ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ কী

মোহাম্মদ আবুল হোসেন
২৯ জানুয়ারি ২০২৩, রবিবার
mzamin

সমসাময়িক পাকিস্তানে ক্ষমতা পরিচালিত হয় আটটি ‘অ্যাক্টর’ দিয়ে এবং তা বিভাজিত করা। সেগুলো হলো- জবরদস্তি ও নজরদারির ক্ষমতা (সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকে এটা), নির্বাহী এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা (এটা ভোগ করে রাজনীতিক এবং আমলারা), সাংবিধানিক এবং আইনি ক্ষমতা (বিচার বিভাগ), কাহিনী বর্ণনা করার শক্তি (মিডিয়া), রাজনৈতিক আন্দোলনের শক্তি (মধ্যম শ্রেণি- বিশেষ করে যুবক ও নারীরা), অর্থনৈতিক শক্তি (ধনী অভিজাতরা), ফতোয়ার শক্তি (পুরনো এবং নতুন সব ধর্মীয় নেতৃত্ব) এবং নৈরাজ্যের শক্তি (সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের)। তবে পাকিস্তানের বর্তমান অভিজাতরা ব্যাপক অর্থে দুটি সহযোগিতামূলক শক্তির সমন্বয়ে গঠিত। তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে আবার লড়াইয়ে লিপ্ত। একটি শ্রেণি আছে এর মধ্যে যারা কোনো পরিবর্তন চায় না। আরেকটি শ্রেণি আছে উজ্জীবিত অভিজাত শ্রেণি (সেনাবাহিনী, রাজনীতিক, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, ধনী এবং ধর্মীয় সার্কেল- সব জায়গা আছে এরা), তারা বুঝতে পারে যে, দেশ ক্রমশ তাদের ও তাদের সন্তানদের অনিয়ন্ত্রিত ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তারা দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যর্থ এবং একটি ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখতে লজ্জাবোধ করেন


পাকিস্তানে বর্তমানে স্বাধীনতাকামী আন্দোলন করছে একমাত্র বেলুচরা। তারা স্বাধীনতা চায়। পাকিস্তানের চোখে তারা বিচ্ছিন্নতাবাদী, বিদ্রোহী। এর কারণ কি? নিজ দেশের মধ্যেই তারা ঔপনিবেশিক আচরণের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।

বিজ্ঞাপন
এ অভিযোগের বৈধতার বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। বেলুচদের নেই কোনো সামরিক সক্ষমতা। নেই তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক কোনো শক্তি, যে শক্তি পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের স্বাধীন হতে সহায়তা করবে। ফলে বেলুচদের এই আন্দোলন সহসাই মিইয়ে যাবে, এমনও নয়। তারা পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্য এক অব্যাহত ও অনিবার্য সহিংস সমস্যা হয়ে উঠবে, যেমনটা তুরস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিদের আন্দোলন।  দেশের বাইরে যুদ্ধ এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সংকটের ফলে সামাজিক বিপ্লব সৃষ্টি হয়। ভারতের সঙ্গে এবং আফগানিস্তানের কিছু ‘এলিমেন্টসের’ বিরুদ্ধে কম উত্তেজনাপূর্ণ বা শীতল যুদ্ধে জড়িত পাকিস্তান। তবে ভারতের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা খুব কমই আছে। ২০১৯ সালে এমন এক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল ভারত-পাকিস্তান। পারমাণবিক অস্ত্র প্রস্তুত করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাতে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তখনকার পরররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত সপ্তাহে তার প্রকাশিত এক আত্মজীবনীতে এ কথা লিখেছেন। যুদ্ধ, পারমাণবিক যুদ্ধ হলে তা যে শুধু এই দু’টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রতিবেশী অনেক দেশ।

 

 এর সঙ্গে বিদেশি শক্তি যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে- এমনও আশঙ্কা আছে। আবার পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। পাকিস্তান রাষ্ট্রকেও তাদের পরাজিত করার সক্ষমতা নেই। তারা উগ্রপন্থি ধর্মীয় দল। ফলে এসব লড়াইয়ে কারও জেতার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এর অর্থ দাঁড়ায় এই লড়াই চলতেই থাকবে এবং রক্তাক্ত হতেই থাকবে পাকিস্তান। এজন্য একথা জোর দিয়ে বলা যায়, এইসব লড়াইয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের পতন হবে না। ভবিষ্যতে পাকিস্তান ভেঙে যাচ্ছে না। তবে যা হবে, তা হলো- আরও অধিকহারে সহিংসতা ও নৈরাজ্য দেখা দেবে।  এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে হিংসা, রেষারেষি- তাতে রাজনৈতিক সুবাতাস সেখানে বইবে এমন আশা করা বোকামি। সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের লংমার্চে গুলি, তার সময়কার তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার,  কেনিয়ায় আশ্রয় নেয়া একজন সুপরিচিত সাংবাদিক হত্যা- কেমন যেন একটির সঙ্গে অন্যটির গোলমেলে এক সম্পর্ক আছে। আবার সদ্য বিদায় নেয়া সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়ার বিরুদ্ধে ইমরান খানের এন্তার অভিযোগ। অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও। অথচ, বলাবলি আছে- ২০১৮ সালে তাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন জাভেদ কমর বাজওয়া। এত গেল একটা দিক। অন্যদিকে, মঞ্চের পর্দার আড়ালে রাজনীতিতে দাবার ‘ঘোড়ার চাল’ দিচ্ছেন লন্ডনে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। ফলে ঘন ঘন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা লন্ডন দৌড়াচ্ছেন। সেখান থেকে দাওয়াই নিয়ে ফিরে আসছেন। সবকিছু মিলে রাজনীতি এক জগাখিচুড়ি অবস্থা। 

 অর্থনৈতিক সংকট থেকে কি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের পতন হবে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আন্তর্জাতিক বাহিনীর জন্য একটি ভাড়াটে রাষ্ট্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে পাকিস্তান। বিশেষ করে এই গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলে এবং একটি পারমাণবিক শক্তিধর হিসেবে। ফলে পাকিস্তানকে আর্থিক সংকট থেকে সব সময় উত্তরণের একটি কারণ হিসেবে দেখা হয়েছে। এমনটা ঘটেছে সাবেক শাসক আইয়ুব খান, জিয়াউল হক, পারভেজ মোশাররফ এমনকি ২০০৮ পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসক গোষ্ঠীগুলোর অধীনে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানকে ব্যবহার করে আফগানিস্তানে অভিযান চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।   তাহলে পাকিস্তানের সামনে কী অপেক্ষা করছে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো- দেশটি অব্যাহতভাবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলতার মধ্যে নিপতিত হচ্ছে। কারণ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ (পিটিআই) এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সিংহাসন দখলের ‘যুদ্ধ’ চলছে।  বেলুচ স্বাধীনতাকামীদের ক্রমবর্ধমান  বেআইনি তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মীয় উগ্রপন্থা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিকভাবে কিছুটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে পাকিস্তান। ইমরান খানের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে দহরম মহরম সম্পর্ক স্থাপন করেন। পুতিন-ইমরান দস্তি শেষ পর্যন্ত দৃশ্যত তার পতনের কারণ হয়েছে। ব্যতিক্রমী একটি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে তারা। কারণ, যারা ক্ষমতায় ছিলেন বা আছেন- তাদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে আছে দুর্নীতির অভিযোগ। শুধু তা-ই নয়। আছে চলমান মামলা। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ছে।

 দেশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে জনসংখ্যা বাড়ছে। নগরায়ন হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। অন্যদিকে দেশটির মানব উন্নয়ন সূচক ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। জনগণ দেখেছে অর্থনৈতিক সংকট, যুদ্ধ, সন্ত্রাস, অপরাধ, রাষ্ট্রীয় অনিয়ম, সামাজিক সূচকের ভয়াবহ পতন।  সমসাময়িক পাকিস্তানে ক্ষমতা পরিচালিত হয় আটটি ‘অ্যাক্টর’ দিয়ে এবং তা বিভাজিত করা। সেগুলো হলো- জবরদস্তি ও নজরদারির ক্ষমতা (সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকে এটা), নির্বাহী এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা (এটা ভোগ করে রাজনীতিক এবং আমলারা), সাংবিধানিক এবং আইনি ক্ষমতা (বিচার বিভাগ), কাহিনী বর্ণনা করার শক্তি (মিডিয়া), রাজনৈতিক আন্দোলনের শক্তি (মধ্যম শ্রেণি- বিশেষ করে যুবক ও নারীরা), অর্থনৈতিক শক্তি (ধনী অভিজাতরা), ফতোয়ার শক্তি (পুরনো এবং নতুন সব ধর্মীয় নেতৃত্ব) এবং নৈরাজ্যের শক্তি (সন্ত্রাসী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের)। তবে পাকিস্তানের বর্তমান অভিজাতরা ব্যাপক অর্থে দুটি সহযোগিতামূলক শক্তির সমন্বয়ে গঠিত। তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে আবার লড়াইয়ে লিপ্ত। একটি শ্রেণি আছে এর মধ্যে যারা কোনো পরিবর্তন চায় না। আরেকটি শ্রেণি আছে উজ্জীবিত অভিজাত শ্রেণি (সেনাবাহিনী, রাজনীতিক, আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ, মিডিয়া, ধনী এবং ধর্মীয় সার্কেল- সব জায়গা আছে এরা), তারা বুঝতে পারে যে, দেশ ক্রমশ তাদের ও তাদের সন্তানদের অনিয়ন্ত্রিত ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তারা দেশকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যর্থ এবং একটি ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখতে লজ্জাবোধ করেন। চলমান অবনতিশীল পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মধ্যম শ্রেণির। অথচ তারা ক্ষমতাসীন দলের কোনো অংশও নন। আবার কোনো সুবিধাভোগীও নন। (তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট)

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status