ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

৬ বছরে ৯০ কোটি টাকার স্বর্ণ বহন করেছে জুয়েল

আল-আমিন
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

দেশে স্বর্ণ চোরাচালানের বড় একটি অংশ আসে আকাশপথে। এর প্রধান রুট ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। 
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি সত্ত্বেও এই রুট দিয়ে চোরাকারবারিরা নিয়মিত স্বর্ণ চোরাচালান করে নিয়ে আসছে। ১৫টি চক্র এই রুটে স্বর্ণ চোরাচালান করে। এমন একটি চক্রের মূল হোতা হচ্ছেন  মো. জুয়েল। গত ৬ বছরে দুবাই থেকে ২ মণ স্বর্ণ চোরাচালান করে দেশে নিয়ে  এসেছেন। এই স্বর্ণের বাজার দর প্রায় ৯০ কোটি টাকা। গত ৬ বছরে তিনি ৭০ বার দুবাই গেছেন স্বর্ণ কিনতে। দীর্ঘদিন স্বর্ণ চোরাচালান করার কারণে দেশে এবং দুবাইয়ে তার বড় নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। 

জুয়েল শুধু ঢাকার শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নয়, সিলেট ও চট্টগ্রাম  বিমানবন্দরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বর্ণ পাচারে সহযোগিতা নিয়েছেন। এই সব অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তিনি মোটা অংকের টাকা দিতেন যাতে তার স্বর্ণ  চোরাচালানে সহযোগিতা করে। তার এই কর্মকাণ্ডে কয়েকজন ইমিগ্রেশন পুলিশেরও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন
বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 

জুয়েলকে আটকের সময় বিমানবন্দরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস বিভাগের কর্মী আমজাদ হোসেনকেও আটক করা হয়েছে। জুয়েল দুবাই থেকে স্বর্ণ এনে আমজাদের কাছে হস্তান্তর করছিলেন। এ সময় বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাদের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেন। বিমানবন্দরের কর্মী আমজাদ দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। 

এ বিষয়ে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি জিয়াউল হক জানান, ‘স্বর্ণ চোরাচালানের কারণে জুয়েলকে দুবাই থেকে ঢাকা বিমাববন্দরে আসা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট থেকে নামার পর গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে সহযোগিতার জন্য বিমানবন্দরের হেল্পলাইন সার্ভিসের কর্মী আমজাদ হোসেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। 

মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জুয়েলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি দুবাইয়ে যান। তিনি গত ৬ বছরে দুবাইয়ে ৭০ বার যাতায়াত করেছেন। গত ১৫ই জানুয়ারি তিনি দুবাই থেকে স্বর্ণ নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে আসেন। প্রায় ১ কেজি ৯৫৫ গ্রামের স্বর্ণ  কৌশলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেসরকারি কোম্পানি হেল্পলাইন সার্ভিসের কর্মী আমজাদ হোসেনের কাছে হস্তান্তর করার সময় পুলিশ তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। ওই স্বর্ণের বাজারদর ২ কোটি টাকা।  স্বর্ণগুলো তিনি পাওয়ার ব্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে আনছিলেন। 
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল জানিয়েছেন, এর আগেও তিনি এবং তার সহযোগীরা একই পদ্ধতিতে স্বর্ণ  চোরাচালান করেছেন। দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশি কবির, সেলিম, সোহেল, আরমান এবং বাবু তাকে এসব স্বর্ণ দিয়েছেন। ওই স্বর্ণগুলো তার আগে থেকেই কিনে রাখে। ওই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমে গেলে তারা সেখান থেকে স্বর্ণগুলো কিনে মজুত করে রাখে। পরে তারা সিগন্যাল দিলে তিনি সেখান থেকে স্বর্ণগুলো নিয়ে আসেন। 

সূত্র জানায়, তিনি নিজেও ওই পাচারের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও কিছু পাচারকারী আছে তাদেরও স্বর্ণ তিনি দুবাই থেকে এনে দেন। এতে তিনি মোটা অংকের টাকা পান। 
সূত্র জানায়, আমজাদও একটি কমিশন পান এ চক্রের কাছ  থেকে। এক সপ্তাহ আগেও একটি চোরাচালানে সহযোগিতা করায় আমজাদ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন জুয়েলের কাছ  থেকে। এ চক্রে আরও ১৫ জনের নাম পেয়েছে পুলিশ। 
সূত্র জানায়, জুয়েল পুলিশকে জানিয়েছে যে, ওই স্বর্ণগুলো একটি কার্গো ফ্লাইটে আসার কথা ছিল। এক বিমানের কর্মী সেখানে সহযোগিতার জন্য তার কাছে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা  নিয়েছেন। কিন্তু, ওই বিমানের কর্মীর ১৫ই জানুয়ারি কোনো ফ্লাইট না থাকার কারণে তিনি নিজেই বহন করছিলেন। গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার পর তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। 
সূত্র জানায়, ধূর্ত প্রকৃতির জুয়েল ইমিগ্রেশনের আগেই একটি পাওয়ার ব্যাংকের মাধ্যমে বিমানবন্দরের কর্মী আমজাদকে হন্তান্তর করে। কিন্তু সেটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। পরে দু’জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status