ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

সাংবাদিক শিরীন হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের যে দ্বিচারিতা দেখেছে বিশ্ব

অ্যান্ড্রু মিত্রোভিকা

(১ বছর আগে) ১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার, ২:৩৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:২০ অপরাহ্ন

mzamin

আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহর মুখে গুলি করা হয়েছিল। হাতে বা পায়ে নয়। তাকে গুলি করা হয়েছিল মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই। সত্যি বলার অপরাধে তাকে মারা হয়েছে। দশকের পর দশক ধরে ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের যেভাবে নির্যাতন করছে, অভিযান চালাচ্ছে, জেলে ভরছে এবং হত্যা করছে তাই তুলে ধরছিলেন শিরীন। তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে এই সত্যি বলার দায়িত্ব কাধে নিয়েছিলেন এবং নিজের দায়িত্বটা ভাল ভাবেই পালন করেছিলেন। সকল ভয়ভীতি ও হুমকি দূরে ঠেলে দিয়ে তিনি সাংবাদিকতা করে গেছেন। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি নির্যাতনের সাক্ষ্য হওয়াও তার দায়িত্বের মধ্যে পরে। আর তা করতে গিয়েই তাকে প্রাণ হারাতে হলো। 
প্রতিদিন ফিলিস্তিনিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেঁচে থাকেন। তাদেরকে হত্যা করা হয় শুধুমাত্র তারা ফিলিস্তিনি বলে।

বিজ্ঞাপন
তারা গাজায় থাকেন না জেরুজালেমে তাতে কিছু যায় আসে না। তারা যে পেশায়ই থাকুক না কেনো, তাদের জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই। তারা বৃদ্ধ না তরুণ, নারী না পুরুষ কিছুতেই মৃত্যু আটকায় না। শিরীনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।

তাকে যখন গুলি করা হয় তখন তিনি হেলমেট এবং ভেস্ট পরা ছিলেন। তাতে বড় করে লেখা ছিল ‘প্রেস’। তার পরিচয় জানতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা ছিল না। তারপরেও তাকে গুলি করা হয়। তার আরেক সহকর্মীর পিঠে গুলি লাগে। শিরীনের মরদেহ রাস্তার ধারে পরে ছিল। তার সহকর্মীরা তাকে ইসরাইলি স্নাইপারের নিসানা থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, সাহায্য চান। আরেকটি সাধারণ দিন এবং একজন ফিলিস্তিনির মৃত্যু। 

যদিও শিরীনের মৃত্যু আর দশজন ফিলিস্তিনির মতো গণমাধ্যমের চোখ এড়ায়নি। কারণ তিনি ছিলেন বিখ্যাত। তাকে মানুষ টেলিভিশনে দেখে পরিচিত। তাই ইউরোপ ও আমেরিকায় তার মৃত্যুর খবর প্রচারিত হয়েছে। তবে এ জন্য সবথেকে বেশি যেটি ভূমিকা রেখেছে তা হলো শিরীন আবু আকলেহ একজন আমেরিকান নাগরিক। মূলত এ কারণেই তার মৃত্যুকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছে পশ্চিমা বিশ্ব। তার হত্যাকারী হয়তো জানতো না শিরীন মার্কিন নাগরিক। তাহলে হয়তো বিষয়টি আলাদা হতে পারতো। 

২০০০ সাল থেকে প্রায় ৪৬ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র কখনো তা নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা তোলেনি। ২০১৮ সালের পর থেকে ১৪৪ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ইসরাইলি নির্যাতনের শিকার হয়েছে কিন্তু তার নিন্দায় কখনো যুক্তরাষ্ট্রকে পাওয়া যায়নি। এর কারণ, তারা কেউ মার্কিন নাগরিক ছিলেন না। অর্থাৎ, তারা আসলে কেউ না। তাদেরকে ভুলে যাওয়াই যেনো স্বাভাবিক ব্যাপার। এরমধ্যে তারা ছিলেন ফিলিস্তিনি, তাদেরতো মানুষই ভাবা হয় না। তাই তাদের মৃত্যু নিয়ে দেখা দেখির কিছু নেই, এর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর অভাব নেই। 

কিন্তু এবার মার্কিন রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিকরা বিষয়টিকে এড়াতে পারছেন না। তারা এ নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করেছেন এবং তদন্তের জন্য ইসরাইলকে চাপ দিয়েছেন। এটুকু তাদের না বলে উপায় ছিল না। যদিও তারা আসলে মন থেকে ইসরাইলকে বিব্রত করতে চাননি। কিন্তু একজন মার্কিন সাংবাদিককে হত্যার পর তা নিয়ে কথা না বললে ভাল দেখায় না। তাই যতখানি না বললেই নয়, ততটুকু প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে এসেছে। আমরা সবাই জানি, যুক্তরাষ্ট্র শিরীনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না। কারণ, তার আমেরিকান পাসপোর্ট থাকতে পারে কিন্তু তিনি তো আর সত্যিকারের আমেরিকান নন। তিনিতো ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের মতো সত্যিকারের সাংবাদিক নন। ড্যানিয়েল পার্লের হত্যাকাণ্ড তাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিরীন হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাদের দায় সাড়া প্রতিক্রিয়াই অনেক। 

মার্কিন কূটনীতিকরা এমন ভাব করছেন যেনো তারা আসলেই শিরীনের মৃত্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন। অথচ তারা চাইলেই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সবথেকে বন্ধু রাষ্ট্রটিকে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের উপরে গুলি না করার জন্য চাপ দিতে পারতো। কিন্তু না, তারা সেটি করেননি এবং করবেনও না। তারা এখন এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন, দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। এখন ইউক্রেনের দিকে মনোযোগ দেয়া যাক। 

মার্কিন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি টুইটারে লিখেছেন, সাংবাদিক শিরীন আবু আকলেহর হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বড় একটি ট্রাজেডি। কিন্তু কীভাবে? একজন সাংবাদিককে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, এটি একটি ট্রাজেডি হয় কীভাবে! এটি একটি অপরাধ। কিন্তু তারা সেটি বলবেন কেনো? তারাতো জানেন, ইসরাইলি সেনারা অপরাধ করতে পারে না।

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status