ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা-মোদি

স্টাফ রিপোর্টার
১৯ মার্চ ২০২৩, রবিবার
mzamin

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে ডিজেল সরবরাহের লক্ষ্যে যৌথভাবে প্রথম আন্তঃসীমান্ত মৈত্রী তেল পাইপলাইন উদ্বোধন করেছেন। শনিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বোতাম টিপে ভারত-বাংলাদেশের এই মৈত্রী পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,  ভারতীয় লাইন অফ ক্রেডিট (এলওসি) থেকে নেয়া প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ভারতীয়  রুপি ব্যয়ে নির্মিত ১৩০ কিলোমিটার ভারত-বাংলাদেশ  মৈত্রী পাইপলাইনের (আইবিএফপিএল) মাধ্যমে বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করবে ভারত। পাইপলাইনটি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ১২৫ কি.মি. এবং ভারতের অভ্যন্তরে ৫ কি.মি. প্রসারিত। পাইপলাইনটির হাই-স্পিড ডিজেল (এইচএসডি)-এর বার্ষিক পরিবহনের ক্ষমতা ১ (এক) মিলিয়ন টন (এমএমটিপিএ)। এটি প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের সাতটি জেলায় হাই স্পিড ডিজেল সরবরাহ করবে। বাংলাদেশ  এতদিন ভারত থেকে রেলপথে ডিজেল আমদানি করতো।  সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মেঘনা পেট্রোলিয়াম ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে বাংলাদেশে ডিজেল আমদানির জন্য ২০১৭ সালে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালু হলে ভারত থেকে বাংলাদেশে এইচএসডি পরিবহনের একটি টেকসই, নির্ভরযোগ্য, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

ভারত থেকে জ্বালানি তেল আনতে ‘ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’ চালুকে দুই দেশের জন্য মাইলফলক অর্জন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মৈত্রী পাইপলাইন আমাদের দুই বন্ধুপ্রতিম দেশের মধ্যে সহযোগিতা উন্নয়নের একটি মাইলফলক অর্জন।

বিজ্ঞাপন
এটি বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এই পাইপলাইনের মতো আগামী দিনে আরও সফলতা বাংলাদেশ-ভারত উদ্যাপন করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একই সঙ্গে কাজ করবো। এই পাইপলাইনের সুফলের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ চালুর ফলে দুই দেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যখন বিশ্বের অনেক দেশ জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি। এই পাইপলাইনটি আমাদের জনগণের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই পাইপলাইনে ভারত থেকে ডিজেল আমদানিতে ব্যয় ও সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ডিজেলের স্থিতিশীল সরবরাহও নিশ্চিত করবে।

 

 

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু, ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবাধ প্রবাহ। ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক সেতুবন্ধন দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর করেছে।
দুই দেশের মধ্যকার সহযোগিতা আরও গভীর হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবে রূপদান করেছি। আমাদের দুই দেশের মধ্যে সমস্যাগুলো একে একে আমরা সমাধান করেছি। যোগাযোগ স্থাপন করেছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার আমরা ঘটিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি এবং ভারতের কাছ থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি। দুই দেশের জনগণের কল্যাণে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক- সেটাই আমরা চাই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে সেটাকে আমরা কার্যকর করতে চাই। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ঠিক রেখে দুই দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়নে আমরা কাজ করে যেতে চাই।  আমরা চাই আমাদের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হোক।’

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমি চাই, ভারতের বিনিয়োগকারীরাও এখানে বিনিয়োগ করুক। আমরা দুই দেশই তাতে লাভবান হবো।
ভারত থেকে বাংলাদেশের ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক পর্যায়সহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার আরও কয়েকটি উদ্যোগ বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন।’

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সরকার এবং জনগণ অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। শুধু তাই না, ১ কোটি বাঙালি শরণার্থীকে স্থান দেয়া, খাবারের ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেয়া এবং অস্ত্র দেয়া এসব সহযোগিতা ভারতের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী বাহিনীর অভিযানে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি।’

ওদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  দেয়া বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বিগত বছরগুলোতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। বাংলাদেশের এই উন্নতিতে পাশে থাকতে পেরে আমরা খুশি। এই পাইপলাইন বাংলাদেশের উন্নতিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

দুই দেশের মধ্যে কানেকটিভিটি যত বাড়বে তত দুই দেশের লোকজনের মধ্যে সম্পর্ক জোরালো হবে বলেও উল্লেখ করেন মোদি। কোভিড মহামারির পরও এই প্রজেক্টের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় আমরা খুশি উল্লেখ করে মোদি বলেন, এই পাইপলাইনের কল্যাণে খরচ কমার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণও কম হবে। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের উপকার হবে। এ সময় নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই পাইপলাইনের নির্মাণকাজের উদ্বোধনের কথা স্মরণ করেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status