ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

হজ কোটার অর্ধেকই রেজিস্ট্রেশন হয়নি, নেপথ্যে দুই কারণ

সিরাজুস সালেকিন ও শুভ্র দেব
৭ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার
mzamin

আকাশসম বিমান ভাড়া ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে হজযাত্রায়।  তিন দফা সময় বাড়িয়েও এবারের হজযাত্রার আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। আজ নিবন্ধনের শেষদিনে কোটার অর্ধেকও রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী- ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৪৬ হাজার ৫৫৭ জন। গতকালই নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। আর সরকারি  মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ৮৭৩ জন। গতকাল নিবন্ধন করেছেন ৫১০ জন। 

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্বপ্রথম শর্তই হলো- আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকতে হবে।

বিজ্ঞাপন
অতঃপর শারীরিক সক্ষমতা লাগবে। আর মানসিক প্রস্তুতিও হজের জন্য আবশ্যক বিষয়। আর্থিক সামর্থ্য বলতে হজ করতে যত টাকা ব্যয় হবে, তা নিজে পরিশোধ করতে হবে। কোনো রকমের ধার বা ঋণ করে হজ করা যাবে না। এককথায় ঋণমুক্ত শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের ওপরেই হজ ফরজ। বাংলাদেশ থেকে হজ পালনকারীদের একটি বড় অংশ বয়োবৃদ্ধ। যারা নিজের উপার্জন থেকে বছরের পর বছর টাকা জমিয়ে হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কিন্তু হঠাৎ করে হজের খরচ দেড় লাখ বেড়ে যাওয়ায় তারা বাড়তি খরচ যোগাড় করতে সক্ষম হচ্ছেন না। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কায় অনেকে হজে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, এ বছর হঠাৎ খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা বড় রকমের ধাক্কা খেয়েছেন। এর আগে হজযাত্রীরা টাকা নিয়ে পেছনে ঘুরেছেন কিন্তু কোটা না থাকায় পাঠাতে পারেননি।

 কিন্তু এবার কোটার অর্ধেক যাত্রীও মিলছে না। প্রাক-নিবন্ধন করতে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয় যা পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য। আর নিবন্ধনের চূড়ান্ত সময় জমা দিতে হয় অবশিষ্ট টাকা। তবে পাহাড়সম এই খরচ না জোগাতে পেরে অনেকেই চূড়ান্ত নিবন্ধন করছেন না। বরং প্রাক-নিবন্ধনের টাকা ফেরত নেয়ার আবেদন করছেন অনেকেই। সিলেটের আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গত বছর কোটা কম ছিল। তবুও আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ জনকে হজে পাঠিয়েছি। এ বছর কোটা বেশি। কিন্তু খরচ বেশি হওয়াতে সাড়া পাচ্ছি না। সময় বাড়ানোর কারণে এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিশ্চিত হয়েছে। যদি সময় আরও বাড়ানো হয় তবে আরও কিছু বাড়তে পারে। ঢাকার আল নূর ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্টের মালিক শরীয়তউল্লাহ শহীদ বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ জন আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হজে যাবেন। 

আশা করছি সময় বাড়ালে হাজীদের সংখ্যাও বাড়বে। তিনি বলেন, খরচটা বেশি। আগে সৌদি আরবে যে সকল খাতে খরচ কম ছিল এখন সেখানে খরচ অনেক বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়াও অনেক বেড়েছে। শুধু চলতি বছরেই যে বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সেখান থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা কমানো সম্ভব। এতে করে হজযাত্রীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি হতো। আল-নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ড. আবদুল্লাহ আল-নাসের বলেন, গত বছর হজের খরচ ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এ বছর  দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ বেড়েছে। হজযাত্রী বা এজেন্সির মালিকরা চিন্তাও করতে পারিনি এত বেশি খরচ বাড়বে। খরচ বাড়ার কারণে হজে যেতে যারা আগ্রহী ছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। কারণ হজযাত্রীদের বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের মানুষ। যারা যান তারা অনেক কষ্ট করে টাকার ব্যবস্থা করেন। অনেকেই মনে করেছিলেন এ বছর খরচ বাড়বে না। তাই আগের বছরের মতো টাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। কিন্তু খরচ বাড়ায় তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ১০৪ জনকে পাঠিয়েছিলাম। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মতো যোগাযোগ করেছেন। 

এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, প্যাকেজ মূল্য বেশি হওয়াতে সাড়া কম মিলছে। খরচ আরও কম হওয়া উচিত ছিল। কারণ এখন যে প্যাকেজ মূল্য ধরা হয়েছে সেটি অনেকের সাধ্যের বাইরে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের লসের বোঝা হজযাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবারই খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করছি এ বিষয়ে সরকার একটি পদক্ষেপ নেবে। হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ সরদার বলেন, রেজিস্ট্রেশন কম হওয়া মানে কম মানুষ হজে যাবেন। এতে করে এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া। শেষ দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। এতেও যদি আশানুরূপ নিবন্ধন না হয় তাহলে সময় বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আশা করছি শেষ পর্যন্ত কোটা পূর্ণ হবে। কারণ এ বছর আমরা অনেক আগে থেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নিবন্ধনের জন্য আবার সময় বাড়ানো হবে। খরচ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, খরচ কমানোর সুযোগ নাই। এই আলোচনা আগে হয়েছে। আর বিমান ভাড়ার বিষয়টি দেখে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। 

উল্লেখ্য, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধনকারীদের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ই মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন আট হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এর মধ্যে বিমান ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। মক্কা-মদিনায় বাড়ি-ভাড়া ও তাঁবুর খরচ বেড়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status