শেষের পাতা
নারায়ণগঞ্জে গুলিবিদ্ধ রেস্টুরেন্ট ম্যানেজারের মৃত্যু, বাবা-ছেলে রিমান্ডে
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবারনারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়ায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্টুরেন্টে ঢুকে বাড়িওয়ালার এলোপাতাড়ি গুলিতে ম্যানেজার সফিউল আলম কাজল (৫৫) মারা গেছেন। সোমবার রাত ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত কাজল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের মৃত শাহ আলমের ছেলে। তিনি বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্ত্রী ও ২ মেয়ে রয়েছে। এদিকে গ্রেপ্তারকৃত বাড়িওয়ালা আজাহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদার মোহনকে ২ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাউসার আলমের আদালতে শুনানি শেষে তাদের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে পুলিশ আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। একইসঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ৩৪ ধারা সংযুক্ত করে হত্যা মামলার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক ওসি মো. আসাদুজ্জামান আসাদ ও বাদী পক্ষের আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টের সাবেক পিপি এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে চাষাঢ়ায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্টুরেন্টের দোতলায় ঢুকে আজহার তালকুদার রেস্টুরেন্টের মালিক শুক্কুর আলীর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আজহার তালুকদারের ৪ ভাইয়ের মালিকানাধীন ৬তলা ভবনের নিচতলায় ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ ভাড়ায় পরিচালনা করছেন শুক্কুর আলী। আজহার তখন পানির বিল বাবদ শুক্কুর আলীকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলেন। তখন শুক্কুর আলী বলেন ১০ লাখ টাকা কেন দিবো? আমি তো আপনার কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেই নাই। ভাড়া নিয়েছি আপনার ছোট ভাই আজিজুল হক তালুকদারের কাছ থেকে। তাছাড়া আমি তো পানির বিল প্রতিমাসে দিয়েই যাই। পানিসহ আমার ৮০ হাজার টাকা ভাড়া। পানির জন্য ৫ হাজার, আর ভাড়া ৭৫ হাজার। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আজাহার তালুকদার শুক্কুর আলীকে খারাপ ভাষায় গালমন্দ করে। পরে শুক্কুর আলীও গালি দেয়। এরপর আজাহার তালুকদার বলে দাঁড়া আসতাছি। একথা বলে সে চলে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে আজাহার ও তার ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে বাসা থেকে পিস্তল ও শটগান নিয়ে আসে এবং শুক্কুরকে খুঁজতে থাকে। এর কারণ জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শফিকুর রহমান কাজলের পেটে পিস্তল দিয়ে পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি করে আজাহার। এরপর শটগান দিয়ে আরও বেশ কয়েক রাউন্ড এলোপাতাড়ি গুলি করে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। শটগানের গুলিতে রাসেল ও জনি নামে দুই পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়। আজাহারকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে তার মেয়ে লাকিও পায়ে গুলিবিদ্ধ হন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় পিস্তল ও শটগানের গুলি শেষ হওয়ার পর আশপাশের লোকজন আজাহার ও তার ছেলেকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। সে দৌড়ে ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেয়।’ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে ২টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ আজাহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদার মোহনকে গ্রেপ্তার করে। আজাহারের ভাই আজিজুল হক তালুকদার জানান, ‘আমি শুনলাম আমার ভাই নাকি রেস্তরাঁয় গিয়ে ১০ লাখ টাকা চেয়েছে। জানার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত রেস্তরাঁর দিকে রওয়ানা দেই। কিন্তু আসতে আসতেই শুনি বড় ভাই নাকি গুলি চালিয়েছে। আজিজুল হাওলাদারের স্ত্রী শারমিন আক্তার ডলি বলেন, ‘আজাহার ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের বাড়ি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। কিন্তু সেগুলো মিটমাট হয়ে গেছে। তারা ৪ তলায় থাকে আমরা ৬ তলায়। ঘটনা শুনে আজাহার ভাইকে বলেছিলাম একটু অপেক্ষা করতে। কিন্তু তা না শুনেই সে রেস্তরাঁয় ঢুকে গুলি চালিয়েছে। তাকে ফেরাতে গিয়ে তার মেয়েও আহত হয়েছে।’ এদিকে স্থানীয়রা জানান, আজাহার তালুকদার ‘বদমেজাজী’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। দু’টি অস্ত্রের লাইসেন্স থাকায় সে কাউকে পরোয়া করে না। পান থেকে চুন খসলেই অস্ত্রের ভয় দেখায়। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান জানান, অধিকতর তদন্তের জন্য আসামিদের ৩ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।