ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

সরকার প্রশ্নে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ

কাজী সোহাগ
২০ মার্চ ২০২৩, সোমবার
mzamin

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অনড় অবস্থানে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলছেন, সংবিধানে বিদ্যমান ব্যবস্থায়ই নির্বাচন হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিদ্যমান ব্যবস্থায়ই নির্বাচন হবে- এমনটা ধরে নিয়েই নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন নেতারা। শুরু হয়েছে দলীয় প্রধানের নির্বাচনী সফর। দলীয় ফোরামের বিভিন্ন বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থীদের বিষয়ে একাধিক জরিপ করা হয়েছে। এসব জরিপের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হবে। গত ৭ই মার্চ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্যে বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আওয়ামী লীগের সামনে দুই থেকে আড়াই মাস সময় আছে। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান স্থির অবস্থান কোনো কারণে পাল্টে গেলে, বাংলাদেশ আবারো উল্টো পথে যাত্রা করবে। আমাদের উপ-কমিটি করার জন্য, আমাদের নগর কমিটি, বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি করার জন্য, আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযানের জন্য, আমাদের গণসংযোগ করার জন্য হাতে দুই থেকে আড়াই মাসের বেশি সময় আছে বলে আমার মনে হয় না। 

দলের অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, দলের শীর্ষ নেতাদের এমন বক্তব্য বার্তাবহ। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলীয় তৎপরতার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত রেখেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, আমরা তো আরও আগে থেকেই নির্বাচনের কাজ শুরু করেছি। সাংগঠনিকভাবে এরইমধ্যে অনেক এগিয়ে নেয়া হয়েছে। দলের সভাপতি বেশ কয়েক মাস আগেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছি। এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে কাজ করতে হচ্ছে বলে জানান দলটির  কেন্দ্রীয় নেতারা। 

মানবজমিনকে তারা বলেন, আমরা নির্বাচন ঘিরে সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকটি ইস্যু চিহ্নিত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলা করা, কূটনৈতিক চাপ সামাল দেয়া, দলীয় কোন্দল নিরসন, জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জনমত গঠন, সংসদ নির্বাচনে জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারবিরোধীদের অপপ্রচারের যৌক্তিক জবাব এবং বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব দলকে নির্বাচনমুখী করা। এসব ইস্যুর ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের নির্বাচনী কৌশল সাজাচ্ছি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এসব ইস্যু নিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিকভাবে এরইমধ্যে আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কার কি কাজ তা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কার্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডি কার্যালয়ের পাশে আলাদা একটি ভবনে এ কার্যক্রম চলবে। বৃহৎ পরিসরে এ কার্যালয় থেকে নির্বাচনী সব কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে। এজন্য আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করে দেয়া হবে। এরইমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো- চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার তার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ওই কমিটির সদস্য যুবলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবজমিনকে বলেন, আমরা দিনরাত কাজ করছি। কীভাবে নির্বাচনে কাজ করবো সে কৌশল নির্ধারণ করছি। এজন্য সারা দেশের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে। দলের সভাপতি আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে সবসময় খোঁজখবর রাখছেন। আমরা তাকে মাঠের চিত্র সম্পর্কে নিয়মিত রিপোর্ট করছি। তিনি সে অনুযায়ী আমাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের বিষয়ে আগাম তথ্য সংগ্রহের কাজও চলছে আওয়ামী লীগে। একাধিক মাধ্যমে প্রার্থীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা মানবজমিনকে জানান, প্রার্থী বাছাইয়ে বেশ কয়েকটি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একই আসনে একাধিক প্রার্থী বাছাই করা। বিকল্প হিসেবে সব আসনে একাধিক প্রার্থী বাছাই করে রাখা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে যেন পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা যায় সেজন্য এই কৌশল নেয়া হয়েছে। এদিকে নির্বাচনী মাঠ প্রস্তুত করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাঠে নেমেছেন। এরই মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম, খুলনা, কক্সবাজার, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহে জনসভা করেছেন। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য বিভাগেও জনসভা করবেন। দলীয় সভাগুলোতে বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এবার নির্বাচন সহজ হবে না। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে নানা নারকীয় ঘটনার কথাও বার বার বলছেন। সংসদীয় দলের সভায়ও তিনি নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট কথা বলছেন। এর বাইরে নির্বাচনকে ঘিরে তিনি দলীয় নেতাকর্মী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতির ব্যাপারে কাজ করার নির্দেশনা দিচ্ছেন। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখা, সর্বোপরি ভিশন-’৪১ বাস্তবায়ন ও স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।  এ প্রসঙ্গে  আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বেশি দিন বাকি নেই। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নেতার সঙ্গে কর্মীর এবং কর্মীর সঙ্গে জনগণের সেতু নির্মাণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয়ী হতে হবে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status