প্রথম পাতা
এক্সপ্রেসওয়ে ট্র্যাজেডি
শফিকের মৃত্যুর খবর জানেন না ঝুমা
স্টাফ রিপোর্টার
২১ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার
ঝুমা আক্তার। গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার একটি পরিবহনে ওঠেন দেবর শফিককে নিয়ে। পরিবার নিয়ে রমজানে ওমরাহ্ হজ করতে যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকা থেকে বিমান টিকিট সংগ্রহ করতে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু তাদের আর পৌঁছানো হয়নি গন্তব্যে। মাঝপথে শিকার হন সড়ক দুর্ঘটনার। চালকের পিছনের দুই সিটে তারা বসেছিলেন। ঘটনাস্থলেই মারা যান তার দেবর। গুরুতর আহত হয়ে ঝুমা ভর্তি আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। তার অবস্থা গুরুতর।
গতকাল ঢামেকের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডের ৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি। মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেয়া। সেই সঙ্গে তাকে দেওয়া হচ্ছে রক্ত। স্বজনেরা তার চারপাশ ঘিরে বসে আছেন। ঝুমার ভাই মো. তুহিন মিয়া বলেন, আমার বোনের পরিবার নিয়ে সৌদিতে ওমরাহ্ হজ করতে যাওয়ার কথা ছিল। তার স্বামী সৌদিতে থাকেন। এই দুর্ঘটনার খবর শুনে গতকাল সকালে বাংলাদেশে আসেন। হাসপাতালে এসে আমার বোনকে একনজর দেখে আবার গোপালগঞ্জে তার ভাইয়ের জানাজায় শরিক হন। বোনের ঘরে তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ওমরাহ্ করতে যাওয়ার জন্য সবকিছু ঠিক হয়েছিল শুধু টিকেট নেয়ার জন্য বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে তার দেবর শফিক শেখকে নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। বোনের দেবর সবেমাত্র উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে গোপালগঞ্জের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।
তিনি বলেন, রোববার সকাল আটটার দিকে গোপালগঞ্জ থেকে বাসে ওঠেন। সাড়ে ন’টার মধ্যে শিবচরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রথম আমরা ওইভাবে খবর পাইনি। আমার বোনের মোবাইল স্থানীয়রা পেয়ে এক এক করে সব নম্বরে কল দিতে থাকে এরপর আমরা তাদের মাধ্যমে খবর পাই। বোনের দেবর ওই দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে মারা যায়। বোনের বুকে বেশি আঘাত লেগেছে। সেখানের হাড় ভেঙে ফুসফুসেও আঘাত লেগে অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। দুই পায়ে চার জায়গা ভেঙে গেছে। একটা অপারেশন হয়েছে। আরেকটি অপারেশন লাগবে। দুর্ঘটনার স্থান থেকে স্থানীয় লোকজন প্রথমে তাকে শিবচরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর আমরা শিবচর হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেলে রেফার করে।
তিনি আরও বলেন, ওই পরিবহনের চালকের ঠিক পিছনের দুই সিটে তারা দুইজন ছিলেন।
তিনি বলেন, ঝুমা কিছুক্ষণ পরপর শুধু শফিকের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতে চাচ্ছে, দেখতে চাচ্ছে তাকে। গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি আছে জানিয়ে আমরা তাকে থামিয়ে রাখছি। আমার বোনের যে অবস্থা তাতে সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। রোববার যখন ঢাকায় রওনা দেয় তার আগে মা’কে খবর দিয়ে নিয়ে যায় তাদের বাড়িতে। বাড়ি থেকে বের হয়ে আসার সময় মা’কে অনেক বার বলতে থাকে মা দোয়া করো, আমার ছেলেমেয়েদের দেখো। আমি ঢাকা থেকে টিকেট নিয়ে দ্রুত চলে আসবো। ঝুমার সামনে পিছনে, ডানে-বামে যারা ছিল সবাই স্পট ডেড হয়েছে। একেবারে পিছনে যারা ছিল তারা কিছুটা রক্ষা পেয়েছে। ওর অনেক আশা ছিল পরিবারের সবাইকে নিয়ে রোজার মধ্যে ওমরাহ্ হজ করবে কিন্তু সেটি আর হলো না।