ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে কৌতূহল

কাজী সোহাগ
১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার
mzamin

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে। দলীয় টিকিট কে পাচ্ছেন, কারা পাচ্ছেন, কোন হিসাবে দেয়া হবে, কাকে ধরলে টিকিট কনফার্ম হবে এসব ভাবনা তাদের মধ্যে। নরসিংদীর এক এমপি’র সঙ্গে সম্প্রতি টেলিফোনে কুশল বিনিময় শেষ হতেই তার প্রশ্ন ভাই এবার মনোনয়নের খবর কি। অমুক পাচ্ছেন কিনা, তমুককে বাদ দেয়া হবে কিনা, তার বিষয়ে কোনো খবর আছে কিনা এসব। অন্যদিকে বরিশাল অঞ্চলের এক আওয়ামী লীগ নেতা এরইমধ্যে তার ছেলেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি নিজেও একই আসন থেকে শেষবারের মতো মনোনয়ন পেতে আগ্রহী। কিন্তু পরিস্থিতি যদি পাল্টে যায় তাহলে বিকল্প হিসেবে নিজের উত্তরাধিকার হিসেবে ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় আছেন। একইভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক আওয়ামী লীগ নেতার কৌতূহল তার আসনে এবার জোট নিয়ে কোনো হিসাব-নিকাশ হবে কিনা। যদি জোটের হিসাব হয় তাহলে অতীতের মতো এবারও আসনটা দলীয় হাইকমান্ডের আদেশ মেনে ছেড়ে দিতে হবে। আর যদি জোটের হিসাব না থাকে তাহলে তিনি মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন।

আগামী নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের এ চিত্র বলা যায় গোটা বাংলাদেশেই।

বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সম্ভাব্য কোনো তারিখ দেয়া হয়নি। তবে সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯শে জানুয়ারি। কারণ, ২০১৯ সালের ৩০শে জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। সেই হিসাবে ২০২৩ সালের ২রা নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২৯শে জানুয়ারির মধ্যে ভোট হতে হবে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে এমন প্রস্তুতি নিয়ে এগোনো হচ্ছে। ওই হিসেবে নির্বাচনের বাকি এখনো ৯ মাস। তবে প্রস্তুতির সময় হিসেবে আর মাত্র ৬ মাস আছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা বলেন, এ কারণে এখন থেকেই মনোনয়ন নিয়ে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। 

দলীয় হাইকমান্ড এরইমধ্যে সবাইকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যেখানে দলীয় কোন্দল থাকবে সেখানে কোন্দলে জড়িত কাউকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। সেখানে বিকল্প প্রার্থীকে বিবেচনায় আনা হবে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রার্থীদের বিষয়ে খোঁজখবর ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অনেকটা সতর্ক হয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দলটির একাধিক নেতা মানবজমনিকে বলেন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও সাংগঠনিকভাবে নানা ধরনের জরিপ চালানো হয়েছে। তাই কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে কীভাবে দলের টিকিট পাওয়া যাবে সে পথ এখন থেকেই খোঁজা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে চিহ্নিত বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে কী আসবে না সেটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। কারণ তারা নির্বাচনে এলে হিসাব হবে একরকম আবার নির্বাচনে না এলে হিসাব হবে অন্যরকম। এদিকে দলীয় নেতারা মনোনয়ন পেতে নিজেদের মধ্যেও নানা ধরনের হিসাব মেলাচ্ছেন। মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা এখন থেকেই ফাইল তৈরির কাজ শুরু করেছেন। দলের জন্য তারা নিজেরা কি করেছেন তার একটি রিপোর্ট তৈরি করছেন। 

বিভিন্ন স্তরের আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাওয়ার দিক দিয়ে রেকর্ড করবে আওয়ামী লীগ। কারণ দলটি নানা প্রক্রিয়ায় এরইমধ্যে অনেক নেতা তৈরি করেছে। বিভিন্ন কমিটিতে অনেককে স্থান দিয়ে নেতৃত্বের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এসব প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ও জনপ্রিয় দল। এই দলটি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে। ফলে দেশের আমূল পরিবর্তন এনেছে। স্বাভাবিকভাবে এখানে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে সুসংগঠিতভাবে। তাই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা বাড়তেই পারে। এটা স্বাভাবিক একটা বিষয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের বিকাশ হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বিষয়। 

দলের নেতারা জানিয়েছেন, আমাদের হাতে ৬ মাস আছে এমন হিসাব ধরেই নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য এগোচ্ছি। কারণ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এ বিষয়ে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের ৫ বছর পূর্ণ হতে চলছে। হোপফুলি, নির্বাচন কমিশনের আভাস অনুযায়ী ডিসেম্বর মাসেই বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। আমরা সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের দিকে অভিযাত্রা শুরু করেছি। আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করবো। কিন্তু সংঘাতে যাবো না। আমরা সংঘাত চাই না, আমরা প্রতিযোগিতা চাই। আগামী নির্বাচনেও আমরা কম্পিটিশন চাই। ফাঁকা মাঠে আমরা গোল দেবো না। ওবায়দুল কাদের বলেন, সবাইকে বলছি-কেউ যদি মনে করেন নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তনের আর কোনো সুযোগ আছে, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। দিবাস্বপ্ন দেখছেন। নির্বাচন যথাসময়ে হবে। সরকার রুটিনওয়ার্ক করবে। নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতিত্ব এবং কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ হবে না। শেখ হাসিনার সরকার শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করবে। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতা করবে সরকার। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status