অনলাইন
প্রবল আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বৃটিশ মুসলিম সম্প্রদায়
মানবজমিন ডিজিটাল
(২ বছর আগে) ২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:১৬ অপরাহ্ন

আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত বৃটিশ মুসলমানরা সাহায্যের জন্য কাতর আবেদন করছেন। ন্যাশনাল জাকাত ফাউন্ডেশন (এনজেডএফ) বলছে, অনুদান চেয়ে তাদের থেকে একাধিক অনুরোধ আসছে। এনজেডএফ-এর প্রধান নির্বাহী ডাঃ সোহেল হানিফ বলেছেন, ‘’এটা সত্যিই বিশ্বাস করা কঠিন যে তারা যুক্তরাজ্যে থেকে এরকম সমস্যায় পড়েছেন।" দাতব্য সংস্থাটি জানাচ্ছে যে সাহায্যের জন্য প্রতি মাসে ২,০০০টি অ্যাপ্লিকেশন আসছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। বর্তমানে একটি আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তাদের চার মাস পর্যন্ত সময় লাগছে - আগে যেখানে লাগতো দুই সপ্তাহ। সফল আবেদনকারী একজন একক ব্যক্তি হলে তিনি প্রায় ৬০০ পাউন্ড নগদ অনুদান পেতে পারেন এবং দুটি সন্তান সহ একটি পরিবারের জন্য প্রায় ১০০০ পাউন্ড নগদ অনুদান পেতে পারেন। ডাঃ হানিফ জানাচ্ছেন, ''মানুষের ধার নেওয়ার রাস্তা এখন প্রায় বন্ধ। তারা আর পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে ধার চাইতে যেতে পারছে না। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দৈনিক বিল পরিশোধ করতে গিয়ে অনেকেই দারিদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছেন।'' শিশু, আশ্রয়প্রার্থী, পাচারের শিকার অনেক নারীর দিকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ডাঃ হানিফের সংগঠন ন্যাশনাল জাকাত ফাউন্ডেশন। 'Give a Gift charity' নামে একটি দাতব্য সংস্থার অফিসে বিবিসির একটি মিটিং চলাকালীন নয় জন মা, যাঁদের প্রত্যেকেই মুসলিম, কীভাবে ক্রমবর্ধমান দাম মোকাবেলা করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ এবং সমর্থন পেতে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে বছর সাতেকের এক সন্তানের মা বলছেন তার পরিবারের সবাইকে দুটি বেডরুমে ঠাসাঠাসি করে শুতে হচ্ছে। কারণ তার বাড়ির অন্য দুটি ঘর খুব ঠান্ডা। ঘরগুলিকে গরম করতে যে ইলেকট্রিক বিল খরচ হবে তা দেবার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। অন্য এক মা বলছিলেন তার বাচ্চারা ঠান্ডায় স্কুলে থাকা পছন্দ করে কারণ ঘরের থেকে স্কুল অনেক গরম।
'জীবন সহজ নয়'
পাঁচ সন্তানের মা বার্লিন মিরে বলেছিলেন তিনি এতো ধার করে ফেলেছিলেন যা মেটানো তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না। পরিবারটির সপ্তাহে খরচ ২৩৬ পাউন্ড। তিনি তার ভাড়ার জন্য সপ্তাহে ৬৬ পাউন্ড এবং গ্যাস ও বৈদ্যুতিক বিলের জন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৫০ পাউন্ড প্রদান করেন। সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই তার টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাঁর কাছে জীবন যে কত কঠিন সে কথা উল্লেখ করে বার্লিন বলেন -''আমার সবচেয়ে ছোট সন্তান আলীর বয়স দুই বছর। আমার বাকি সন্তানেরাও এতটাই ছোট তারা ঠান্ডা লাগলেই ঘরে হিটার কেনার কথা বলে। আমি প্রায়শই তাদের মিথ্যে বলে সান্ত্বনা দিই যে আমি এটি আগামীকাল কিনব। মনে মনে ভাবি আগামীকাল তারা হয়তো হিটারের কথা ভুলে যাবে।" বার্লিনের পরিবার 'গিভ এ গিফট' থেকে সাপ্তাহিক খাবারের পার্সেল পায়, কিন্তু তার ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন এই ৫ সন্তানের জননী। এমনকি ঋণের বোঝার চোটে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না বার্লিন। তাঁর মতে 'মৃত্যুর আগে আমার ধারের টাকা আমাকেই শোধ করে যেতে হবে নয়তো ঈশ্বরের কাছে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। ''অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস দ্বারা জানুয়ারিতে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে যে ২৬% এশিয়ান পরিবার এবং ৪৬% অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ বলেছেন যে তারা খাবারের অভাব নিয়ে বেশ চিন্তিত। এঁদের মধ্যে বাংলাদেশি, পাকিস্তানি এবং কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরা সবচেয়ে বেশি লড়াই করছে।
সামনে বড় সংকট
ইস্ট লন্ডন মসজিদের কাছে মরিয়ম সেন্টারে একটি ফুড ব্যাংক চালান সুফিয়া আলম। তাঁর মতে চাহিদার মাত্রা এখন মহামারীর সময়কেও ছাপিয়ে গেছে। মসজিদটি কোভিড ১৯-এর সময়ে খাবার বিতরণ করা শুরু করে এবং গত বছর পরিষেবাটি বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্যে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে তারা সেই পরিকল্পনা ত্যাগ করে, কারণ এখন চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি। সুফিয়া আলম বলছেন -"জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এই সম্প্রদায়ের কাছে একটি বড় সংকট। এরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা সর্বদা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করছে, জনাকীর্ণ আবাসনে বসবাস করছে, কর্মসংস্থানের জন্য সংগ্রাম করছে। এই সংগ্রাম চলবে কারণ সবকিছু এখন আরো ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।'' দাতব্য সংস্থাগুলি বলছে যে মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ লজ্জায় সাহায্য চাইতে দ্বিধাবোধ করছেন। হিসেবে করলে দেখা যাবে তাদের প্রকৃত প্রয়োজনটি আরও বেশি। ন্যাশনাল জাকাত ফাউন্ডেশন রমজানের সময় তার বেশিরভাগ অর্থ সংগ্রহ করে, যা ২২ মার্চ থেকে শুরু হবে। সংস্থাটি বলছে বৃটিশ মুসলমানরা সমবসময় দুর্দশাগ্রস্ত বিদেশী লোকদের সাহায্য করার জন্য অর্থ দান করে থাকে। ডঃ হানিফের মতে, যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ মুসলিম বুঝতে শুরু করেছেন যে বাসায় বা তাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রয়োজনীয়তা ক্রমেই বাড়ছে, তাই গত বছর রমজানের সময় অনুদান বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এখনও অনেকে সাহায্য চাইতে লজ্জা পাচ্ছেন। তাঁদের উদ্দেশে হানিফের বার্তা - "সাহায্য চাওয়ার মধ্যে কোন লজ্জা নেই।''
সূত্র : বিবিসি