ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

চলতি পথে

বাজারে আগুন ভোক্তাদের দেখবে কে?

শুভ কিবরিয়া
২ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

আইএমএফের লোন  নেয়ার শর্তে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বারবার দ্রুতলয়ে বাড়ার ফলে এবং সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ পরিবহন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সকল খাতে পরিবারের ব্যয় বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। দেশের একটা বড় অংশের মানুষের জীবনে আয় ও ব্যয়ের এই ব্যবধান এত দ্রুত বাড়ছে যে, এর ভারসাম্য রক্ষা করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে।  প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার পুতিনের দোষ দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে?  কোন নীতি ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান হু হু করে কমে যাওয়া ঠেকাবে? আমরা কি মূল্যস্ফীতির এই বেপরোয়া গতিকে রাষ্ট্রিকভাবে স্বীকার করছি? করলে সেটা  ঠেকানোর আয়োজন কী? ডলার ক্রাইসিসের সমাধানই বা কী? সামনে রমজান মাস আসছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, সরকার বহু কথা বলে বটে কিন্তু শেষমেশ কখনই রমজান মাসে প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে পারে না


ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ার পর গোটা পৃথিবীর মানুষ টের পাচ্ছে এই যুদ্ধ তাদের জীবনে বিশেষত অর্থনৈতিকভাবে কী রকম প্রভাব ফেলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সমগ্র পৃথিবীকে নাজুক করে তুলেছে, কারণ এই যুদ্ধ প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের ওপর দারুণতর প্রভাব  ফেলেছে। রাশিয়া পৃথিবীর প্রাথমিক জ্বালানি বিশেষত গ্যাসের বড় সরবরাহকারী। বলা হয়ে থাকে গোটা পৃথিবীর গ্যাসের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে রাশিয়া। রাশিয়ার গ্যাসের একটা বড় অংশ ব্যবহার করে ইউরোপের দেশগুলো। এই যুদ্ধের ফলে  সেই গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়েছে। আমেরিকাসহ পশ্চিমা  দেশগুলোর দাবি বৃহৎ শক্তির  দেশ রাশিয়া তুলনামূলক দুর্বল  দেশ ইউক্রেনের উপর  জোর করে একটা অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন
তারই প্রতিরোধ হিসেবে আমেরিকাসহ তার মিত্র  দেশগুলো রাশিয়ার উপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে চাইলেও রাশিয়া তার গ্যাস অন্য  দেশগুলোর কাছে ইচ্ছেমতো বিক্রি বা সরবরাহ করতে পারছে না। আবার যাদের এই গ্যাস দরকার তারাও রাশিয়ার কাছ থেকে গ্যাস নিতে পারছে না। কারণ এই গ্যাস নিলে সেই  দেশের উপরও আমেরিকা ও তার মিত্রদেশগুলোর জারিকৃত বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা চেপে বসবে। রাশিয়ার গ্যাস নিয়ে এই কাণ্ড ঘটবার পর গোটা পৃথিবীর প্রাথমিক জ্বালানির (গ্যাস ও তেল) বাজার অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশেও আমরা তার প্রভাব লক্ষ্য করছি। 

আমাদের দেশে গ্যাসের দাম বাড়াতে হলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর মাধ্যমে গণশুনানি করেই তা বাড়াতে হতো। সরকার এই যুদ্ধের অজুহাতে সেই ব্যবস্থাকে ঠুঁটোজগন্নাথ বানিয়ে জ্বালানি ও বিদ্যুৎবিভাগের হাতে নিয়েছে। নতুন আইন বানিয়ে সরকার এই কাজটা করেছে। ফলে সরকার চাইলে প্রতিদিন নিজের মতো করে জ্বালানি, বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারে। ইতিমধ্যে এই নতুন আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে সরকার চড়াহারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েই চলেছে। ভবিষ্যতে আরও দ্রুততর সময়ে দ্রুতগতিতে সেটা বাড়াবার সম্ভাবনাও জারি রয়েছে। এই যুদ্ধ প্রমাণ করেছে আমাদের অর্থনীতি, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্যিক সকল কর্মকাণ্ড প্রাথমিকভাবে জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণনের উপর নির্ভরশীল। পৃথিবীর সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থা এখন ফসিল ফুয়েলের উপরই নির্ভরশীল। এই ফসিল ফুয়েলের দাম বাড়লে সামষ্টিক অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশেও আমরা তার প্রভাব তীব্রভাবে অনুভব করতে শুরু করেছি। আমাদের ব্যক্তিজীবন, সমাজজীবন, রাষ্ট্রজীবনেও এই জ্বালানি সংকটের চাপ আমরা অনুভব করছি এবং সামনে একটা ভবিষ্যত সংকটের আশংকা করছি। এটা একটা দিক। অন্যদিক হচ্ছে, এই যুদ্ধের আগেই  গোটা পৃথিবী সমবেতভাবে ২০১৫ সালে প্যারিসে বসে চুক্তি করে একমত হয়েছিল,  যে ফসিল ফুয়েল বা জীবাশ্ম জ্বালানি (তেল, গ্যাস, কয়লা) আমরা ব্যবহার করছি তার ব্যবহার কমাতে হবে। কেননা এই জীবাশ্ম জ্বালানি বাতাসে কার্বনের পরিমাণ বাড়ায়। পরিবেশকে দূষণ করে। উষ্ণতা বাড়ায়। জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। তাই পৃথিবীকে পরিবেশের বিপন্নতার হাত থেকে বাঁচাতে হলে, জলবায়ুর পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে, দ্রুত এই ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমাতে হবে। পৃথিবীসমেত সমবেত সিদ্ধান্ত ছিল এই ফসিল ফুয়েল বা অনবায়নযোগ্য, ডার্টি ফুয়েল ব্যবহারের বদলে ক্রমান্বয়ে আমরা সবাই মিলে ক্লিন ফুয়েল বা নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা রিনিউয়েবল জ্বালানির দিকে যাত্রা শুরু করবো। 

 এই ডার্টি এনার্জি থেকে ক্লিন এনার্জির দিকে যাত্রাপথকেই আমরা বলছি এনার্জি ট্রানজিশন বা জ্বালানি রূপান্তর। সেই জ্বালানি রূপান্তরের দিকে সবাই যখন গুটি গুটি পায়ে যাত্রা শুরু করেছে ঠিক তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পুরো পরিস্থিতিতে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে বাধ্য করেছে। এ পরিস্থিতি তাই বিশ্ববাসীর কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থাতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভোক্তাদের সংগঠন কনজ্যুমারস ইন্টারন্যাশনাল এবারের ভোক্তা অধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য করেছে, To Empower Consumers Through Clean Energy Transitions। বাংলাদেশে  ভোক্তা অধিকার দিবসেও আমাদের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘নিরাপদ জ্বালানি, ভোক্তাবান্ধব পৃথিবী’। আমরা এমন জ্বালানি ব্যবহার করতে চাই যেটা ক্লিন এবং আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীকে নিরাপদ রাখে। সঙ্গে সঙ্গে সেটা হতে হবে ভোক্তাবান্ধব। ভোক্তার জন্য আমরা চাই সাশ্রয়ী মূল্যে, নিরবচ্ছিন্ন, মানসম্মত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ। বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো ঘটনা।  জ্বালানি সেক্টরে আমাদের  ভোক্তাবান্ধব সক্ষমতা দিন দিন কমছে। জ্বালানি খাতে মুনাফামুখিনতার নতুন ধারা  ভোক্তাদের কথা যতটা ভাবছে তার চাইতে অনেক বেশি ভাবছে এই খাতে বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের কথা। তার উপর যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি আর অদক্ষতা। নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারিকরণ প্রবণতা সেটাকে আরও  ভোক্তাবান্ধবতার বিপক্ষে দাঁড় করিয়েছে। ফলে ভোক্তারা পড়েছে ভয়ংকর বিপাকে। সাম্প্রতিক বাজারে পড়েছে তার প্রভাব। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম লাগামহীনভাবে  বেড়েছে। সরকারের ভর্তুকিতে  দেয়া কম দামের টিসিবি’র ট্রাকের সামনে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে চাওয়া ক্রেতার লাইন বাড়ছেই কেবল। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিসের দামের এই প্রভাব আমাদের স্বল্পআয়ের  তো বটেই নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যবিত্তের জীবনকেও করে তুলেছে নাকাল। 

 

 

আইএমএফের লোন  নেয়ার শর্তে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বারবার দ্রুতলয়ে বাড়ার ফলে এবং সামনে আরও বাড়ার সম্ভাবনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ পরিবহন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সকল খাতে পরিবারের ব্যয় বিপুলভাবে বেড়ে গেছে। দেশের একটা বড় অংশের মানুষের জীবনে আয় ও ব্যয়ের এই ব্যবধান এত দ্রুত বাড়ছে যে, এর ভারসাম্য রক্ষা করা ভীষণ কঠিন হয়ে পড়েছে।  প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার পুতিনের দোষ দিয়ে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে?  কোন নীতি ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান হু হু করে কমে যাওয়া ঠেকাবে? আমরা কি মূল্যস্ফীতির এই বেপরোয়া গতিকে রাষ্ট্রিকভাবে স্বীকার করছি? করলে সেটা  ঠেকানোর আয়োজন কী? ডলার ক্রাইসিসের সমাধানই বা কী? সামনে রমজান মাস আসছে। অতীতের অভিজ্ঞতা বলে, সরকার বহু কথা বলে বটে কিন্তু শেষমেশ কখনই রমজান মাসে প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে পারে না। রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা নানা অসাধু উপায়ে  যে বেপরোয়া গতিতে দাম বাড়ায় সেটা ঠেকাবার ব্যবস্থাই বা সরকারের কি? এমনিতেই এই বছর নির্বাচনের বছর। রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের অন্যায্য লাভ বা লুণ্ঠনমূলক মুনাফার কারণে যে জনদুর্ভোগ হয় তা রুখতে কি সরকার কঠোর হতে পারবে?  নাকি মানুষের দুর্ভোগসহায়ক নীতি নিয়েই ব্যবসায়ীদের যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ দেবে সরকার? আমরা আশা করি সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। 

একদিকে নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করতে না পারলে পৃথিবীর বাতাস-তাপমাত্রা আমাদের জন্য যেমন বাসযোগ্য থাকবে না। তেমনি অন্যদিকে এটিকে ভোক্তাবান্ধব না করতে পারলে জনমানুষের বিপদ কমবে না। এ দুয়ের মাঝে একটা সমন্বয়ের সুতো বাঁধতে পারলেই পৃথিবী বাঁচবে, ভোক্তাও বাঁচবে। অন্যদিকে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের লম্বা হাতকে জনমুখী করতে হবে। আগে  থেকেই খাদ্যদ্রব্য সরবরাহের প্রয়োজনে সরকারের সংস্থা টিসিবিকেও সক্রিয় রাখতে হবে। যাতে বাজারে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসের সংকট না ঘটে। সংকটের সুযোগে মুনাফালোভীরা জনকষ্টকে আরও বাড়িয়ে তুলতে না পারে। কতোগুলো বিষয়ে এখনই সরকার অধিকতর নজর দিতে পারে- 

১. সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা বাস্তবিক ফলনময় সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে যাতে সরবরাহ ও বিপণন ব্যবস্থায় বড় ধরনের কোনো সংকট কেউ চাইলেও তৈরি করতে না পারে। 

২. টিসিবি’র মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রির ব্যবস্থাটির আরও বিস্তার ঘটাতে হবে। 

পুরো বণ্টন ব্যবস্থা জনবান্ধব ও জনমুখী করে তুলতে হবে। এই বিষয়ে সিন্ডিকেট, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন যেন পুরো ব্যবস্থাকে গুটিকতক শক্তিমান মানুষের লাভের বিষয় না করে তোলে সেটা  খেয়াল রাখতে হবে। 

৩. কোনো অবস্থাতেই, কোনো অজুহাতেই জ্বালানির দাম বিশেষত গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না। বরং দেখতে হবে অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে এর প্রভাব দ্রব্যমূল্য, খাদ্যপণ্য, ওষুধ-চিকিৎসা সামগ্রীর উপর কীভাবে  বেড়েছে। সেটা মানুষের জীবনকে কতোটা অসহনীয় করেছে। সেই অসহনীয়তা কমাতে কী করা যেতে পারে  সেই বিবেচনা জরুরিভিত্তিতে নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। 

৪. রমজান মাসে লোডশেডিং হলে সেটা যেন মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে, ব্যবসায়িক কাজকে বিপন্ন না করে  সেদিকে খেয়াল রেখে বাস্তবানুগ কর্মসূচি হাতে নেয়া  যেতে পারে।  যুদ্ধের অজুহাতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে, লুণ্ঠনমূলক মুনাফা-বল্গাহীন অসাধুতা-নিয়ন্ত্রণহীন বাজারের হাতে, জনদুর্ভোগসহায়ক নীতির কাছে মানুষের জীবনকে জিম্মি হতে দেয়া যাবে না।  মানুষের এই ভীষণ কষ্টের দিনে দাঁড়াতে হবে মানুষেরই পাশে। সেটাই সরকারের দায়িত্বশীল কর্তব্যও বটে। 

 লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক [email protected]

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status