খেলা
বাছাই পর্বে দল না পাঠানোর পেছনে অর্থ সংকট না অন্য কিছু
স্পোর্টস রিপোর্টার
১ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার
গত ১৯শে সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতে বাংলাদেশ। দেশে ফেরা ফুটবলারদের বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ছাদ খোলা বাসে দেয়া হয় সংবর্ধনা। বাফুফে ভবনে দেয়া সংবর্ধনায় বসার জায়গা পাননি ফুটবলাররা। সেখানে বসে মেয়েদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। সেই অর্থ সংকট দেখিয়ে এবার মেয়েদের প্যারিস অলিম্পিকের বাছাই পর্বে পাঠাচ্ছেন না বাফুফে সভাপতি। টুর্নামেন্টে দল না পাঠিয়ে আগস্টে ফিফা ফ্রেন্ডলি খেলাতে চাইফে বাফুফে। চলছে মেয়েদের অনুশীলনও। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে খেলার প্রস্তুতিও নিচ্ছে ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এমনিতেই জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ কম। অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমার না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় হাতের মুঠোয় থাকা সুযোগটা ফসকে গেলো সাবিনাদের। এ নিয়ে মেয়েরা হতাশ হলেও তাদের মুখ বন্ধ। বাফুফের নির্দেশ, গণমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়া যাবে না। কাল দিনভর চেষ্টা করেও মেয়েদের সঙ্গে কথা বলা গেলো না। সাফ জয়ের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ‘টাকার অভাবে’ নারী দলকে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ একটা টুর্নামেন্টে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে বিস্ময়কর এবং হতাশার। প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করে দল বিদেশে পাঠানোর দায়িত্ব বাফুফের। সেই দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ তো বটেই, উল্টো দায় দিচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ওপর। যদিও যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের দাবি মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে মিয়ানমার সফরের টাকা চেয়েছে বাফুফে। এতো অল্প সময়ে তাদের পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব নয়।’ টুর্নামেন্টে দল পাঠাতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে কেন আর্থিক সহায়তা চাইতে হবে বাফুফেকে? মেয়েদের ফুটবলে তো স্পনসর আছেই! গত ২৬শে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করার ঘোষণা দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। তবে বাফুফের নারী ফুটবলের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণের ব্যাখ্যা, চুক্তি অনুযায়ী নাকি পৃষ্ঠপোষকদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার খরচ দেওয়ার কথা নয়, ‘চুক্তিটা হলো বাফুফে ভবনে মেয়েদের থাকা-খাওয়ার খরচে তারা কিছু অবদান রাখবে। আর মেয়েদের লীগটা স্পন্সর করবে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার জন্য তারা টাকা দেবে না।’ এর বাইরেও দীর্ঘদিন মেয়েদের স্পন্সর করে আসছে ঢাকা ব্যাংক। বাফুফে কি চাইলে এসব যায়গা থেকে অর্থের সংস্থান করতে পারতো না? ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে অলিম্পিক বাছাইয়ের ভেন্যু চূড়ান্ত হয় মিয়ানমারে। এর পরেই জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল সৌদি আরবে অনুশীলন করতে যায় ৫ই মার্চ। ১০-১১ দিনের অনুশীলনের জন্য ঢাকা টু মদিনা আসা যাওয়ার টিকিটে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রীতি ম্যাচের জন্য হুট করে এত টাকা ব্যয় করে, বাফুফে এখন নারী টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পিছু হঁটছে। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সীমাবদ্ধতা অনুসরণ করেই আমাদের পরিকল্পনা গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়। আমার মনে হয় এখানে মেয়েদের দিকে নজর দিলে বরং ভালো হতো।’
বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকের মতেও, জামালদের সৌদি আরবে না পাঠিয়ে সাবিনাদের মিয়ানমার পাঠালে ভালো হতো। চলতি অর্থ বছরে ফুটবল উন্নয়নে বাফুফে সরকারের কাছে পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প জমা দিয়েছিল। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাফুফের ৫০০ কোটি টাকার সেই প্রকল্পে অসম্মতি জানিয়েছে। গুঞ্জন আছে মিয়ানমারে সাফল্য পাওয়া নারী ফুটবল দলকে না পাঠিয়ে সেই প্রকল্প আদায়ের চেষ্টা করছে বাফুফে। এই বিষয়ে অবশ্য বাফুফের কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। মিয়ানমার, ইরান ও মালদ্বীপ-এই তিন দেশের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন সাবিনাদের তাকিয়ে থাকতে হবে ফিফা উইন্ডোতে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলার দিকে। যদিও ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের জন্য দল পাওয়া কঠিন বাংলাদেশের জন্য। এ নিয়ে বাফুফে নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘আমরা এখন পরের ফিফা উইন্ডোতে জাতীয় দলকে ম্যাচ খেলার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। ২৯শে আগস্ট থেকে ৬ই সেপ্টেম্বর পরবর্তী ফিফা উইন্ডো। ওই উইন্ডোতে আমরা সিনিয়র দলের জন্য ম্যাচের ব্যবস্থা করবো’। জাতীয় দলের মিয়ানমার সফর বাতিল হলেও তাদের অনুশীলন চলছে। মেয়েদের অনুশীলন নিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘আমাদের ফুটবলাররা সারা বছর ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করে। সেই ধারাবাহিকতায় তাদের ক্যাম্প চলছে। বাফুফের সে নির্দেশনাই আছে।’ সাবিনাদের মিয়ানমার সফর বাতিল হলেও এপ্রিলেই সিঙ্গাপুর যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবল দল। সেখানে ২৬ থেকে ৩০শে এপ্রিল হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৭ এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব। বাংলাদেশ খেলবে ‘ডি’ গ্রুপে সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে।