প্রথম পাতা
বৃটেনে ইমিগ্রেশন আইনে বড় রকমের পরিবর্তন
আরিফ মাহফুজ, লন্ডন থেকে
১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
অভিবাসন নীতিতে কঠোর থেকে কঠোর হচ্ছে বৃটেনের সরকার। দেশটির ইমিগ্রেশন আইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ইমিগ্রেশন নীতির কারণে বৃটেনে প্রবেশ ও স্থায়ী হওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। নতুন আইনে বৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশের পথ অনেকটাই কঠোর করা হয়েছে। সোমবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে কঠোর ইমিগ্রেশন নীতির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী স?্যার কিয়ের স্টারমার। ইমিগ্রেশন নিয়ে এই সিদ্ধান্তকে সামপ্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এদিন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তার সরকার। যেখানে বৈধভাবে বৃটেনে প্রবেশের পথ অনেকটাই কঠোর করা হয়েছে।
নতুন পরিবর্তনে ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হচ্ছে- এখন থেকে কেয়ার ভিসা সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কেয়ার এজেন্সি আর বৃটেনের বাইরে থেকে কোনো কেয়ার ওয়ার্কার রিক্রুট করতে পারবে না। শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, এখন থেকে ওয়ার্ক পারমিটে বৃটেনে প্রবেশের ক্ষেত্রে নিজ দেশে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করতে হবে। এ ছাড়া ইংরেজি ভাষা দক্ষতায় এ লেভেল স্ট?্যান্ডার্ডের ইংরেজি জানা থাকতে হবে। অর্থাৎ অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে। বিদেশি কর্মীরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাঁচ বছর পর বৃটেনে স্থায়ী হতে আবেদন করতে পারবে না, বরং তাদেরকে ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। যেখানে দেশটিতে স্থায়ী হতে আগে ৫ বছর ওয়ার্ক পারমিটে থাকলে হতো, এখন সেটা ১০ বছর মেয়াদি করা হবে। অর্থাৎ ১০ বছর ওয়ার্ক পারমিটে থাকলেই কেবল বৃটেনে স্থায়ী হওয়ার আবেদন করা যাবে।
বিদেশি অপরাধীদের বেশি সংখ্যায় বহিষ্কারের পরিকল্পনা, নিয়োগদাতাদের নিজস্ব কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে বাধ্য করা এবং বৃটেন প্রবেশ করা দক্ষ কর্মীদের জন্য ডিগ্রিধারী হওয়া বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিদেশি কর্মীদের সঙ্গে আসা প্রাপ্তবয়স্কদের ইংরেজি এ-১ স্তরের একটি অনলাইন পরীক্ষায় পাস করতে হবে, যেখানে দৈনন্দিন কথাবার্তা ও ব্যক্তিগত বিষয়ে সহজ প্রশ্নোত্তরের সক্ষমতা যাচাই করা হবে। যদি কর্মীরা ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চায়, তাহলে তাদের পরিবারের সদস্যদের আরও উন্নত এ-২ স্তরের পরীক্ষায় পাস করতে হবে। আর স্থায়ী বাসস্থানের আবেদন করতে চাইলে তাদের বি-২ স্তরের পরীক্ষা দিতে হবে, যেখানে জটিল বিষয়েও স্বচ্ছভাবে মত প্রকাশ করার দক্ষতা প্রয়োজন।
এছাড়া স্টুডেন্ট ভিসায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেছেন, আমরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান স্পন্সর করি, তাদের জন্য নির্ধারিত শর্ত আরও কঠোর করবো। যেসব ইউনিভার্সিটি তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ার কাছাকাছি রয়েছে, তাদের জন্য নতুন পদক্ষেপ নেয়া হবে। একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এ রাখা হবে, যাতে তারা নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য হয়। সেই সময়ে তারা কতোজন নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী নিতে পারবে, তাতেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে। তিনি বলেন, পড়াশোনা শেষে গ্র্যাজুয়েটদের বৃটেনে থাকার মেয়াদ কমিয়ে ১৮ মাস করা হবে। বর্তমানে বৃটেনে একজন স্টুডেন্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে ২৪ মাসের ফুলটাইম কাজের অনুমতি পান।
স্যার কিয়ের স্টারমার জাতির উদ্দেশ্যে রাখা ভাষণে বলেন, এই নীতিগুলো সরকারের পরিবর্তনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমান সংসদীয় মেয়াদেই বাস্তবায়ন করা হবে, যার প্রথম ধাপ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চালু হবে। সরকার আগামী গ্রীষ্মে আশ্রয় ও সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে আরও সংস্কার ঘোষণা করবে, যা বর্তমানে সংসদে আলোচনাধীন বর্ডার সিকিউরিটি আইনের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হবে।