ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

‘গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়েই সরকারকে হটানো হবে’

স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মে ২০২৩, রবিবার
mzamin

আকস্মিক গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। বলেছেন, অতীতে এ ধরনের সরকার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরাজিত হয়েছে। এই সরকারেরও একই পরিণতি হবে। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে নেতারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, সরকার-বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই তাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে। সরকারকে হঠাতে এই মুহূর্তে গণঅভ্যুত্থানের বিকল্প নেই। 

সরকার পতনসহ ১০ দফা দাবি ও দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর মুক্তির দাবিতে এই জনসমাবেশ করে বিএনপি। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলনরত কোনো দল এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে দেবে না। তিনি বলেন, আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে, আগামীতে যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বাধা দেবে তাদের ভিসা দেয়া হবে না, আর এই বাধাদানকারীরা হলো আওয়ামী লীগ। এদেশে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হলে গণঅভ্যুত্থানের কোনো বিকল্প নেই।

বিজ্ঞাপন
আমরা আশাবাদী, জনগণ প্রস্তুত, অচিরেই গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়ে যাবে।

সরকার আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দায়ের শুরু করেছে বলে অভিযোগ করে মোশাররফ হোসেন বলেন, এবার কিন্তু সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। আগামী নির্বাচনে তাদের কোনো খবর থাকবে না। সেজন্য নানা ধরনের ফন্দি-ফিকির করছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। অতীতে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। আগামীতেও হবে না। সেজন্য বিএনপি তার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। আজকে আন্তর্জাতিকভাবেও দাবি উঠেছে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে। বিএনপিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনরত কোনো দল হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না।  ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, গায়ের জোরে ক্ষমতায় আবারও টিকে থাকার জন্য আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য একটাই- আবারো গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। ইতিমধ্যে দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামীতে আমাদেরকে ইস্পাত কঠিন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, অতীতে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশে সরকারি দল ও তাদের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর নির্যাতনের উপেক্ষা করে মানুষ সমাবেশ সফল করেছে। আজকে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশে ধরনা দিচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো সুষ্ঠু হয়নি। ২০১৮ সালে আগের রাতেই ভোট ডাকাতি করেছে আওয়ামী লীগ। কারণ তারা জানে খালেদা জিয়ার দল বিএনপিকে ঠেকানো যাবে না। 

মোশাররফ বলেন, এবারো সরকার ইভিএম দিয়ে ভোট করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু জনগণের দাবির মুখে ইভিএম প্রকল্প বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে আমেরিকা র‍্যাব’র বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে আবারো ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিয়েছে। এই ঘোষণা বাংলাদেশের মানুষের জন্য লজ্জাজনক। আমরা অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানাচ্ছি। সেইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে। তাছাড়া সংকটের সমাধান হবে না। বিএনপি’র শীর্ষ এই নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলবো- অবৈধ অনৈতিক হুকুম মানবেন না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী কোনো অন্যায় কাজ করবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি। আপনারা অতি উৎসাহী হবেন না। 

জনগণের পক্ষে অবস্থান নিন। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সেজন্য জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই। মানুষ একবেলা ঠিকমতো খেতে পারে না। আজকে মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন করছে। সমাবেশে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ১৯৮১ সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। নয় বছর লেগেছে সরকার বিদায় করতে। যুবদলের সেøাগানে একদিন বানের পানির মতো ভেসে যাবে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা যখন রাজপথে থাকে, তখন সরকারের বুলেট, লাঠিসোঁটার তোয়াক্কা করে না। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বহু লোক বিদেশে ভিসার জন্য চেষ্টা করছেন, ভিসা পাচ্ছেন না। সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশের ভিসার জন্য চেষ্টা করছেন, কিন্তু পাচ্ছেন না। বিশ্বের কোনো দেশ চোর-বাটপারদের ভিসা দেয় না। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, গোপন চুক্তির মাধ্যমে বহু সম্পদ বিদেশের হাতে তুলে দিয়েছেন। রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র দিয়েছেন। ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর সব বের হবে।

 সরকার মাইনকার চিপায় পড়ে গেছেন। বের হওয়ার সুযোগ নাই।  আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, আপনি বলেন- শান্তি সমাবেশ হবে, আবার বলেন- আশান্তি সমাবেশ হবে। আবার বলেন- এখন থেকে প্রতিরোধ করবেন। কাকে প্রতিরোধ করবেন? জনগণের টাকা লুটপাট করছেন, এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কথা বললেন না তো! টাকা পাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কথা বলেননি।  মির্জা আব্বাস আরও বলেন, আপনার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্য উস্কানিমূলক। বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘাতের দিকে আসতে বললেন। আমরা তা চাই না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই সরকারের পতন ঘটাব। পূর্বঘোষিত কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে মেঘ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে নয়াপল্টনে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় এবং ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, মীর সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, রফিকুল ইসলাম বকুল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status