ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

নয়া পল্টনের সমাবেশে বিএনপি নেতারা

সরকারকে জনগণের শক্তিতেই হটাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার
mzamin

‘আওয়ামী লীগ সরকারের মূলনীতি টাকা পাচার আর দুর্নীতি’- উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান অবৈধ সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। ক্ষমতায় বসে দুর্নীতি, চুরি আর টাকা পাচার করছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি এতই বেড়েছে যে, ফিরিস্তি দিতে গেলে একদিনে হবে না, এক মাস লাগবে। এমন কোনো সেক্টর নাই যেখানে তারা দুর্নীতি করেনি। গতকাল বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি ও আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদে এ সমাবেশ করে বিএনপি। ঢাকায় কর্মসূচির আয়োজন  করে মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।  যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল দেশের ১২টি সাংগঠনিক মহানগরে একযোগে প্রতিবাদ সমাবেশ করে দলটির নেতারা। ঢাকার বাহিরের প্রতিবাদ-সমাবেশে অংশ নিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।  একইদিনে পৃথক ভাবে বিএনপি’র সঙ্গে একই দাবিতে পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম, পিপল্স পার্টি, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট এবং পূর্ব পান্থপথে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৪/১৫ বছরে ক্ষমতাসীন সরকার এই রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

বিজ্ঞাপন
এই রাষ্ট্রকে এখন সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন এই দেশকে স্বাধীন করা হয়েছে। দেশকে নতুনভাবে পরিচালনার জন্য আবার সংস্কার প্রয়োজন। আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে। এরপর ১০ দফার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুনভাবে সাজাতে হবে। সরকারের পতন ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রধান কথা দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে এই সরকারকে সরাতে হবে। এই সরকার, যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তাদের জনগণের শক্তি দিয়ে সরে যেতে বাধ্য করতে হবে।

তিনি বলেন, টিআইবি রিপোর্টে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়নের চাকরির জন্যও ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সিআইডি বলেছে দেশ থেকে প্রতি বছর হুণ্ডির মাধ্যমে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। একটা বালিশ কিনেছে ৫ হাজার ৭০০ টাকায়। ১০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু ৩০ হাজার কোটি টাকায় বানিয়েছে। আবার নতুন শুরু করেছে পাতাল রেল। উদ্দেশ্য একটাই লুট করা। সরকার ২১ কিলোমিটার পাতাল রেলে খরচ করবে ৫২ হাজার কোটি টাকা। 
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সব খেয়ে ফেলেছে। দুর্নীতি করে দেশকে ওই অবস্থায় নিয়ে গেছে যে, তারা বাংলাদেশের মানচিত্রও খেয়ে ফেলতে বসেছে। সরকার বিদ্যুৎ খাতকে দুর্নীতির প্রধান খাত হিসেবে বেছে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে নিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে একেবারে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরো করে দিয়েছে। টাকা পাচার করে অর্থনীতিকে একেবারে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকিং খাত থেকে ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। ডলার সংকটে নিত্যপ্রয়োনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। এই রাষ্ট্রকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। দু’দিন আগে সুপ্রিম কোর্টে পুলিশ ঢুকে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের পিটিয়ে আহত করেছে। 

 

 

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তার মাধ্যমে সকল দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন করতে হবে। সেই নির্বাচনে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট হবে। জনপ্রতিনিধির সরকার হবে। তারাই দেশ চালাবে। 

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মহাসচিব বলেন, আমরা গত আগস্ট মাস থেকে আন্দোলন শুরু করেছি। ১৭ জন নিরীহ ভাই প্রাণ দিয়েছে, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছেন, অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে গেছেন। এখনো কারাগারে আছেন।  তাদের যে ঋণ, সেই ঋণ শোধ করতে হবে।  জনগণের দাবি আদায় করতে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকতে এই সরকারকে অবশ্যই সরাতে হবে। সেজন্য আমাদের সকলকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

সরকার ঘোষিত হজের প্যাকেজের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, হজের ব্যাপারে দুষ্টামী করা আওয়ামী লীগের পুরনো অভ্যাস। আজকে সাধারণ মানুষ যারা হজে যেতে চান তাদেরকে ৭ লাখ টাকা দিতে হবে। অথচ ভারতে আড়াই লাখ টাকা, আর পাকিস্তানে ৪ লাখ টাকা। তাহলে বাংলাদেশে কেন ৭ লাখ টাকা হবে? বাংলাদেশ বিমান থেকে চুরি করে একেবারে শেষ করে ফেলেছে। সেই চুরিকে লোপাট করার জন্য তাদের এখন বেশি করে টাকা নিতে হবে।

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাসির উদ্দিন অসীম, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, রওনাকুল ইসলাম টিপু, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাঈদ সোহরাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মহিলাদলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবকদলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, মহানগর বিএনপি’র ইশরাক হোসেন, কৃষকদলের হাসান জাফির তুহিন, শফিকুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাসের হেলাল খান, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার, ড্যাব’র অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য রাখেন। এই সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবাদ সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি চুরি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই এ সরকার জনগণের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সরে যেতে বাধ্য হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগের পরিচয় এখন ভোটচোর। আদালতেও তারা এখন ভোটচুরি করে। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আগামীতে আর ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসা যাবে না। সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ফয়সালা করা হবে। বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেন, এই সরকার পরিকল্পনা করেছে, রমজানের পর আমাদের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করবেন। ঈদের পর আমাদের মাঠে নামতে দেবে না। তবে তা হতে দেয়া হবে না। আমরা সরকারের পতন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বো না। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্দেশ দিলেই রাজপথে কঠোর আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বো। 

সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে কঠোর অবস্থানে আছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কার্যালয়ের আশপাশে সাদা পোশাকের পুলিশও দায়িত্ব পালন করছেন। জনসমাগম ঘটিয়ে যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য সার্বিক প্রস্তুতিও নেয়া হয়। দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অস্থায়ী মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে কয়েক দফায় কথাকাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে দলটির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তবে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।  জানা যায়, সমাবেশে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল ও সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের মধ্যে কথাকাটাকাটির ঘটনা ঘটে। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সমাবেশ মঞ্চ থেকে নেমে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status