প্রথম পাতা
হজ কোটার অর্ধেকই রেজিস্ট্রেশন হয়নি, নেপথ্যে দুই কারণ
সিরাজুস সালেকিন ও শুভ্র দেব
৭ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার
আকাশসম বিমান ভাড়া ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রভাব পড়েছে হজযাত্রায়। তিন দফা সময় বাড়িয়েও এবারের হজযাত্রার আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। আজ নিবন্ধনের শেষদিনে কোটার অর্ধেকও রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী- ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার কথা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৪৬ হাজার ৫৫৭ জন। গতকালই নিবন্ধন করেছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। আর সরকারি মোট প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৮ হাজার ৮৭৩ জন। গতকাল নিবন্ধন করেছেন ৫১০ জন।
ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্বপ্রথম শর্তই হলো- আর্থিকভাবে সামর্থ্য থাকতে হবে।
কিন্তু এবার কোটার অর্ধেক যাত্রীও মিলছে না। প্রাক-নিবন্ধন করতে ৩০ হাজার টাকা জমা দিতে হয় যা পরবর্তীতে ফেরতযোগ্য। আর নিবন্ধনের চূড়ান্ত সময় জমা দিতে হয় অবশিষ্ট টাকা। তবে পাহাড়সম এই খরচ না জোগাতে পেরে অনেকেই চূড়ান্ত নিবন্ধন করছেন না। বরং প্রাক-নিবন্ধনের টাকা ফেরত নেয়ার আবেদন করছেন অনেকেই। সিলেটের আকাবা ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, গত বছর কোটা কম ছিল। তবুও আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ জনকে হজে পাঠিয়েছি। এ বছর কোটা বেশি। কিন্তু খরচ বেশি হওয়াতে সাড়া পাচ্ছি না। সময় বাড়ানোর কারণে এখন পর্যন্ত ৪০ জন নিশ্চিত হয়েছে। যদি সময় আরও বাড়ানো হয় তবে আরও কিছু বাড়তে পারে। ঢাকার আল নূর ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্টের মালিক শরীয়তউল্লাহ শহীদ বলেন, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ জন আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হজে যাবেন।
আশা করছি সময় বাড়ালে হাজীদের সংখ্যাও বাড়বে। তিনি বলেন, খরচটা বেশি। আগে সৌদি আরবে যে সকল খাতে খরচ কম ছিল এখন সেখানে খরচ অনেক বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে বিমান ভাড়াও অনেক বেড়েছে। শুধু চলতি বছরেই যে বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে সেখান থেকে অন্তত ৩০ হাজার টাকা কমানো সম্ভব। এতে করে হজযাত্রীদের কিছুটা হলেও স্বস্তি হতো। আল-নাসের এভিয়েশন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ড. আবদুল্লাহ আল-নাসের বলেন, গত বছর হজের খরচ ছিল ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এ বছর দেড় লাখ টাকার বেশি খরচ বেড়েছে। হজযাত্রী বা এজেন্সির মালিকরা চিন্তাও করতে পারিনি এত বেশি খরচ বাড়বে। খরচ বাড়ার কারণে হজে যেতে যারা আগ্রহী ছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাজ হচ্ছে না। কারণ হজযাত্রীদের বেশির ভাগই গ্রামাঞ্চলের মানুষ। যারা যান তারা অনেক কষ্ট করে টাকার ব্যবস্থা করেন। অনেকেই মনে করেছিলেন এ বছর খরচ বাড়বে না। তাই আগের বছরের মতো টাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। কিন্তু খরচ বাড়ায় তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেন, গত বছর আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ১০৪ জনকে পাঠিয়েছিলাম। আর চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মতো যোগাযোগ করেছেন।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ বলেন, প্যাকেজ মূল্য বেশি হওয়াতে সাড়া কম মিলছে। খরচ আরও কম হওয়া উচিত ছিল। কারণ এখন যে প্যাকেজ মূল্য ধরা হয়েছে সেটি অনেকের সাধ্যের বাইরে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স তাদের লসের বোঝা হজযাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবারই খরচ কমানোর দাবি জানিয়ে আসছি। আশা করছি এ বিষয়ে সরকার একটি পদক্ষেপ নেবে। হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ সরদার বলেন, রেজিস্ট্রেশন কম হওয়া মানে কম মানুষ হজে যাবেন। এতে করে এজেন্সিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিষয়ে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষের প্রবণতাই হচ্ছে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া। শেষ দিনে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন করতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। এতেও যদি আশানুরূপ নিবন্ধন না হয় তাহলে সময় বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা আশা করছি শেষ পর্যন্ত কোটা পূর্ণ হবে। কারণ এ বছর আমরা অনেক আগে থেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। নিবন্ধনের জন্য আবার সময় বাড়ানো হবে। খরচ কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, খরচ কমানোর সুযোগ নাই। এই আলোচনা আগে হয়েছে। আর বিমান ভাড়ার বিষয়টি দেখে বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধনকারীদের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ই মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন আট হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। গত বছরের চেয়ে এবার উভয় প্যাকেজেই বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। এর মধ্যে বিমান ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। মক্কা-মদিনায় বাড়ি-ভাড়া ও তাঁবুর খরচ বেড়েছে প্রায় এক লাখ টাকা।
পাঠকের মতামত
বিমান ভাড়া ন কমালে এসব লোক কিভাবে হজ্জ পালন করবেন। অনুগ্রহ করে ভাড়া কমান। তাদেরকে হজ্জ পালন করতে দিন। অন্য সময় লাভ করলেও চলে। এদের কে টার্গেট না করলেই নয়। বিষয়টি ভেবে দেখুন।।
সরকারের সদইচ্ছার অভাব। বিমান ভাড়া কমালেই অন্যান্য এয়ারলাইন্স ভাড়া কমাতে বাধ্য হবে। ভাড়া বাড়ানোতে পথ প্রদর্শনকারী বিমান, আর কেউ নয়, তারা হাজীদের টাকা কামানো মওশুম মনে করে। সারা বছর ডিসকাউন্টে যাত্রী পরিবহন করলেও হাজীদের দিতে হয় Full fare। এই সুযোগ বিমানের মাধ্যমে সরকার নিচ্ছে বলেই সৌদী এয়ারলাইন্সও নিচ্ছে। শুনছিলাম এবার জাহাজে হজ্বে যাবার ব্যবস্থা হচ্ছে। জাহাজে হলে দুই লাখ টাকায় মানুষ হজ্বে পারতো।
পৃথিবীর কোনো মুসলিম রাষ্ট্রে এরকম বেহায়াপনা ও পিচাশ ব্যবস্থা আছে কিনা জানা নাই,ভারতের মুসলিম মানুষেরাও এতো টাকা ব্যয় করে কি না সন্দেহ আছে ৷
Since cost is increased and Bangladesh is under pressure of foreign reserves, the number of pilgrimage should be decreased and anyone who has already performed Omra or Hajj must not be allowed to go again.
It is simply a big budget corruption nothing else .
মক্কা- মদিনার বাড়ি ভাড়া অজুহাত হতে পারে না,কারণ মক্কা মদিনায় বাড়ি ভাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম। সৌদী সরকারের হজ্ব ফি সব দেশের জন্য সমান। শুধু বিমান ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ের হলেই সমস্যার সমাধান হওয়া সম্ভব।
হ্বজকে যখন কোন সরকার ব্যবসা হিসাবে বেচে নেয় তখন এর চাইতে ভাল কিছু আশা করা ভূল।
বাঙালীর চরিত্র, সুযোগ পেলে গলা কাটা । রমজান মাসে মুসলিম ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে আর কানাডার অমুসলিম ব্যবসায়ীরা মূল্য হ্রাস করে । একই চরিত্র সরকারি বিমান সংস্থার গ্রহণযোগ্য হতে পারে না । এটি হারাম। সব সময় সৌদি আরবের ভাড়া যত হজ্জ যাত্রীদের জন্য ও ততই হতে হবে । সরকারি আমলারা দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীর চরিত্র ধারণ করতে পারেন না । এটি আইন বিরুদ্ধ বৈষম্য।
হজের বিমান ভাড়া ১ লক্ষ ৯৮ হাজার ওমরা বিমান ভাড়া এক লাখ পর্যটকদের জন্য বিমান ভাড়া ৬০ হাজার পৃথিবীর প্রায় সব দেশ হজের জন্য ভর্তুকি দেয় এমনকি পাশের দেশ ভারত পাকিস্তান মালয়েশিয়ার ইন্দোনেশিয়ার সব দেশে থেকেই হজের জন্য ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে অথচ আমাদের দেশে ভর্তুকি তো দিচ্ছেনা উল্টো বিমান ভাড়া বাবদ মোটা অংকের টাকা মুনাফা করছে.
It's highly expensive and since now Bangladesh is under acute shortage of foreign reserve govt. should discourage people going to pilgrimage and must impose bar one who already performed Hajj.
Shadharon manusher jonno shob kichui durbishoho hoe jacchey. Govt. authority dhormo montronaloy era keu kichu korena shobai business khuje dhandabaji kore. Allah subhanahu wa'ta'ala shobai k hedayet daan korun.
বিত্তবান মুসলিম নরনারীর জন্য হজ্জ পালনের বাধ্যবাধকতা পবিত্র কোরআনূল করীমের দ্বিতীয় সূরা বাকারা ১৯৭ নং আয়াতে বিবৃত হয়েছে। আয়াতটির প্রথম বাক্যাংশের অনুবাদ হলো " হজ্জ হয় সুনির্দিষ্ট মাসসমূহে" ......। এই মাসগুলো হলো শাউয়াল জেলক্বদ ও জেলহজ্জ। সূত্রঃ The Holy Quran- Text, Translation and Commentary -Translated by Abdullah Yousuf Ali. এ মাসগুলির সময়কে কিভাবে বা কোন বিবেচনায় সংকোচিত করে কেবল জিলহজ্জ মাসের ৮/৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত হজ্জ ইচ্ছু সকল মানব মানবীদের একত্র জমায়েত করে হজ্জ অনুষ্ঠানের যাবতীয় পালনীয় কর্তব্যসমুহ শেষ করে মূল খুতবাটি দেয়া হয়। এই হজ্জ পর্বটি পবিত্র কোরআনে উধৃত তিন মাসে পালন করা গেলে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ অনেক নরনারী বিশেষ করে সল্প উন্নত দেশের হজ্জ ইচ্ছুগন কম খরচে সচ্ছন্দে করতে পারতেন। অতিমারি করোনার কারনে অনেক কিছু সংশোধিত হয়ে হজ্জ হতে পারলে কোরআন নির্দেশিত তিন মাস ব্যাপী হজ্জ করা গেলে এই যে পশু কোরবানী নিয়ে অনেক পেরেশানী তা লাঘব হতো। ধন্যবাদ।
পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে হজ্জ যাত্রীদের প্যাকেজ কত টাকা ঘোষনা করেছে তার একটু তুলনামূলক আলোচনা করলে ভালো হতো। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে হজ্জ যাত্রীদেরকে ভুর্তুকি দেয়া হয় আর আমাদের দেশে হজ্জ যাত্রীদের মাথায় কাঠাল ভাঙ্গা হয়।
ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ সহ এই সব দেশ থেকে চার লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে চার লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা হজ্বে খরচ হয়। আর বাংলাদেশে থেকে চুরি ডাকাতি দূর্নীতি অনিয়ম লুটপাটের কারণে এতো বেশি টাকা হজ্বে খরচ করতে হয়, যা গ্রামের অতি সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব হয় না।