শরীর ও মন
গর্ভাবস্থায় পায়ুপথের রোগ হলে
অধ্যাপক ডা. এসএমএ এরফান
২০ এপ্রিল ২০২২, বুধবার
গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের পায়ুপথের সমস্যা হয়ে থাকে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে মা ও শিশু উভয়ই ঝুঁকি মুক্ত ও সুস্থ থাকতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ুপথের সমস্যাগুলো?
জরায়ুতে স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা হলে তখন পাশের অঙ্গগুলো (কোলোন, রেকটাম ও পায়ুপথের অংশগুলো আছে) সেগুলোর ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও আছে কিছু হরমোনাল সমস্যা। এ দু’টো বিষয় মিলে সাধারণত পায়ুপথের সমস্যাগুলো তৈরি হয়। এরমধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যাটি অন্যতম। কারণ বিভিন্ন ইসট্রোজেন এবং প্রজেস্টেরনের প্রভাবে কোলোনের মোটিলিটি কমে যায়। আর এর ওপর যখন সরাসরি ফ্লাস ট্রাইমিস্টারে চাপ দেয় রেক্টামের ওপর, স্বাভাবিকভাবে সেখানে একটা ফাংশনাল অবসট্রাকশনের মতো তৈরি হয়। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিশ্চিতভাবে বেড়ে যায়। দ্বিতীয় হচ্ছে ওখানকার ভেনাস প্লেকসাসগুলোর উপরে চাপ দেয়, চাপ দেয়ার ফলে সেখানে পাইলস হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি, যাকে প্রেগনেন্সি পাইলস বলা হয়। আর যাদের আগে থেকে পাইলস আছে তাদের সেই প্রকোপ গর্ভাবস্থায় বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য মলত্যাগের সমস্যা হয়ে অনেক সময় এনাল ফিসারও হতে পারে। কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে যে ঘর্ষণ বা চাপ হয় সে জন্য জায়গাটা ফেটে গিয়ে এনাল ফিসার হতে পারে। তারপর চাপ দিয়ে তাকে মলত্যাগ করতে হয়। এই চাপের কারণে রেক্টাল প্রোলাপসও এই সময়ে হতে পারে। এগুলোই সাধারণত প্রচলিত পায়ুপথের সমস্যা যেগুলো গর্ভাবস্থায় হয়ে থাকে।
চিকিৎসা:
গর্ভাবস্থায় প্রথম পরামর্শ হবে তার (বাউয়েল হেবিট) অন্ত্রের অভ্যাস যেন স্বাভাবিক রাখে। তার স্বাভাবিকভাবেই প্রবণতা হচ্ছে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া। এই কোষ্ঠকাঠিন্য না হওয়ার জন্য খাবার দাবার ও ওষুধ দিয়ে অন্ত্রকে স্বাভাবিক রাখতে হবে। তাহলে সেখানে চাপটা কম পড়বে। পাইলস হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও কমে যাবে। গর্ভাবস্থায় মায়ের রক্ত ঝরলে সেখান থেকে শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই অবস্থায় মাকে অবশ্যই একজন কোলোরেক্টাল সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে। প্রথমে যদি কোনো ওষুধপত্রের মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে নিয়ন্ত্রণ করবেন। এসব পাইলসের একটা সুবিধা হলো অনেকগুলো গর্ভাবস্থায় চলে যায়। যেহেতু তখন জরায়ুর চাপটা আর থাকে না, তাই কমে যায়। আর যদি খুব বেশি রক্তপাত হয়, ওষুধপত্রের মাধ্যমে ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে অস্ত্রোপচার করে নিতে হবে। আর এখন অস্ত্রোপচারগুলো অত্যন্ত নিরাপদ। কারণ রক্তপাত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একজন মায়ের জন্য। আর যাদের আগে থেকে পাইলস রয়েছে সেক্ষেত্রে উত্তম হলো গর্ভধারণের আগে এর চিকিৎসা করিয়ে নেয়া। আর যদি ওষুধ খেয়ে ভালো থাকে তাহলে পরবর্তীকালে দেখতে হবে কোনো অস্ত্রোপচারে না গিয়ে নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায় কিনা। গর্ভাবস্থায় পাইলস প্রচুর পরিমাণ রক্তক্ষরণ হতে পারে। এখানে থ্রোম্বোসিস, গ্যাঙরিন হতে পারে। রক্তক্ষরণ হলে সেটা মা এবং শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তশূন্য হয়ে এনিমিক হয়ে যাবে। একিউট ব্লাডস (স্বল্প সময়ের রক্তক্ষরণ) অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এনিমিয়ার বাইরেও রক্তে সঞ্চালনের সমস্যা হবে। শিশু কম রক্ত পাবে, কম অক্সিজেন পাবে।
আর যদি ইনফেকশন বা গ্যাঙ্গরিন হয় তবে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে যেতে পারে। মা এবং শিশুর জন্য সেটা ঝুঁকিপূর্ণ। সময়ের আগে প্রসব, মিসক্যারেজ এগুলো হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে।
গর্ভবতী মায়ের খাবার:
সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য হয় আঁশ জাতীয় খাবার না খাওয়ার কারণে। তাই আঁশ জাতীয় খাবার খেতে হবে। ওষুধ খেতে হবে যাতে পায়খানা নরম হয়। এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে গর্ভধারণের সময় সব ধরনের ওষুধ প্রযোজ্য নয়। যে ওষুধগুলো শরীরে শোষণ হবে না, শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে বিঘ্নিত করবে না শুধু সেই জিনিসগুলোই তার জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে নিরাপদ ওষুধ হলো মিল্কোম্যাগনেশিয়া। এগুলোর তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গর্ভাবস্থায় কোনো ওষুধ খাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। এ সময় পানি বেশি খেতে হবে।
লেখক: পথিকৃৎ কলোরেক্টাল ও হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন, বাংলাদেশ।
চেম্বার: পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ (শ্যামলী শাখা), মিরপুর রোড, মোহাম্মদপুর (কিডনি হাসপাতালের বিপরীতে)।
হেল্পলাইন: ০১৮৬৫৫৫৫৫১১, ০১৮৬৫৫৫৫৫০০
ফেইসবুক: Prof.Dr.SMA Erfan.