ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

বরকত-রুবেলের আরও ৭ প্রতিষ্ঠানের সন্ধান

আসামি বেড়ে হতে পারে ২৫-৩০

মরিয়ম চম্পা
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার
mzamin

বরকত-রুবেলের বহুল আলোচিত আড়াই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার পুনরায় তদন্ত প্রায় শেষ করে এনেছে সিআইডি। আগে এ মামলায় ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছিল। অধিকতর তদন্তে আসামির সংখ্যা বেড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন  হতে পারে। নতুন করে ৩১০ থেকে ৩১২টির মতো দলিল জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি আলোচিত এই দুই ভাইয়ের আরও ৭ থেকে ৮টির মতো প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। যা আগের চার্জশিটে উল্লেখ ছিল না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই ভাইয়ের অবৈধ সম্পদ এবং অর্থ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে চার্জশিটভুক্ত করা হবে। যেটা আগের তদন্ত কর্মকর্তা করেননি। এরমধ্যে রয়েছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, পরিবহন প্রতিষ্ঠান, ডেইরি ফার্ম। সিআইডি সূত্র বলছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত চলছে।

বিজ্ঞাপন
পুনঃতদন্তের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দিষ্ট করে দেয়ার ক্ষেত্রের ব্যতিক্রমের সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই জন আসামির জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের আসামি তালিকা থেকে বাদ দেয়ার সুযোগ নেই।
সূত্র বলছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমত, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে যারা মানি লন্ডারিংয়ের দায় স্বীকার করেছেন তাদের চার্জশিট থেকে বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।  দ্বিতীয়ত, জবানবন্দিতে যে সকল আসামির বিরুদ্ধে দু’জন বলেছেন তাদের সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত তারাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। তৃতীয়ত, জব্দ না করা দলিল জব্দ করা হবে। প্রায় ৩শ’র বেশি জব্দ না হওয়া দলিল নতুন করে জব্দ করেছে তদন্ত সংস্থা। পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে এক দলিল সম্পর্কে একাধিকবার উল্লেখ করেছেন। এভাবে দলিলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে। সর্বশেষ বলা হয়েছে, যদি অন্য কোনো আসামি এই মামলায় জড়িত থাকেন তাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেখানে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় আগে আইনজীবী ছিলেন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মাহাবুব আলম। তিনি বলেন, বরকত-রুবেলের মামলাটি বর্তমানে আমার অধীনে নেই। এ মামলার তদন্ত পূর্ণাঙ্গ ছিল না। একই দলিল চার-পাঁচবার করে দেখানো হয়। সুনির্দিষ্টভাবে কতো টাকা মানি লন্ডারিং হয়েছে তা পরিষ্কার ছিল না। ১৬৪ ধারায় যারা জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের নাম দেয়ার কথা থাকলেও বাদ দেয়া হয়। তাদের নাম কীভাবে বাদ পড়েছে সেটাই প্রশ্ন। তদন্ত কর্মকর্তা এভাবে তো বাদ দিতে পারেন না। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে ডাকলে তিনি জানান সময়ের অভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারিনি। তখন আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে সিআইডি’র ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই তা সম্পন্ন করা হবে।
আগের চার্জশিটে আসামি ছিলেন যারা:  এর আগে ঢাকার কাফরুল থানায় করা মামলায় ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। বরকত-রুবেল সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরও এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের এপিএস এএইচএম ফুয়াদ, খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী, আশিকুর রহমান ফারহান, ফাহাদ বিন ওয়াজেদ ওরফে ফাহিম, কামরুল হাসান ডেভিড, মোহাম্মদ আলী দিদার ও মো. তারিকুল ইসলাম নাসিম। তাদের সহযোগী ৪২ জনকে নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে বলে সেসময় তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে পরে অবশ্য কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

তাদের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে বলা হয়, ফরিদপুরের এলজিইডি, বিআরটিএ, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কাজের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন বরকত ও রুবেল। এছাড়া, মাদক ব্যবসা ও ভূমি দখল করে অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। ২৩টি বাস, ট্রাকসহ বিলাসবহুল গাড়িরও মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন।

২০২০ সালের ১৬ই মে রাতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ী সড়কে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে দুই দফা হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ওই বছরের ১৮ই মে সুবল সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন। পরে ৭ই জুন রাতে পুলিশের বিশেষ অভিযানে ওই মামলার আসামি হিসেবে শহরের বদরপুরস্থ আফসানা মঞ্জিলসহ শহরের বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে বরকত ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status