ঢাকা, ২৮ মে ২০২৩, রবিবার, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৭ জিলক্বদ ১৪৪৪ হিঃ

প্রথম পাতা

কেন খেজুরের বাজারে ক্রেতা কম?

মো. আল আমিন
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবারmzamin

রমজানের আগে খেজুরের বাজারে ভিড় থাকে প্রতিবছর। পাইকারি আড়তে ব্যবসায়ীরা ভিড় করেন খেজুর কিনতে। কিন্তু এবারের চিত্র একটু ভিন্ন। ভিড়   কম। বেচাকেনাও আগের বছরের তুলনায় কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন বেশ কিছু কারণে এবার   বেচাকেনা কম। এর অন্যতম কারণ দাম বৃদ্ধি। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবার আমদানি করা খেজুরের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া অন্যসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় খেজুরের ক্রেতা কমে গেছে। কারণ মানুষ আগে জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনছে।

বিজ্ঞাপন
খুচরা বাজারে অতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণেও বিক্রি কম হচ্ছে। 

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাইকারিতে ১০ কেজির কার্টন প্রতি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। বাদামতলী বাজারের আল আনসর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বিল্লাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, গত বছরের তুলনায় খেজুরের দাম অনেক বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে বিক্রির পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে। আগে যারা ১০ কার্টন খেজুর কিনতেন, তারা এখন ৫ কার্টন কিনছেন। কারণ হিসেবে তিনি খেজুরের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কথা জানান। বলেন, গত বছর দশ হাজার টাকা দিয়ে ১০ কার্টন খেজুর কেনা গেলেও সেই টাকা দিয়ে এবার ৬ কার্টনের বেশি কেনা সম্ভব না। এই বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও অনেক কমেছে বলে জানান পাইকারি এই বিক্রেতা। তিনি বলেন, সাধারণত রোজার কয়েকদিন আগে বাদামতলী বাজারে ক্রেতাদের জায়গা দেয়া যায় না। কম দামে খেজুর কিনতে এখানে অনেক ক্রেতা আসে। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। সারা দিনে মাত্র কয়েকজন ক্রেতা আসে। তিনি বলেন, এটা মূলত সব জিনিসের দাম বাড়ার প্রভাবে হচ্ছে। কারণ, মানুষকে আগে ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে হবে, শখ করে কিছু খাওয়া তো পরের বিষয়। 

একই কথা জানিয়ে এই বাজারের মেসার্স আর জেড এন্টারপ্রাইজের শামিম হোসেন বলেন, সব ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে। কার্টনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। গত বছরের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এতে বিক্রির পরিমাণও অনেক কমেছে। আগে যারা ৫ কার্টন খেজুর নিতেন, তারা এখন ২ কার্টনের বেশি খেজুর নিচ্ছেন না। অর্ধেক বিক্রি কমে গেছে। রমজানের সময়ই মূলত খেজুরের ব্যবসা ভালো হয়। অন্যান্য সময় তেমন বিক্রি হয় না। বিক্রি কমলে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই। 

সোনার বাংলা এন্টারপ্রাইজের আবিদ লিও বলেন, খেজুরের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। কম দামের জিহাদী খেজুর গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকায়, এই খেজুরের দাম বেড়ে এবার ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কার্টন। দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া বড়ই খেজুরের দাম গত বছর ছিল ১৮০০ টাকা, কিছুদিন আগে ছিল ২৩০০ টাকা আর এখন ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে এতো দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আমদানিকারকদের কাছে খেজুর চাইলে পর্যাপ্ত পরিমাণে দিচ্ছে। খেজুরের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু দাম নিচ্ছে বেশি। নগদ টাকা ছাড়া তাদের থেকে কোনো খেজুর পাওয়া যাচ্ছে না। 
বাদামতলী বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ৫ কেজির এক কার্টন মাবরুম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। গত বছর এই খেজুরের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩০০ টাকা। এক কার্টন নাগাল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়। গত বছর যা ছিল ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আবার ১০ কেজির দাবাস কার্টন বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়।  গত বছর দাবাস খেজুরের দাম ছিল ২৪০০ টাকা। দশ কেজির এক কার্টন লুলু খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকায়, আগের বছর এই খেজুরের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৭০০ টাকা। এ ছাড়া ৫ কেজির মরিয়ম বিক্রি হচ্ছে ৪০০০ টাকা, কালনী ২৯০০ থেকে ৩০০০ টাকা, আজুয়া ৩৫০০ টাকা, রাবেয়া ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা, ৫ কেজির মাসরুর ২২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব খেজুরের দাম কার্টনপ্রতি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

কম দামে খেজুর কিনতে বাদামতলী বাজারে আসা ফরিদ আহমেদ বলেন, ২ দিন পর রোজা শুরু হচ্ছে। রোজার মাসে খেজুর ছাড়া আসলে হয় না। এজন্য এখানে খেজুর কিনতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখলাম গত বছরের চেয়ে এবার খেজুরের দাম অনেক বেশি। যে পরিমাণ খেজুর কিনবো ভাবছিলাম সেটি আর কেনা হলো না। আরেক ক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, খেজুর ছাড়া ইফতারি জমে না। প্রতি বছরই এখান থেকে কিছুটা কম দামে খেজুর কিনতে আসি। অন্য বাজারের চেয়ে এখানে কিছুটা হলেও কম পাওয়া যায়। কিন্তু এবার এখানেও খেজুরের দাম অনেক বেশি। এক কার্টন খেজুর কিনতে ৩ হাজার টাকা লাগছে। এই খেজুরই গত বছর ২ হাজার টাকায় কিনেছিলাম।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, অতি মুনাফালাভের মানসিকতা থেকে ব্যবসায়ীরা খেজুরের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়া খেজুরের দাম এতটা বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত খেজুরের মজুত রয়েছে। তিনি বলেন, অন্যান্য পণ্য বিশেষ করে চাল, ডাল ও তেলের বাজার যেভাবে মনিটরিং করার উদ্যোগ নেয়া হয়, খেজুরের ক্ষেত্রে সেটি দেখা যায় না। এটা ট্যারিফ কমিশনের আওতায় বিশ্লেষণ করা হচ্ছে না, সেই সুযোগটা নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী ভারতে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ সেই পণ্য কেনা কমিয়ে দেয়। ফলে তার দাম কমে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে মানুষ সেই জিনিস আরও বেশি করে কেনে। এতে জিনিসের দাম আরও বাড়তে থাকে। এই অভ্যাসটা পরিবর্তন করা দরকার। এটা করা গেলে মুনাফালোভীরা সুবিধা করতে পারবে না।

পাঠকের মতামত

খেজুর কোন অত্যাবশকীয় ফল নয় আর এটা আমাদের দেশেও হয়না এটা না খেলে সমস্যা কি?

মিলন আজাদ
২৭ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১২:০০ অপরাহ্ন

এরা ব্যবসায়ী নামের ডাকাত। এদের পেশা ডাকাতি।

Salim Sinha
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

গত কয়েক বছর খেজুরের আমদানীকারকরা রাতিরাতি কোটিপতি বনে গেছেন। খেজুরের সাথে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত থাকার কারণে খেজুরে আমদানী কর নাই বললেই চলে, পাশাপাশি রমজানে মানুষের মনোভাব একটু খরচ করার মানসিকতায় থাকে, ইফতারীতে একটু খেজুর একটি অত্যাবশ্যকীয় আইটেম। এই সুযোগে আমদানীকারকরা গত কয়েক বছর ৫/৬গুণ পর্যন্ত লাভ করেছেন। আর চলতি বছরে মন্দার কারণে আমদানী খরচ যেভাবে বেড়েছে তার চেয়ে ৬/৭ গুণ খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। যে খেজুর ৩৫০/৪০০ টাকায় পাওয়া যেত, এই বছর একলাফে তা ১০০০ টাকা, অথচ হাজার হাজার টন খেজুর আমদানী করা হয়েছে যা মওজুদ আছে। অন্যান্য মুসলিম দেশে রমজানে ব্যবসায়ীদের সেবার মানসিকতা থাকলেও আমাদের দেশে তা নাই, বরং কিভাবে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা যায় ব্যবসায়ীরা সেই ধান্ধায় থাকেন। আর থেকে দাম কমানোর দাবীতে উচ্চ পর্যায় থেকে যখন বলা হয় দাম কমানো যাবেনা তাতে উদ্ধোক্তাদের লোকসান হবে তাহলে তো কথাই নাই। আমাদের একই বিল্ডিংয়ে থাকেন এক সৌদি প্রবাসী তিনি একজন বড় রপ্তানীকারক, তিনি সৌদি থেকে বাংলাদেশে খেজুর রপ্তানী করেন। তার মুখে রপ্তানী মূল্য আর বাংলাদেশে খেজুরের দাম শুনে বেহুশ হবার দশা।

জামশেদ পাটোয়ারী
২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ১:১২ পূর্বাহ্ন

Lenah Medjool মেডজুল Jumbo গত বছর ছিল ৫৫০০/- ৫ kg এবার ৭৫০০/-

Monir
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:৩৯ অপরাহ্ন

আমাদের ছোট বেলায় পাকিস্তান আমলে জেলা শহরে অল্প খেজুর বিক্রি হত । উপজেলায় পৌছত না । বাংলাদেশের অবস্থার পরিবর্তন এর সঙ্গে এবং যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধা থাকায় এখন গ্রামের হাটে ও খেজুর সহ সব দেশি বিদেশী ফল পাওয়া যায় । তখন আমরা কখনোই ইফতার করার জন্য খেজুরের কথা ভাবতেই পারতাম না । এখন মানুষের সঙ্গতি ভাল আলহামদুলিল্লাহ এখনকার প্রজন্ম খেতে পাচ্ছে । আমি ও বিদেশে খেতে পাচ্ছি । এবছর সব দেশেই ভিন্ন অবস্থা । কিন্ত এ অবস্থা দূর হবে । আগামী বছর আশাকরি সব স্বাভাবিক হবে ইনশাআল্লাহ। তাই আক্ষেপ করার কিছুই নাই। সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় মোমিনদের জন্য ঈমানের পরীক্ষা ।

Kazi
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ৯:২৪ অপরাহ্ন

যারা আমাদের রক্ত চুষে খায়,তাদের কাছে দাম কোনো ব্যপারই না।

Mahiuddin molla
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার, ৬:১১ অপরাহ্ন

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2023
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status