প্রথম পাতা
এখনই কিছু ভাবছি না, দেখি কী হয়
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার
পনেরো বছর হতে চললো। ক্ষমতায় নেই বিএনপি। কিন্তু সিলেটে না থেকেও ক্ষমতায় দলটি। নিজ দল বিএনপি’র একমাত্র প্রদীপ সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বীরদর্পেই সিলেটে করছেন মেয়রগিরি। দলের অনেকেই তাকে বলে থাকেন ‘মেসি’। কেউ বলেন ‘অলরাউন্ডার’। সামনে সিটি নির্বাচন। এবার এখনো দোটানায় আরিফ। কী করবেন- এ প্রশ্নের সহজ উত্তরও নেই তার কাছে।
প্রথমেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েই দিলেন চমক। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা ও সাবেক মেয়র কামরানকে পরাজিত করে তিনি সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভ করেন। কিন্তু জয়লাভ করলেও সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হওয়ার কারণে দু’বছরও চেয়ারে বসতে পারেননি। কারাগারে ছিলেন। এরপর আইনি লড়াই চালিয়ে জামিনে মুক্ত হয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি ফের কামরানকে পরাজিত করেন। দলের পাশাপাশি সিলেটের সামাজিক নেতৃত্বের সাপোর্ট পেয়েছিলেন তিনি। ১০ বছরের শাসনে অনেক বদলে দিয়েছেন সিলেট নগরকে। অবিরাম করে যাচ্ছেন কাজ। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজে ডুবে থাকছেন তিনি। ব্যর্থতাও আছে তার। এরপরও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই হচ্ছেন সিলেটের একমাত্র ভরসা। তাকে ঘিরে সিলেট বিএনপি’র কার্যক্রমও অনেক চাঙা। দু’হাতে উন্নয়ন করেছেন। সরকার থেকে টাকাও পেয়েছেন। এ কারণে ১০ বছরে এসে দৃশ্যমান হচ্ছে তার উন্নয়ন। এতে করে বাহবাও কুড়াচ্ছেন তিনি। এক হাতে সামলাচ্ছেন সিলেট নগর ও অন্য হাতে নিজ দল বিএনপিকেও। আরিফের ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন- আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হবেন কি-না সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে প্রস্তুতি আছে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর। তিনি মাঠ ছাড়ছেন না। এক্ষেত্রে তিনি দলীয় সিদ্বান্তকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবেন। দলীয় সিদ্বান্ত না মেনে প্রার্থী হলে তাকে দলীয় পদ হারাতে হবে। মেয়র নির্বাচন করতে হবে একা একা। এক্ষেত্রে সিলেট বিএনপিতে আরিফের অবস্থান দুর্বল হতে পারে।
দলীয় সিদ্বান্ত না মেনে হারলে সব হারাতে হবে আরিফকে। তবে জিতলে তার অবস্থান ঠিক থাকবে। এসব কিছুই এখন পর্যালোচনা করছেন তার ঘনিষ্ঠজনেরা। তবে দল নির্বাচনে গেলে আরিফের জন্য সুবিধা বেশি হবে। দলীয় নেতাকর্মীরাও প্রকাশ্যে প্রার্থীর জন্য কাজ করতে পারবেন। জয়ও ঘরে তুলে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন তার অনুসারী বিএনপি’র নেতারা। অন্যদিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে সিলেটে। মেয়র হিসেবে সফল। কিন্তু গত দু’বছর ধরে কিছুটা টানাপোড়েনে রয়েছেন। এই সময়ে সরকারের বরাদ্দ পেতে বিলম্ব হয়েছে। এ কারণে পরিকল্পনামতো কাজ করতে পারেননি। পাশাপাশি গত বছরের পরপর দু’দফা বন্যা অনেক বেশি বিতর্কিত করেছে মেয়র আরিফকে। মাঝেমধ্যে জলাবদ্ধতার সমস্যার কারনে বিতর্কিত হতে হচ্ছে তাকে। এসব বিবেচনায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আগামীতে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, সিলেট-৪ আসনের দিকে মেয়র আরিফের নজর সবচেয়ে বেশি। এই আসনে একটি খামার বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার। ওই আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার সেলিমের মৃত্যুর পর থেকে তিনি যাতায়াতও বাড়িয়েছেন। তবে আসনের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি এখনো সক্রিয় হয়ে উঠেননি। আবার সিলেট-১ আসনের দিকেও নজর রয়েছে তার। যেহেতু মেয়র হয়েছেন, সিলেট-১ আসনে নির্বাচনে বেশি সুবিধা পাবেন তিনি। মেয়র আরিফের আফসোসও রয়েছে সিলেটের বর্তমান জাতীয় নেতৃত্বকে নিয়ে। সিলেটের উন্নয়নে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আন্তরিক ছিলেন। এ কারণে অনেক কিছু না চাইতেও তিনি পেয়েছিলেন। নগরে কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। সিলেট দরদি নেতাদের মৃত্যুর পর এই শূন্যস্থান পুরোপুরি পূরণ হচ্ছে না। এজন্য সার্বিক বিষয় নিয়ে তিনি চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘কিছু বলার সময় এখনো আসেনি। সময় যাক। ভেবেচিন্তে সিদ্বান্ত নেয়া হবে। তবে সিলেট নগরের মানুষ, নগরীর উন্নয়ন তার চিন্তাধারায় প্রাধান্য বেশি বলে জানান।’