ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

‘সময় নেই, সরকারকে যেতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার
২৬ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

সরকারের পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার সহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গতকাল রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।  বিএনপিসহ মিত্র ৫৫টি দল ও জোটের উদ্যোগে কয়েকটি স্থানে এই কর্মসূচি   পালন করা হয়। রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি’র যৌথ উদ্যোগে সমাবেশ করে বিএনপি। অন্যদিকে পৃথকভাবে একই কর্মসূচি পালন করে অন্যান্য দল ও জোটের নেতারা। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলন চলমান থাকবে উল্লেখ করে পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তেল-গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমানো ও ১০ দফার দাবিতে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরামসহ সরকারবিরোধী দলগুলো।  গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের আর সময় নেই। যাওয়ার সময় হয়ে গেছে, এবার যেতে হবে। তারা আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, গণতন্ত্র লড়াইয়ে আমার ভাইদেরকে হত্যা করেছে।

বিজ্ঞাপন
গুম-হত্যা করেছে, আহত করে কারাগারে পাঠিয়েছে। কারাগারে নির্যাতন করেছে। এখন তাদেরকে অবশ্যই ঋণ শোধ করার জন্য যেতে হবে।  ফখরুল বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা করেছিল। 

 আপনারা (আওয়ামী লীগ) ১৯৭৪-৭৫ সালের কথা ভুলে যান কেন। সেদিন চারটি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় বাকশাল গঠন করা হলো। এরপর তথাকথিত বুদ্ধিজীবী তার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও চেতনাকে ধ্বংস করেছে স্বাধীনতা যুদ্ধের দাবিদার আওয়ামী লীগ। ’৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারি তারা গণতন্ত্রের কবর রচনা করেছিল। নতুন প্রজন্ম এ ইতিহাস জানে না। তারা তা মুছে ফেলেছে। কেন গণতন্ত্র হত্যা করেছেন, আওয়ামী লীগের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। উল্টো বলে বিএনপি নাকি গণতন্ত্র নষ্ট করেছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সেদিন আপনাদের একদলীয় বাকশাল কায়েমের প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী, ব্যারিস্টার মঈনুল সরকার থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অনেকে সেই বাকশালের বিরোধিতা করেছিলেন। এমন কি পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন তার পদক প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতো না। তারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে। বাস্তবে করে ঠিক উল্টো। ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মওলানা ভাসানীকে সন্ত্রাসী কায়দায় দল থেকে বের করে দিয়েছিল। এরা সন্ত্রাসী দল।

 বর্তমান সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি’র চলমান আন্দোলন চলতেই থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই আওয়ামী  লীগ সরছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের বন্দি ভাইদের মুক্ত করা, আমাদের নেতা রুহুল কবির রিজভী, মোশাররফ ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ অগণিত বন্দি নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে না পারছি- ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। বিএনপি’র কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ তার নিজেদের ওপরে আস্থা নেই। বিএনপি’র কর্মসূচিতে তাদের ভয় হয়। বিএনপি প্রোগ্রাম করলে না জানি কী হয়ে যাবে। ওই ভয়ে তারা আমাদের কর্মসূচির দিনে প্রোগ্রাম দিয়ে বসে থাকে। বিএনপি আন্দোলন শুরু করেছে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সফল হচ্ছে। প্রতিদিন জনগণ আরও বেশি করে আসছে। সেই জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমাদেরকে অবশ্যই আগামীর দিনগুলোতে সফল হতে হবে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদেরকে জয়ী হতে হবে।  তিনি বলেন, আজকে ৫০ বছর পরে আবারো আমাদের রাজপথে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে হচ্ছে, আমরা গণতন্ত্র চাই, আমার অধিকার চাই, আমার ভোটের অধিকার চাই এবং আমার কথা বলার অধিকার চাই।  ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল’ ঘোষণা নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কোন রাষ্ট্রপতি? যে রাষ্ট্রপতির কোনো ক্ষমতা নেই, সেই রাষ্ট্রপতি? আমরা রাষ্ট্রপতির আসনটাকে খুব সম্মান করি। কারণ যেই থাক, যেই হোক, যে দলই হোক রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কী তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন? তিনি কী আওয়ামী লীগের অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর কথার বাইরে একটা কাজ করতে পারেন? তিনি কী নির্বাচন কমিশন পরিবর্তন করতে পারেন?  একটা আইন পরিবর্তন করতে পারেন? পারেন না।

 সেই কারণে আমরা আমাদের ২৭ দফার মধ্যে পরিষ্কার করে বলেছি যে, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে।  মির্জা ফখরুল আরও বলেন, গ্যাস বিদ্যুতের দাম কমাতে হবে, এরা কমাবে না। তাই এদেরকে সরাতে হবে। তাদেরকে বিদায় করতে হবে। তাদের বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই আওয়ামী লীগ- এরা এমনি এমনি যায় না, এদের সরাতে হবে। আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনের মাধ্যমে এদের সরাতে হবে। আন্দোলন চলমান থাকবে। পঞ্চম ধাপের কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাস, দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ গ্যাস জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো এবং দশ দফা দাবি আদায়ে আগামী ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ঢাকা মহানগর বিএনপি কোথায় কর্মসূচি পালন করবে সে ব্যাপারে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তীতে জানানো হবে। আমাদের নেতাকর্মীদের কারাগারে নিয়েছে- তাদের ঋণ শোধ করতে তাদের চলে যেতে হবে। সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে এদেশের মানুষ সরকারকে বলতে চায়, আপনারা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। আর আজকে গণতন্ত্র নাই বলে দেশে মানবাধিকার নাই। কারণ যেখানে আওয়ামী লীগ সেখানেই গণতন্ত্র হত্যাকারী। আর যেখানে বিএনপি সেখানেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারকারী। তাই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। অন্যথায় এদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে না। বিএনপি’র আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, এই সরকার গুম ও খুন করে  ক্ষমতাকে টিকে থাকতে চায়। 

তাই এখন বিএনপি’র উপর দায় পড়েছে। সুতরাং শুধু স্লোগান দিলে হবে না আজকে এখান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করতে হবে। ঢাকা মহানগর বিএনপি দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর শরাফত আলী সপু, তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।  এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট। জোটের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, সরকার গণতন্ত্র হত্যা করে দেশে বাকশালী শাসন কায়েম করেছে। ১৯৭৫ সালের এই দিনে আওয়ামী লীগ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশে একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিলো। ১৯৭৫ সালে ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।  এদেশের জনগণের আন্দোলনের সামনে আইয়ূবশাহী টিকেনি, শেখ হাসিনাও টিকবে না।

 ‘২৫শে জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার প্রতিবাদে’ যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ করে ১২ দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। জোটের আহ্বায়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এ দেশের মানুষ খেতে পায় না, গ্যাসের দাম প্রতিমাসে বাড়ানো হচ্ছে। চালের দাম সকালে একটা থাকে তো বিকালে আরেকটা হয়। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বিদেশে প্রতিনিয়ত টাকা পাচার হচ্ছে। সেই টাকায় আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী, এমপি, নেতারা দুবাই, সিঙ্গাপুর, বেগমপাড়া ও মালয়েশিয়া বাড়ি কিনছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। সকালে একই স্থানে সমাবেশ করে গণতন্ত্র মঞ্চ।  সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১০ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোটের নেতারা। বুধবার বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ ঘোষণা দেন। এদিকে কর্তৃত্ববাদী সরকার লোপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম একাংশের সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু। বুধবার রাজধানীতে গণফোরাম কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি। ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ-জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status