ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

মার্কিন ঘোষণার পরই কি বদলে গেল গাজীপুরের দৃশ্যপট?

পিয়াস সরকার, গাজীপুর থেকে
২৬ মে ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

হয়ে গেল দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশন গাজীপুরের ভোট। নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান ঘোষণার পরদিনই দেশের বৃহত্তম সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ হয়। ভোটাররা দিনব্যাপী ভোট দিয়েছেন। অন্যান্য নির্বাচনের মতো ইভিএম নিয়ে জটিলতা চোখে পড়ে। এরপরও ভোটাররা সুন্দরভাবে ভোট দিয়েছেন। তবে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ছিল নেতাকর্মীদের ভিড়। কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত আজমত উল্লা খানের নৌকা প্রতীকের কর্মীদের অবস্থান ছিল সর্বত্র। কিন্তু সবকক্ষে মেলেনি স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পোলিং এজেন্টদের। সকালে ভোট শুরুর পর খুব একটা আমেজ দেখা যায়নি টঙ্গী কলেজে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভোটারদের উপস্থিতি।

বিজ্ঞাপন
গাজীপুর চৌরাস্তার পাশেই চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ে পুরো সময়টা জুড়েই ছিল উত্তেজনা। সেখানে অভিযোগ পাওয়া যায় জোরপূর্বক নৌকার প্রার্থীর ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে জোর করে নৌকা মার্কায় ভোট নেয়ার। একজন ভোটার অভিযোগ করেন তিনি অন্য মার্কায় ভোট দিলে তাকে সেটি বাতিল করতে বাধ্য করা হয়। এরপর রাজি না হলে উচ্চস্বরে বলতে শোনা যায়, মেয়রের ভোট নৌকায়, কাউন্সিলরের ভোট যাকে খুশি তাকে দেন। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী কক্ষে আসেন। তিনি বলেন, পোলিং এজেন্টদের দেখিয়ে বলে তোরা থাকতে অন্য মার্কায় ভোট দেয় কীভাবে? এরপর আমাকে প্রশ্ন করেন বাড়ি কোথায়? নাম কি? এরপর আমি কেন্দ্র থেকে চলে আসি। 

এই কেন্দ্রের বাইরে ক্ষণে ক্ষণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার তাড়িয়ে দেন তাদের। ৮ থেকে ১০টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায় কঠোর অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গাজীপুর আলিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শেষে উল্লাস প্রকাশ করে মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন কর্মীরা। এ সময় পুলিশ ও আনসার মিলে লাঠিচার্জ করতে উদ্যত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়, কোনো কর্মী এখানে থাকতে পারবে না। সে যে দলেরই হোক না কেন। আবার নৌকার পক্ষে ভোট কারচুপির অভিযোগে আটকও করা হয়েছে এক কর্মীকে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আসা অনেকেই পড়েন দুর্ভোগের মুখে। অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তীব্র রোদ উপেক্ষা করে।

সুশৃঙ্খল নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিংহভাগই। নৌকার বিপরীতে নির্বাচন করা জায়েদা খাতুনের টেবিল ঘড়ি ও হাতপাখার সমর্থকরাও বড় কোনো অভিযোগ করেননি। তবে জায়েদা খাতুনের পোলিং এজেন্ট না থাকার অভিযোগ করা হয়। চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক পোলিং এজেন্ট বলেন, অনেকেই ভয়ে আসে নাই। নির্বাচনের আগের দিন ফোন দিয়েছিল নৌকার কেউ। সে আমাকে ইনডিরেক্টলি হুমকি দেয়। তবে আজ কোনো সমস্যা হয় নাই। তবে অনেকেই ভয়ে ছিল। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা সাধারণ কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছি তারা কিছুটাতো ভয় পেয়েছি। এই কেন্দ্রের এক নারী পোলিং এজেন্ট বলেন, আমি সকালে স্বাক্ষর করে এসে ভয়ে চলে যাই। ঘণ্টা দু’য়েক পর ফোনে শুনেছি ভালো আছে পরিবেশ সেজন্য আবার রুমে গিয়ে বসি। তবে অনেকেই ভয়ে আসেনি।

গতকাল বিকাল ৫টার পর থেকে ভোটগ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা করছিলেন হাজারো নেতাকর্মী। নৌকার নির্বাচনী আইডি কার্ড ঝোলানো ছিল আহমেদ উদ্দিনের। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞাতো বুঝি না। তবে নেতারা সকালে বলে দিয়েছেন কোনো ঝামেলা যাতে পোলাপান না করে। আলোচনার সময় পাশ থেকে শুনছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্যাররা আমাদের বলে দিয়েছেন যেই ঝামেলা করুক আওয়ামী লীগের হোক কিংবা যে দলের তাকে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দিতে।

মার্কিন ঘোষণার প্রশ্ন তোলা হয়েছিল গাজীপুরের প্রবীণ রাজনীতিবিদ ফজলে হোসেনকে। তিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই একটা দলের জন্য দেশের জন্য ক্ষতিকর। নির্বাচন নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে এর একদিন পরেই সরকার প্রমাণ দিলো তাদের অধীনে উদাহরণ হওয়ার মতো ভোট হওয়া সম্ভব। গাজীপুরে এত সুন্দর নির্বাচন আগে হয় নাই। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের বাসস্থান চেগের ডালা এলাকায়। এই এলাকার লোকজন জানিয়েছিলেন, কয়েকদিন ধরে এই এলাকায় বহিরাগত ছেলেপেলেদের পাহারা ছিল। এই এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনান আহমেদ মুঠোফোনে জানান, সকাল থেকে তাদের আর দেখা যায়নি।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status