ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

নির্বাচিত কলাম

সময়-অসময়

পরীমনি-রাজের সংসার ভাঙার গল্পে কার অপরাধ কতোটুকু?

রেজানুর রহমান
৬ জানুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার
mzamin

আগেই বলেছি পারস্পরিক বিশ্বাস হলো একটি সংসারের মূল শক্তি। কাজেই বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সংসার টিকিয়ে রাখা মুশকিল। তবুও কথা থেকে যায়। বিয়ে তো আর ছেলে খেলা নয়। এক বছরেই বিয়ে। এক বছরেই সন্তানের জন্ম। এক বছরেই বিবাহ বিচ্ছেদ। এটা বোধকরি ‘বিয়ে’ নামক শব্দটিকে ছেলেবেলার ‘বিয়ে বিয়ে’ খেলার সেই অভিমানের গল্পের সঙ্গে গেঁথে দেয়া ও ছেলেমি ছাড়া আর কিছুই নয়। আবারো বলি জোর করে সংসার হয় না। তাই বলে ‘যা তোর সঙ্গে আর খেলবো না’ এই মানসিকতায় সংসার ভেঙে দেয়াও ঠিক নয়।

বিজ্ঞাপন
অনেকেই হয়তো বলবেন- প্রতিদিন দেশে অসংখ্য সংসার ভেঙে যাচ্ছে। সেখানে শোবিজের তারকাদের বিয়ে, সংসার নিয়ে এত কথা কেন

 

প্রথম কথা হলো কারও সঙ্গে মতের মিল না হলে লোক দেখানো সংসার করা উচিত নয়। তবে চেষ্টা থাকা উচিত সংসার যেন না ভাঙে। কারণ সংসার হলো একটি মানুষের নিরাপদ ঠিকানা। যে যেখানে থাকি না কেন দিন শেষে সংসারে ফেরার তাড়না সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে সংসার নামক মায়া ও ছায়ার জালে আবদ্ধ হয়েছেন আপনি। সংসার হলো আসলে একটি বিশ্বাস ও পরস্পরকে দেখে রাখার সমঝোতা। যেখানে স্নেহ মায়া মমতার পাশাপাশি শ্রদ্ধাবোধও জরুরি। তবে বিশ্বাস ভেঙে গেলে সংসার টিকে রাখা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। এক অর্থে বিশ্বাসই হলো একটি আদর্শ সংসারের মূল শক্তি। 
আমাদের শোবিজ তারকাদের ঘর ভেঙে যাওয়ার তালিকাটা যেন দিনে দিনে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি তার স্বামী চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের সঙ্গে আর থাকবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের পথ ধরেই হেঁটেছেন চিত্রনায়িকা বুবলী। গোপনে শাকিব খানকে বিয়ে করেছিলেন অপু বিশ্বাস। পেটে সন্তান নিয়ে আড়ালে চলে যান। সন্তান জন্ম দিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা ও সন্তানের স্বীকৃতি পেতে আড়াল ভেঙে প্রকাশ্য হন। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে সন্তানকে কোলে নিয়ে শাকিব খানের সঙ্গে বিয়ে এবং সন্তান জন্মদানের গল্প বলতে বলতে কেঁদে ফেলেছিলেন। এতে একটা লাভ হয়েছে। অপু বিশ্বাস শাকিব খানের স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। যদিও এই স্বীকৃতির মেয়াদ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অপু বিশ্বাসকে ডিভোর্স দেন শাকিব খান। একটি সংসার ভেঙে যায়। 

অপুর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদ পাঠিকা বুবলীর প্রতি আকৃষ্ট হন শাকিব খান। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেমের জালে আবদ্ধ হন। ফলে বলা যায় অপু বিশ্বাসের পথেই পা বাড়ান বুবলী। আবারো গোপন বিয়ে এবং সন্তান ধারণ। সন্তান জন্মের পর বলতে গেলে অপু বিশ্বাসের অনুকরণেই বিয়ে এবং সন্তানের খবর প্রকাশ করেন বুবলী। পার্থক্য শুধু-অপু একটি টিভি চ্যানেলে প্রকাশ্যে তার বিয়ে এবং সন্তান জন্ম দেয়ার গল্প বলেছেন। আর বুবলী আশ্রয় নিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। ফলাফল যেন নির্ধারিতই ছিল। বুবলীকেও স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেন চিত্রনায়ক শাকিব খান। বুবলীর সন্তানকেও নিজের সন্তান বলে স্বীকার করে নেন। কিন্তু অপু বিশ্বাসের মতোই বুবলীরও ভাগ্য নির্ধারিত হয়। শাকিব খানের সঙ্গে সংসার করা হচ্ছে না বুবলীর। পরীমনির সংসার ভাঙার গল্পটা অবশ্য অন্যরকম। অনেকটা রহস্যজনক গল্পের মতো। একই বছরে বিয়ে, একই বছরে সন্তানের জন্ম। একই বছরে ডিভোর্সের প্রস্তুতি। পরীমনি ও রাজের বিয়ের গল্পটা ছোটবেলার ‘বিয়ে বিয়ে’ খেলার মতো। ছোট ছোট শিশুরা বাবা-মায়ের অনুকরণে বিয়ে বিয়ে খেলায় মেতে ওঠে। সকালের বিয়ে বিকালেই ভেঙে যায়। যা তোর সঙ্গে আমি আর খেলবোই না- এই অভিমানের গল্পটাই শিশুদের মাঝে গুরুত্ব পায়। 

বড়বেলায় পরীমনি ও শরীফুল রাজের বিয়ের গল্পটাও যেন একই রকম। গত বছর চিত্রনায়িকা পরীমনি তার অভিনয় সৌকর্যের জন্য যত না আলোচিত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি আলোচিত ছিলেন ব্যক্তিগত নানা ঘটনায়। রাতের অন্ধকারে উত্তরার একটি ক্লাবে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাহাসে জড়িয়ে যাওয়ার ঘটনায় কারাগারে যান পরীমনি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো- কারাগারে যাওয়ার সময়ও ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছেন। আবার ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েই কারাগার থেকে বের হয়েছেন। 

কারামুক্তির পরই পরীমনি হঠাৎই তার নতুন বিয়ের কথা প্রকাশ করেন। চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে বলে দাবি করেন। বিয়ের ঘোষণা দেয়ার কয়েকদিন পরই খবর রটে যায় পরীমনি মা হতে যাচ্ছেন। শুরু হয় নানান ধরনের ‘কানাঘুষা’। হিসাব মতে পরীমনির এটি ছিল ৪র্থ বিয়ে। এর আগের ৩টি বিয়ের স্থায়িত্ব বেশি দিন ছিল না। পরীর ৪র্থ বিয়ের ব্যাপারে তার ভক্তরা বেশ আশাবাদী হয়। এবার নিশ্চয়ই এই বিয়েটা টিকবে। কারণ আগের বিয়েগুলোতে পরীমনি সন্তান জন্ম দেননি। এবার যেহেতু নতুন সংসারে সন্তান এসেছে, সন্তানের মায়ায় এই বিয়েটা হয়তো টিকে যাবে। পরীমনি নিজেই তার ফেসবুক ওয়ালে স্বামী শরিফুল রাজের সঙ্গে অন্তরঙ্গ ছবি পোস্ট করতে থাকেন। ছবিগুলোর মাধ্যমে বোধকরি তিনি প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, দ্যাখো আমরা কতো সুখি দম্পতি। কিন্তু ছবির গল্প আর বাস্তব জীবনের গল্প তো এক নয়। বিয়ে, সন্তানের জন্ম... এক বছর যেতে না যেতেই ঘর ভাঙার ইঙ্গিত দিলেন পরীমনি। নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখলেন, রাজের সঙ্গে আমার আর এক সঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। 

কেন রাজের সঙ্গে থাকা সম্ভব হচ্ছে না পরীমনির? এর একটা কারণ স্পষ্ট। পরীর ধারণা চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিমের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রয়েছে রাজের। কেন এই ধারণা হলো? তার ইঙ্গিতও দিয়েছেন পরীমনি। সাম্প্রতিককালে একটি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ ও বিদ্যা সিনহা মিম। অভিনয়ের প্রয়োজনে তারা অন্তরঙ্গ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন। ছবিটির প্রচার কার্যক্রমে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে ছবি তুলেছেন। এই নিয়ে পরী আর রাজের মধ্যে সাংসারিক দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। পরীর ধারণা শরীফুল রাজ নতুন করে মিমের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছে। স্বামী শরিফুল রাজ নাকি স্ত্রী পরীমনির গায়ে হাতও তুলেছেন। এই যদি হয় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তাহলে তো সংসার টিকে থাকার কথা নয়। ফলে যা হওয়ার বোধকরি তাই হচ্ছে। পরীমনি প্রচার মাধ্যমে বলেছেন, তিনি তালাক নোটিশ পাঠাবেন শরীফুল রাজের কাছে। পাশাপাশি শরীফুল রাজ বলেছেন, আর কোনো সমঝোতার সুযোগ নাই। আমি কিছুদিন একা থাকতে চাই। 

আগেই বলেছি পারস্পরিক বিশ্বাস হলো একটি সংসারের মূল শক্তি। কাজেই বিশ্বাস ভঙ্গ হলে সংসার টিকিয়ে রাখা মুশকিল। তবুও কথা থেকে যায়। বিয়ে তো আর ছেলে খেলা নয়। এক বছরেই বিয়ে। এক বছরেই সন্তানের জন্ম। এক বছরেই বিবাহ বিচ্ছেদ। এটা বোধকরি ‘বিয়ে’ নামক শব্দটিকে ছেলেবেলার ‘বিয়ে বিয়ে’ খেলার সেই অভিমানের গল্পের সঙ্গে গেঁথে দেয়া ও ছেলেমি ছাড়া আর কিছুই নয়। 
আবারো বলি জোর করে সংসার হয় না। তাই বলে ‘যা তোর সঙ্গে আর খেলবো না’ এই মানসিকতায় সংসার ভেঙে দেয়াও ঠিক নয়। অনেকেই হয়তো বলবেনÑ প্রতিদিন দেশে অসংখ্য সংসার ভেঙে যাচ্ছে। সেখানে শোবিজের তারকাদের বিয়ে, সংসার নিয়ে এত কথা কেন? কথা এই জন্য যে, তারকাদের জীবনের গল্প অনেকেই অনুসরণ করেন। তারকারা যা করেন তাই করতে চান। সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে একটি কথা আছে। একজন তারকার উচিত এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখা। 

আমাদের দেশেই তারকাদের সংসার জীবনের অনেক মধুর গল্প আছে। নায়করাজ রাজ্জাক তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। জনপ্রিয়তার আকাশ সীমায় উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গত কারণেই তাকে ঘিরে প্রেমের গুঞ্জনও ছিল ব্যাপক। কিন্তু সংসারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। চিত্রনায়িকা শাবানা সংসারকেই বেশি প্রাধান্য দিতেন। শুটিং শেষ হওয়া মাত্রই বাসায় ছুটে যেতেন। নায়ক ফারুক, সোহেল রানা, নায়িকা কবরী, ববিতা, চম্পা অভিনয়ের পাশাপাশি সংসারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন এবং দিতেন। জীবদ্দশায় নায়করাজ রাজ্জাক এক সাক্ষাৎকারে প্রসঙ্গক্রমে বলেছিলেন, আমরা যে যাই করি, একটা কথা মনে রাখবেন সংসারই হলো আসল, কারণ দিন শেষে সংসারেই আপনাকে ফিরতে হবে। অভিনয় শিল্পীদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছিলেন, আমরা যারা অভিনয় করি তারাও তো মানুষ। কাজেই আমাদেরও ভুল হয়, হবে। তবে সংসার সাজাতে কখনো ভুল করা ঠিক নয়। কারণ তারকাদের দেখেই সাধারণ মানুষ শেখে।

 

নির্বাচিত কলাম থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

নির্বাচিত কলাম সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status