ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

কাঁধের জোড়ায় মারাত্মক সমস্যা বা আঘাত পেলে

ডা. জিএম জাহাঙ্গীর হোসেন
২৮ মে ২০২৩, রবিবার
mzamin

কাঁধ শরীরের একটি অংশ যা ৩টি হাড়, ৪টি জোড়া এবং ৩০টি পেশির সমন্বয়ে তৈরি। মানব শরীরের জোড়াগুলোর মধ্যে কাঁধের জোড়ায় সবচেয়ে বেশি নড়াচড়া হয় এবং গঠনগতভাবে অপেক্ষাকৃত সবচেয়ে কম দৃঢ় অবস্থায় থাকে। স্বাভাবিক আঘাত ছাড়াও বিভিন্ন রোগের কারণে কাঁধ ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়।

যেমন- কোনো কিছুতে ঘুষি দিয়েছেন বা ঘুষি মিস হয়েছে এতে কাঁধের ইনজুরি হতে পারে। পেশাগত কারণে পুনরাবৃত্তি কাজ যেমন পেইনটিং, গ্লাস পরিষ্কার করা, ওজন তোলা, বোর্ডে লেখা এবং কিছু ধরনের খেলাধুলা কাঁধের দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরি করে থাকে। এছাড়া বয়স্কদের ব্যবহারজনিত ক্ষয়, জোড়ায় অতিরিক্ত হাড় (আর্থ্রাইটিস) এবং কিছু কিছু রোগ কাঁধের দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরি করে।

প্রাথমিক অবস্থায় করণীয়:
১. তৎক্ষণাৎ ইনজুরি হলে জোড়াকে পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে। ফলে টিস্যু ইনজুরি ও ব্যথা কম হবে।
২. বরফের টুকরা টাওয়ালে বা ফ্রিজের ঠা-া পানি প্লাস্টিকের ব্যাগে নিয়ে লাগালে ব্যথা ও ফুলা কমে আসবে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিনিট বা দুই ঘণ্টা পরপর ২০ মিনিট অনবরত লাগাতে হবে। তবে এটা সহনীয়র মধ্যে রাখতে হবে। এই পদ্ধতি আঘাতের ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে।
৩. জোড়ায় ইলাসটো কমপ্রেসন বা স্পিলিন্ট ব্যবহারে ফুলা ও ব্যথা কমে আসে।
৪. জোড়ায় আর্ম সিলিং বা স্পিলিন্ট দিয়ে উঁচু করে রাখলে ফুলা কম হবে।
৫. এনালজেসিক বা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন।
৬. ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর জোড়া নমনীয় ও পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যয়াম করতে হবে।
৭. হাড় ভাঙলে বা জোড়া স্থানচ্যুতি হলে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে।

প্রয়োজনীয় চিকিৎসা:
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রাথমিক চিকিৎসায় রোগীর ব্যথা ও ফুলা সেরে ওঠার পর এবং দীর্ঘমেয়াদি ইনজুরির ক্ষেত্রে রোগের ইতিহাস শুনে এবং জোড়ার বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে কি কি ইনজুরি হয়েছে এবং এর তীব্রতা নির্ণয় করতে হবে।

বিজ্ঞাপন
কখনো কখনো এক্স- রে ও এমআরআই’র সাহায্য নিতে হবে। প্রয়োজন হলে লিগামেন্ট, জোড়ার আবরণ ও পেশি ইনজুরি, জোড়ার ডিসপ্লেসমেন্ট, আর্থ্রাইটিস ও জোড়ায় অতিরিক্ত হাড়ের চিকিৎসা প্রদান করতে সক্ষম এমন আর্থ্রোস্কোপিক চিকিৎসকের কাছে বা সেন্টারে রোগীকে পাঠাতে হবে।

আর্থ্রোস্কোপ ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে কাঁধে প্রবেশ করিয়ে নিম্নোক্ত চিকিৎসা করা হয়:
১. লিগামেন্ট ও জোড়ার আবরণ এনকোর সুসার দ্বারা সেলাই করে হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে জোড়া ছুটে যাওয়া রোধ করা হয়।
২. পেশি ইনজুরির আকৃতি, ছোট বা বড় এবং অবস্থান নির্ণয় করা হয় এবং এনকোর সুসার দ্বারা সেলাই করে হাড়ের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়।
৩. আর্থ্রাইটিসের কারণে অতিরিক্ত হাড় সেভিং বা বের করা হয়।
৪. বার্সাইটিস ও আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট স্পেস কমে গেলে বিসঙ্কোচন করা হয়।
৫. কখনো কখনো বড় ধরনের পেশি ইনজুরির ক্ষেত্রে পেশি ট্রান্সফার করা হয়।
হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় এবং অসটিও আর্থ্রাইটিস হয়ে জয়েন্ট নষ্ট হলে জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। প্রাথমিক বা শল্য চিকিৎসার পর নিয়মিত ও উপযুক্ত পরিচর্যা করে জোড়ার স্বাভাবিক অবস্থা দ্রুত ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা।
চেম্বার: বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল লি:, শ্যামলী (মিরপুর রোড) ঢাকা-১২০৭।
হটলাইন-১০৬৩৩, ০১৭৪৬৬০০৫৮২

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status