প্রথম পাতা
১৭ কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর
সিরাজুস সালেকিন
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবারবিস্ফোরক পরিদপ্তর জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সংযুক্ত একটি দপ্তর। সংস্থাটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল বিস্ফোরক, পেট্রোলিয়াম, প্রজ্বলনীয় পদার্থ, উচ্চ-চাপসম্পন্ন গ্যাস পাইপ লাইন, সিলিন্ডার এবং গ্যাসাধার সংক্রান্ত ক্ষতিকর ঘটনা ও প্রভাব প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু এ উদ্দেশ্য শুধু কাগজে-কলমেই লিপিবদ্ধ। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে মাঠ পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। মাত্র ১৭ জন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে দেশের পেট্রোলিয়াম খাতের তদারকি। অথচ সারা দেশে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ১০০ এর অধিক কর্মকর্তা। শুধু জনবল সংকট নয়। বহুমুখী সমস্যায় জর্জরিত এ প্রতিষ্ঠানটি।
সিটিজেন চার্টার অনুসারে ৪৪ ধরনের নাগরিক সেবা দিবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর যার বেশির ভাগই পরিদর্শন সংশ্লিষ্ট। নিজেদের পরিসীমার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স প্রদান করে থাকে এ পরিদপ্তর। নির্দিষ্ট সময় পরপর সেগুলো পরিদর্শন সাপেক্ষে লাইসেন্স নবায়ন করা হয়।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অর্গানোগ্রাম অনুসারে বর্তমানে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের জনবলের সংখ্যা ১০৪। এর মধ্যে ৫১টি পদই ফাঁকা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারেন এমন কর্মকর্তার সংখ্যা ১৭ জন। এ অবস্থায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরকে যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নতুনভাবে অর্গানোগ্রাম প্রস্তুত করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২০২০ সালে ৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে। কমিটি আগের ১০৪ জন জনবলসহ ১১১৫ জনবলের অর্গানোগ্রাম সুপারিশ করে। ২০২২ সালে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়। প্রস্তাবটি এ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে পুনরায় প্রস্তাব প্রেরণের নির্দেশনা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরবর্তীতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে অঞ্চলভিত্তিক অফিসের প্রস্তাবের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ২০২২’র শেষের দিকে প্রতিটি বিভাগে জোনভিত্তিক অফিসের প্রস্তাবসহ ৮৫৯ জনবলবিশিষ্ট একটি সাংগঠনিক কাঠামো জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে প্রেরণ করা হয়। ইতিমধ্যে জ্বালানি বিভাগের সচিব এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক পরিবর্তন হলে পুরো প্রক্রিয়াটি ঝুলে যায়। ফলে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব পাঠানোর কাজ শুরু করেছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর।
এদিকে অনলাইনে বিস্ফোরক লাইসেন্স নবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও তার সুফল পায়নি সেবাপ্রার্থীরা। সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী আবেদন করার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে লাইসেন্স নবায়নের আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার কথা। কিন্তু অনলাইনে আবেদন করার পর আবেদনের কপি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিস্ফোরক অফিসে হাজির হতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। তা না হলে নবায়ন হয় না লাইসেন্স।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যাতায়াতের জন্য নেই কোনো যানবাহন। সারা বাংলাদেশে কর্মকর্তাদের চলাফেরার জন্য রয়েছে মাত্র দু’টি গাড়ি। কোনো এলাকায় অগ্নিকা- বা দুর্ঘটনার খবর পেলে কর্মকর্তারা গাড়ি ভাড়া করে কিংবা গণপরিবহনে করে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে প্রায়শই এমন দুর্ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরক হ্যান্ডলিং, গ্যাস পাইপলাইন, ফিলিং স্টেশনের নকশা বা লে-আউট সংক্রান্ত, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও তদন্ত সংক্রান্ত কোনো ট্রেনিং গত ৪ বছরে হয়নি। এমনকি দপ্তর সামলানোর প্রশিক্ষণও দেয়া হয় না কর্মকর্তাদের।
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের নতুন অর্গানোগ্রাম নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানোর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনলাইন সেবা ও কর্মকর্তাদের কর্মবণ্টন বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন অর্গানোগ্রাম বাস্তবায়ন হলে জোনভিত্তিক সেবা কার্যক্রম চালু হবে। তখন সেবার মান বৃদ্ধিসহ সকল সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।