনুমতি ছাড়াই তিনি বিদেশ চলে গেছেন। তবে অন্য আরেকটি সূত্র জানিয়েছে,কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও তিনি দেশেই অবস্থান করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার আসামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে কর্মরত মাহমুদুল আহসান লিমন গত ১৩ মে (মঙ্গলবার) থেকে তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে গত ৪ঠা মে (রবিবার) ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে জুলাই-আগস্টে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণে যোগসাজশের অভিযোগ এনে মাহমুদুল আহসান লিমনকে ২ নাম্বার আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক ও বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান।এর পর থেকেই আত্মগোপনে সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি এবং ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে বিরোধী দল-মতের শিক্ষার্থীদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার নানা অভিযোগ রয়েছে মাহমুদুল হাসান লিমনের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের অত্যাচার-নির্যাতনে স্নাতক শেষ করতে না পারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সদস্য হাসনাইন সাকিব বলেন, ‘লিমন ঠিক করতো বিশ্ববিদ্যালয়ে কে কে ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে আর কে কে করবে না। অনেক শিক্ষার্থীর বাবা-মা লিমনে কাছে গিয়ে পা ধরতো তার ছেলে কে লেখাপড়া শেষ করার সুযোগ দিতে কিন্তু লিমন সেই সুযোগ দেননি। একদিন আমি মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর খবর পাই লিমনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমার উপর হামলা করতে আসছে, পরে আমি পালিয়ে আসতে বাধ্য হই। সেদিনই ছিলো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ দিন। এরপর আর আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে পারিনি। ’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হাসান প্রধান বলেন, ‘বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের যেসকল সন্ত্রাসী ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত ও অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে তাদের মধ্যে অনেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করছে। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং বহাল তবিয়তে রেখেছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’ এ বিষয়ে জানতে মাহমুদুল আহসান লিমনের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মাহমুদুল আহসান লিমনের কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিতের বিষয়ে আইন অনুষদের ডিন মুহাম্মদ ইরফান আজিজ বলেন, ‘তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে অসুস্থতাজনিত কারণে তার ছুটি প্রয়োজন। আমি তাকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহ আবেদন করতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি আবেদন করেননি। ছুটি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে তার অনুপস্থিতির বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবগত করেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছুটি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে গত ২১ মে তাকে শোকজ করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবেনা তার জবাব চাওয়া হয়েছে। বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’