ঢাকা, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

কতক্ষণ আপনি না ঘুমিয়ে থাকতে পারেন?

মানবজমিন ডিজিটাল

(৫ মাস আগে) ২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৪:২৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:২২ পূর্বাহ্ন

mzamin

১৯৬৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি হাইস্কুল বিজ্ঞান মেলার প্রজেক্টের জন্য ১১ দিন ২৫মিনিট একটানা জেগে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেন ১৭ বছরের রান্ডি গার্ডনার।  এর আগে ১৯৮৬ সালে রবার্ট ম্যাকডোনাল্ড ১৮ দিন এবং প্রায় ২২ ঘন্টা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন। তবে একজন ডাক্তার দ্বারা গার্ডনারের মতো নিবিড়ভাবে কাউকেই পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস আর এই বিভাগে কোনো পুরস্কার প্রদান করে না।  কারণ ১৯৯৭ সালে  ঘুমের অভাবের কারণে সম্পর্কিত শারীরিক বিপদের  কথা মাথায় রেখে তারা এই বিভাগে  নতুন কোনো রেকর্ড গড়ার আবেদন গ্রহণ করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু এই বিপদ কী? যারা দীর্ঘক্ষণ না ঘুমিয়ে কাটান তাদের কী হয় ?

মানসিক এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ঘুম প্রয়োজনীয়। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের ( Centers of Disease Control and Prevention) মতামত অনুসারে অপর্যাপ্ত ঘুম ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্থূলতা এবং বিষণ্নতা সহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার  ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে মানুষের ২৪ ঘন্টা ব্যবধানে প্রতিদিন  নিয়মিত ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় যে মানুষ, বিশেষ করে ছাত্ররা  কখনো কখনো   টানা ২৪  ঘন্টা জেগে থাকতে পারে । নিউ ইয়র্ক সিটির মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ ওরেন কোহেন বলছেন,   এই পর্যায়ে ঘুম এবং জেগে থাকার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। 

কোহেন বলেন, যখন কেউ ২৪ ঘন্টা ঘুম ছাড়াই কাটাচ্ছেন  তখন তাদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ সংকেত দিতে শুরু করে।

বিজ্ঞাপন
 জেগে থাকলেও মনে হতে পারে  তারা ঘুম-জাগরণের সীমানায় রয়েছেন । একে বলে স্লিপ ইনট্রুশন বা মাইক্রো-স্লিপ। যারা ঘন্টার পর ঘন্টা না ঘুমিয়ে থাকেন  তাদের মস্তিষ্ক অনিচ্ছাকৃতভাবে এক ধরণের অস্বাভাবিক ঘুমের মধ্যে চলে যায়, একে  হ্যালুসিনেশন বলে। সেইসময় শরীর জেগে থাকলেও  মস্তিষ্ক ঘুমিয়ে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টারের পরিচালক ডঃ অ্যালন অ্যাভিডান জানাচ্ছেন, যখন একজন ব্যক্তি আমাকে বলে  আমি কয়েক সপ্তাহ ধরে ঘুমাইনি, সেটা প্রায় অসম্ভব।  আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে কেউ ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় জেগে থাকতে পারে।"

 ঠিক কতক্ষণ মানুষ ঘুম ছাড়া থাকতে পারে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি কি তা চিহ্নিত করা কঠিন। অ্যাভিডন বলছেন, টানা না ঘুমানোর প্রবণতা সত্যিই  ধ্বংসাত্মক। মানুষের ওপর এটি নিয়ে  গবেষণা করাও  অনৈতিক। কারণ এটিকে মানসিক নির্যাতনের একটি দিক হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। যদিও দীর্ঘায়িত অনিদ্রা নিয়ে গবেষণা করা কঠিন, তবে  মারাত্মক পারিবারিক অনিদ্রা (এফএফআই) নামক বিরল উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তথ্য চিকিৎসকদের কাছে  রয়েছে। এই রোগীদের দেহে জেনেটিক মিউটেশন কাজ করে যার ফলে মস্তিষ্কে একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হয় এবং ধীরে ধীরে ঘুম কমতে থাকে । এই রোগীদের শরীর দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে এবং  শেষ পর্যন্ত  মস্তিষ্কে অস্বাভাবিক প্রোটিন জমা হবার জেরে কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়। এই ব্যাধিটির জেরে ১৮ মাসের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হয়। প্রাণীদের মধ্যে, ইঁদুরের উপর ১৯৮৯ সালের একটি সমীক্ষা দেখায় যে প্রাণীরা  ১১ থেকে ৩২ দিন না ঘুমিয়ে থাকলে তাদের  মৃত্যু হয় । Nature and Science of Sleep -এ প্রকাশিত ২০১৯ সালের একটি মানব গবেষণায় দেখা গেছে,  অংশগ্রহণকারীরা ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে ছিলেন। কিন্তু ১৬ ঘন্টা পরে তাদের মনোযোগের ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা সহ অংশগ্রহণকারীদের শরীর আরও খারাপ হতে শুরু করে । ২০০০ সালের একটি সমীক্ষাতে দেখা গেছে যে,  ২৪ ঘন্টা জেগে থাকার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমন্বয়ে ব্যাঘাত ঘটে।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক অনুসারে ২৪ ঘন্টা নির্ঘুম থাকার  প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে  ঝাপসা দৃষ্টি, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস, স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ হ্রাস, বিরক্তি,  দৃষ্টি, শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস । ৩৬ ঘন্টা নিদ্রাহীন ব্যক্তিরা তাদের রক্তে প্রদাহ অনুভব করেন। এমনকি হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং বিপাক প্রক্রিয়া  ধীর হতে থাকে। ৭২ ঘন্টায় কী ঘটে তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা নেই, তবে লোকেরা উদ্বিগ্ন, হতাশাগ্রস্ত, হ্যালুসিনেশন অনুভব করতে  পারেন  এবং  কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন । 

মেডিকেল এডুকেশন জার্নালে প্রকাশিত  ২০২১ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে - ইসরাইলের  বাসিন্দারা তাদের ২৬ ঘন্টা শিফটের জন্য একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন । কোনো জিনিস বুঝতে তাঁদের অসুবিধা হচ্ছে , যার জেরে কাজ করার প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। এ বিষয়ে একটি জিনিস গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন অ্যাভিডন। তিনি বলছেন, সারা সপ্তাহে না ঘুমানোর জেরে  ঘুমের বড় ঘাটতি দেখা দেয়।  আপনি কেবল সপ্তাহান্তে ঘুমের সেই অভাব পূরণ করতে পারবেন না।  তাই দিনে পুরো আট ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। ''

সূত্র : livescience.com

পাঠকের মতামত

এসবই বানানো গল্প বা সুত্র অথবা হাওয়া থেকে পাওয়া।যেখানে বিজ্ঞানের সাথে কোন মিল নেই।

Amirswapan
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৫:৫২ পূর্বাহ্ন

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status