শরীর ও মন
ফুসফুসের ক্যান্সার ও এর সার্জারি সমাধান
অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম
২৬ মে ২০২২, বৃহস্পতিবার
একটি জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ফুসফুসের ক্যান্সার সবরকম ক্যান্সারের প্রায় ২৩ শতাংশ দখল করে আছে। আর দিন দিন এই আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। GLOBACON ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী, ৭৪ বছর বয়স পর্যন্ত জনসংখ্যার প্রতি ১০১ জনে ১ জন মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে, পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ৬৮ জনে ১ জন, মহিলার ক্ষেত্রে প্রতি ২০১ জনে ১ জন।
প্রকার
ফুসফুসের ক্যান্সার তিন ধরনের হয়। নন স্মল সেল টাইপ, স্মল সেল টাইপ এবং কার্সিনয়েড। এর মধ্যে স্মল সেল টাইপ সবচেয়ে খারাপ, এটি বৃদ্ধি পায় ও শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
ঝুঁকির কারণ সমূহ
মূলত ধূমপান ও বায়ু দূষণ ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হলেও এর সঙ্গে পেশাগত কারণে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক যেমন, আর্সেনিক, নিকেল, সিলিকা ইত্যাদির সংস্পর্শে আসাও উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
ফুসফুস ক্যান্সারের উপসর্গ ও লক্ষণগুলো
প্রাথমিক পর্যায়ে এ ক্যান্সারের কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দেয় না। যখন রোগটি চরম পর্যায়ে উপনীত হয়, তখন যে উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো-
(১) ক্রমাগত কাশি
(২) শ্বাসকষ্ট
(৩) রক্তসহ কফ ওঠা
(৪) বুকে ব্যথা
(৫) শরীরের ওজন কমে যাওয়া
(৬) কণ্ঠস্বর বসে যাওয়া ইত্যাদি।
সহজে শনাক্ত যেভাবে
রোগীর উপসর্গের সঙ্গে বর্ণিত ঝুঁকির কারণগুলো দেখা যায়, তাদের ফুসফুসের বা লাঙ্কস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি রোগের ইতিহাস ও উপসর্গ ফুসফুসের ক্যান্সার নির্দেশ করে, রোগীর বুকের এক্সরে ও সিটি স্ক্যান দ্বারা প্রাথমিক নিরীক্ষণ করা হয়।
নির্ণয় পদ্ধতি
ফুসফুসের ক্যান্সার চূড়ান্তভাবে নির্ণয় করা হয় PET-CT scan এবং CT বা ব্রঙ্কাস্কোপি গাইডেড ট্রুকাট বায়োপসি দ্বারা।
চিকিৎসা
অস্ত্রোপচার মাধ্যমে এটিকে সারিয়ে ফেলা হয় এবং এটিই ফুসফুস ক্যান্সারের অন্যতম সেরা চিকিৎসা। ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে একধরনের ভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার হলো, ‘যে ফুসফুস শ্বাস নেয়া ও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য হওয়া, অসুস্থ ফুসফুসের অস্ত্রোপচার করলে সেই মানুষের পক্ষে সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।’ কিন্তু বহু আন্তর্জাতিক গবেষণা এবং কমিটির সুপারিশ দ্বারা এই বহুল প্রচারিত ভুল বোঝাপড়াটিকে খণ্ডন করা হয়েছে।
যে পর্যায়ে সার্জারি করা হয়:
রোগের পর্যায়কে স্টেজ ওয়ান থেকে স্টেজ ফোর অবধি ভাগ করা হয়। এর মধ্যে নন স্মল সেল টাইপ ও কার্সিনয়েড ক্যান্সারের স্টেজ থ্রি পর্যন্ত সার্জারি দ্বারা নিরাময় সম্ভব হতে পারে। স্মল সেল টাইপ ক্যান্সারে কিন্তু কেবল স্টেজ টু পর্যন্তই অস্ত্রোপচার দ্বারা নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে। দেখা যায় যে, যদি অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী কিছু পরীক্ষায় রোগী উপযুক্ত বিবেচিত হন, তবে রোগসংক্রমণ বিচার করে ফুসফুসের অংশবিশেষ, এমনকি একদিকের সম্পূর্ণ ফুসফুসও বাদ দেয়া সম্ভব। সেই রোগী অস্ত্রোপচারের পর আগের মতোই কায়িক শ্রম সহ্য করার অবস্থায় থাকেন, সর্বোপরি সুস্থতর জীবনযাপন করতে পারেন। এ ধরনের রোগীদের নিয়মিত চিকিৎসার অভিজ্ঞতা আছে, এমন থোরাসিক সার্জেন, পালমনোলজিস্ট, মেডিকেল ও রেডিয়েশন অঙ্কলজিস্ট এবং রেডিয়লজিস্ট এই ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মো. শামসুল আলম- বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, রক্ত ও খাদ্যনালী বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (সাবেক), জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল মহাখালী, ঢাকা।
ও কনসালটেন্ট- ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা।
চেম্বার: ফরাজী হাসপাতাল, বনশ্রী রামপুরা, ঢাকা।
সেল-০১৭১৩০০৭৩১৮।