প্রথম পাতা
পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চীনা দূত
কোনো দেশকে বাদ দিয়ে গড়া জোটে যোগদানে সতর্ক থাকতে হবে
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৪ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবারপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ শেষে ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অভিন্ন উন্নয়নের জন্য সহায়ক এবং বিভাজন বা সংঘাত এড়ানোর জন্য গড়া যেকোনো বৈশ্বিক উদ্যোগে সমর্থন রয়েছে বেইজিংয়ের। এসব উদ্যোগ অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দেশের পক্ষে বা কারও বিরুদ্ধে না হয়ে ‘উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হওয়া জরুরি। অন্যথায় এসব জোটে যোগদানে সকলকে সতর্ক থাকা উচিত। ঢাকায় নবনিযুক্ত চীনা দূত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক উদ্যোগ সম্পর্কে তার মতামত জানতে চান সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- তাও জানতে চান। জবাবে অবশ্য চীনা দূত মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জাহাজের চীন অভিমুখে যাত্রা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, গণমাধ্যমে আমি প্রতিবেদনটি দেখছি। আশা করছি, যেকোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা সাধারণ মানুষ এবং কোনো দেশের সঙ্গে সহযোগিতাকে প্রভাবিত করবে না। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে ‘একতরফা’ নিষেধাজ্ঞা উল্লেখ করে চীনা দূত বলেন, জাতিসংঘ এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ চীনে পণ্য খালাসের খবর জানেন না মন্ত্রী: এদিকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা পতাকাবাহী রুশ জাহাজ ‘উরসা মেজর’ চীনের বন্দরে পণ্য খালাস করার পরিকল্পনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। নবনিযুক্ত চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ দাবি করেন। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সেই রুশ জাহাজের বিষয়ে আলাপ হয়েছে কিনা এবং জাহাজটি চীনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস করতে পারবে কিনা- এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমরা শুধু জানি যে, যেহেতু এটা নিষেধাজ্ঞার জাহাজ, সেজন্য আমরা আমাদের পোর্টে অ্যালাউ করি নাই। মোমেন বলেন, দ্যাটস দ্যা অনলি থিং আই নো। তারপর কোথায় গেল, না গেল আই ডোন্ট নো। বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে আইপিএস নিয়ে কোনো শঙ্কা বা আলোচনা হয়েছে কিনা-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, না। এ সম্পর্কে আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস করতে পারেনি রাশিয়ান জাহাজ। সেজন্য জাহাজটি দক্ষিণ চীনের সায়েনথো বন্দরে (সিএনএসটিজি) পণ্যগুলো খালাস করার কথা রয়েছে। এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সেগুনবাগিচা জানিয়েছে, নতুন রাষ্ট্রদূতকে অভিনন্দন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে চীনের সহায়তার প্রশংসা করেন এবং বিদ্যমান ও পাইপলাইনে থাকা প্রকল্পগুলোর দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়নের প্রত্যাশা করেন। তিনি বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করায় চীন সরকারকে ধন্যবাদ জানান। আশা করেন যে, এই সুবিধা অল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কার্যকর হবে। বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোভিড সহায়তার কথা স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে চীনের অব্যাহত সমর্থন পাওয়ার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জবাবে চীনা দূত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন জরুরি উল্লেখ করে তা দ্রুত শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নয়া দূতের মেয়াদে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অংশীদার। তিনি বলেন যে, চীন আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াবে। বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, সংযোগ, দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা ইত্যাদি সহ পারস্পরিক স্বার্থের দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আন্তরিকভাবে মতবিনিময় করেন। রাষ্ট্রদূত ইয়াও চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সন্তোষ প্রকাশ করেন যার মধ্যে রয়েছে- পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, মোংলা বন্দর উন্নীতকরণ, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সমপ্রসারণ ইত্যাদি। আগামী ১১-১৩ই মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে চীনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রদূত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বাংলাদেশে রাষ্ট্রদূত ইয়াওর সফল মেয়াদ কামনা করেন এবং তার দায়িত্ব পালনে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, রোববার চীনের রাষ্ট্রদূত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি এবং সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।