ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

ত্বকের তারুণ্যতায় এন্টি এজিং ট্রিটমেন্ট

ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
১৮ মে ২০২২, বুধবার
mzamin

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারুণ্যের তারতম্য ঘটে। কিন্তু তারুণ্য হলো একটি চির সবুজ শব্দ। যা মনের মাঝে দোলা দেয়। ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য সৌন্দর্যপ্রেমীরা কত কিছুই না করে থাকেন। বিষয়টি একেবারে যে নতুন তা কিন্তু নয়। সৃষ্টির আদিকাল থেকেই সৌন্দর্যপ্রেমীরা তারুণ্য ধরে রাখার জন্য কত কিছুই না করতেন। আর এসব সৌন্দর্য চিকিৎসায় কেমিক্যাল পিলিংতো প্রাচীন মিশরীয় রানীদের ব্যবহৃত পদ্ধতি। ত্বকের সৌন্দর্যের জন্য বিউটি পার্লার পদ্ধতি, অ্যারোমা থেরাপি বা ভেষজের বদলে বর্তমানে ডার্মাটোলজি বা অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসকরা চিকিৎসানির্ভর বিভিন্ন থেরাপি, সূচ বা শল্য চিকিৎসা করে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার একে এন্টি এজিং ট্রিটমেন্ট বলে থাকেন। আর আশার কথা হলো বর্তমানে সৌন্দর্য বর্ধনে এসব অ্যায়েসথেটিকস চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকেই সচেতন ও আগ্রহী হচ্ছেন। 

সাধারণত বয়স বাড়তে থাকলে বলিরেখা পড়াটা স্বাভাবিক ঘটনা।

বিজ্ঞাপন
তবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান অনেকেই। তাই চেহারায় টান টান লাবণ্য ধরে রাখতে চাইলে যত্ন নিন এবং কিছু কিছু ট্রিটমেন্ট আপনার বয়সের ছাপকে তারুণ্যতায় ভরে দিবে। আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য যেহেতু ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে এন্টি এজিং ট্রিটমেন্ট তাই এন্টি এজিং ট্রিটমেন্টগুলো কি? কত বছর বয়স থেকে বয়সের ছাপ দেখা যায় এর চিকিৎসা পদ্ধতি কি- এসব কিছু তুলে ধরতে চাই। 

মূলত এজিং প্রসেস কত বছর থেকে শুরু হয় প্রশ্ন করা হলে এর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিতে হয়। সত্যিকার অর্থে এজিং প্রসেস একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। শরীরের স্বাভাবিক গঠন যেহেতু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয় ঠিক এজিং প্রসেসটা একইভাবে হয়ে থাকে। সাধারণত ২৫ বছর বয়স থেকেই ত্বকের ভেতরে  ভেতরে এজিংয়ের পরিবর্তনটা দেখা দেয়। তবে ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সে ত্বকের পরিবর্তনটা তেমন লক্ষণীয় হয় না, কারণ এ সময়ে পরিবর্তনটা ধীরলয়ে হয়। তবে ৩০ বছর বয়সের পর থেকে পরিবর্তনটা আরও বেশি লক্ষণীয় হয় এবং বয়সের ছাপ চলে আসে। এজিং প্রক্রিয়াটা কয়েকটি কারণে হয়ে থাকে। তারমধ্যে পরিবেশগত, জেরিয়েট্রিক বা বয়সজনিত কারণ, জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি সহ নানা কারণে এজিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়ে থাকে। পরিবেশগত কারণের মধ্যে সূর্যালোক। বিশেষ করে সূর্যালোকে আলট্রাবায়োলেট Aএবং B থাকে। যা আমাদের দেহের ত্বকের মধ্যে প্রবেশ করে ত্বকে এজিং প্রসেস বা প্রক্রিয়া শুরু করে। আমাদের দেহে এজিং প্রসেস শুরু হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় রিসোর্স হলো খাদ্যাভ্যাস। এখান থেকেই ত্বকে ইলাস্ট্রিক, হাইড্রোলিক এসিড এসব প্রয়োজনীয় উপাদান পায় এবং ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। আবার সূর্যালোক থেকে ত্বকে গ্রহণ করা আলট্রা ভায়োলেট রেডিয়েশন কিন্তু আমাদের দেহে সেই খাদ্যাভ্যাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রমকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এ জন্য যে ব্যক্তি বেশি সূর্যালোকে থাকে এবং সূর্যালোক থেকে বাঁচতে কোনো প্রটেক্সশন বা প্রতিরোধী ব্যবহার করে না তাদের এজিং প্রক্রিয়াটাও দ্রুত হয়ে থাকে। পরিবেশগত ভাবেও বায়ুদূষণ যেমন ত্বকের জন্য দায়ী আবার চর্মে অ্যালার্জি এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিভিন্ন কসমেটিক্সের ব্যবহার ও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় ত্বকের এজিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। যারা বিভিন্ন কারণে ত্বকে মেকআপ ব্যবহার করে থাকেন তাদের ত্বকের এজিং প্রতিরোধে বাড়তি যত্ন নিতেই হবে। প্রতিদিন বাইরে থেকে এসে বাসায় নিয়মিত ভালোমানের ক্লিনজিং দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। 

এজিংয়ের জন্য আমাদের শরীরে জেরিয়েটিকেলি যেটি হয় তা হলো ২৫ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের ত্বকের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আমরা জানি যে, আমাদের শরীরের অস্টিও প্লাস নামে এক ধরনের সেল থেকে শরীরের বোন গঠন করে। সেই অস্টিও প্লাসের কার্যক্ষমতাও একটু একটু করে বাড়তে থাকে এবং যার জন্য আমাদের শরীরের বোন বা হাড় ক্ষয় হতে থাকে। ফলত: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চিপের হাড়গুলো ধীরে ধীরে ডিপেস্ট হয়, ফ্যাট কমে গিয়ে একটু ঝুলে যায়। যা অনেক ক্ষেত্রে বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হতে সহায়তা করে। আবার এটি অনেক সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণেও হয়ে থাকে। সাধারণত পুরুষ ও মহিলাদের উভয় ক্ষেত্রে একই বয়সে এজিং প্রক্রিয়াটা শুরু হয়। কিন্তু লক্ষণীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ হরমোনাল ইস্ট্রোজেন সব সময় মহিলাদের নিয়ন্ত্রণ করে এবং ফেটের স্ট্রাকচারকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যা ফেটের স্বাভাবিক গঠনকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন কমতে থাকে বিশেষ করে যখন মনোপোজ আসে তখন ইস্ট্রোজেন কমে যায়। সেই জন্য মহিলাদের বয়স ৪০-এর পরপরই পুরুষের তুলনায় বয়সের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় এবং এস্ট্রোজেন হরমোন এর জন্য দায়ী। আমরা এক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করে থাকি। যাতে শরীরে ফ্যাট কম হয়। প্রতিদিন আমাদের শরীরে শরীর বৃত্তীয় কর্ম হচ্ছে সেই জন্য ত্বকের স্বাভাবিক  কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া আরও কিছু কারণ আছে যার জন্য এজিং প্রসেসটা দ্রুত হচ্ছে। যেমন- বিভিন্ন রোগ-বালাই, দীর্ঘ মেয়াদি ডায়াবেটিস বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, কোনো ধরনের কানেকটিভ ডিস অর্ডার আছে তাদের শরীরে কোলাজেন ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে অন্যদের তুলনায় এসব ব্যক্তিদের বয়সের ছাপটা দ্রুত চলে আসে। 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক (সাবেক) চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, ঢাকা। 
প্রয়োজনে-০১৭১১৪৪০৫৫৮

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status