ঢাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, রবিবার, ৩১ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শিক্ষাঙ্গন

সৌন্দর্য হারাচ্ছে রাবি’র প্যারিস রোড, বাড়ছে আতঙ্ক

রাবি প্রতিনিধি

(১ বছর আগে) ২৯ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার, ১২:৩০ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

mzamin

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অনিন্দ্য সুন্দর একটি জায়গা হলো প্যারিস রোড। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, এই রাস্তাটি ও এর দুপাশের সুবিশাল গাছগুলোর সমন্বয়ে যে নান্দনিক একটি দৃশ্যের অবতারণা হয় তা দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরাও। তবে কালের প্রবাহে বিলীন হতে বসেছে এই সৌন্দর্য। হালকা বাতাসে ভেঙ্গে পড়ছে গাছের হালকা-মাঝারি থেকে শুরু করে মোটা মোটা ডাল। ফলে প্রতিনিয়ত এই রাস্তা জুড়ে বাড়ছে আতঙ্ক। সময়ের আবর্তনে প্যারিস রোড হারাতে বসেছে তার স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য।

প্যারিস রোড ক্যাম্পাসের ব্যস্ততম একটি রাস্তা। প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। ছুটির দিনে বাড়ে দর্শনার্থীদের ভিড়। ৩০-৪০ মিটার সুউচ্চ বিশিষ্ট এই গাছগুলো তাদের আয়ুষ্কালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। ঝড়-বৃষ্টির ঝুঁকিতে এক নীরব আতঙ্ক বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মনে। গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ক্যাম্পাসে হালকা বাতাসেই বৃহৎ আকৃতির একটি গগনশিরিশ গাছের মোটা ডাল ভেঙে পড়েছে। পূর্বেও এমন ডাল ভেঙে পড়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এর আগে, ২০১৯ সালে ঝড়ের কবলে পড়ে উপাচার্যের বাসভবনের পাশের দেয়ালে একটি গাছ উপড়ে যায়। অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে অনেকে রক্ষা পেয়েছে। এসব ডালপালা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ ক্ষয়ক্ষতিও হচ্ছে।

প্যারিস রোড-এর পুরনো কিছু ছবির সঙ্গে বর্তমান চিত্রের তুলনা করে দেখা যায়, রাস্তাটির দুপাশে সুবিশাল গগনশিরীষ গাছের পাতায় আচ্ছাদিত সবুজের সমারোহ অনেকটাই বিলীন হতে বসেছে। 
গাছগুলোর আয়ুষ্কাল সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কবির জানান, "গাছগুলোর আয়ু সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর। এখানে ১৯৬৫ সালে লাগানো হয়েছিল গাছগুলো। যা তাদের জীবনকালের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সে হিসেবে আর মাত্র কয়েক বছর বাঁচতে পারে গাছগুলো। এরপর গাছগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে মারা যাবে। অনেকগাছ ইতোমধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।’
জানা গেছে, জানা যায়, ১৯৬৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বর্ধনে হাতে নেওয়া হয় বিভিন্ন কর্মসূচি। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম. শামসুল হক ফিলিপাইন থেকে বিমান যোগে এই গাছগুলো আনেন। সেগুলো রোপণে দায়িত্ব দেন তৎকালীন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতিকে। তাঁর হাত ধরেই ক্যাম্পাসের কাজলা রোড থেকে শের-ই-বাংলা হল পর্যন্ত এই গগনশিরীষ গাছগুলো লাগানো হয়।

প্যারিস রোড-এর দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত এই গাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম Albizia richardiana; এটি কড়ইয়েরই একটি জাত। গবেষকরা জানিয়েছেন, গাছগুলোর carbon sequestration দক্ষতা খুবই ভালো। ফলে শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই নয়, গাছগুলো ক্যাম্পাসের পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডের বর্তমান চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে তারা বিভিন্ন মন্তব্য লিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা হৃদয় আল মিরু লিখেছেন, "২০১৪ সাল থেকে প্রিয় প্যারিস রোডের এই অবস্থা শুরু। কমতে কমতে প্যারিস রোডের সেই সৌন্দর্য এখন আর আগের মত নেই। এমন দৃশ্য মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ভালো থাকুক প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রিয় রোড।"

রাবি'র প্যারিস রোড এবং এর আশেপাশের সৌন্দর্য পুনরুত্থানে কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এটি নিয়ে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট থেকে পাসকৃত বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্যবর্ধন কমিটি। নয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং সদস্য-সচিব হিসেবে আছেন পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সাবরিনা নাজ।
প্যারিস রোডের সৌন্দর্যবর্ধন প্রসঙ্গে ড. সাবরিনা বলেন, আমাদের প্যারিস রোডের যেই গাছগুলো আছে, সেগুলোর চারা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। শুধু প্যারিস রোড নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাস্তার পাশের গাছগুলো দেখভাল করেন পাঁচজন মালি। উনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ পুরনো কর্মচারী; উদ্ভিদ লালন পালন সম্পর্কে তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আছে। সীমিত পরিসরে, অল্প কিছু চারা হয়তো তারা তৈরি করেছেন; কিন্তু প্রতি বছরই আমরা সেগুলো প্রতিস্থাপনের চেষ্টা করছি।"

প্যারিস রোডকে ক্যাম্পাসের একটি 'স্মারক রাস্তা' উল্লেখ করে অধ্যাপক সাবরিনা জানান, "নতুনভাবে চারা তৈরি একটি কঠিন কাজ; তবুও তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আমাদের কাছে এই রাস্তাটি একটি আবেগের জায়গা। পাঁচজন মালি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি, বড় গাছগুলোর পাশে কিছু ছোট গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, রাস্তাটির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে কিছু বিচ্যুতি যেগুলো হয়েছে, সেগুলো শেষ হয়ে গেলে গাছগুলো আবার জেগে উঠবে। সামনের  বর্ষায় আমরা আরও কিছু চারা রোপণ করতে চাচ্ছি; সেক্ষেত্রে একই চারা অর্থাৎ প্যারিস রোডের Albizia-কেই আমরা সংরক্ষণ করবো।"
 

শিক্ষাঙ্গন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শিক্ষাঙ্গন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status