ঢাকা, ২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
১৭ মে ২০২২, মঙ্গলবার

নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, সরকার ৬.২২ শতাংশের যে মূল্যস্ফীতির কথা বলছে, বাস্তবতার সঙ্গে তার আদৌ মিল নেই। এমনকি এ তথ্য বিজ্ঞানসম্মতও নয়। ধারণা করা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। সোমবার ‘বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রত্যাশা’- শীর্ষক একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে তিনি মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন। কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডি’র অপর বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ-এর পরিবেশ, জলবায়ু ও সবুজ অর্থনীতি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা হক। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ এতে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
দেশের বেকার যুবকদের অন্তত ১০ শতাংশকে (প্রায় ৬ লাখ ৬৯ হাজার) সরকারের নিরাপত্তা বেষ্টনী উদ্যোগের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান দামের সঙ্গে মোকাবিলা করতে সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকায় সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে তারা। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের জন্য ন্যূনতম ১ হাজার টাকার ভাতা নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১.৩৪ শতাংশ) বরাদ্দ করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সরকার মূল্যস্ফীতির কথা ৬ শতাংশের ওপরে বলে থাকে, যেটি প্রকৃত বাস্তবতার সঙ্গে আদৌ মিলে না।

বিজ্ঞাপন
বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেশি। যেমন- ভোজ্য তেল ও পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৬১ শতাংশের ওপরে। আটা-ময়দার মতো পণ্যের দামও ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে মোটা চালের দাম বাড়েনি। কিন্তু মাঝারি বা সুগন্ধি চালের দাম অনেক বেড়েছে। সার্বিকভাবে তেল, ডাল, ডিম, মুরগি ও মাছসহ ইত্যাদি পণ্যের দাম বাড়ার যে হার দিচ্ছে টিসিবি, তা বিবিএস’র দেয়া তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গেও মিলে না। বিবিএস মুদ্রাস্ফীতির যে তথ্য দিচ্ছেন, তা বাস্তবসম্মত নয়, এমনকি বিজ্ঞানসম্মতও নয়।
আমাদের ধারণা, মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আগামী দিনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বিশ্ববাজারে যে পণ্যের দাম বেড়েছে, সেই পণ্য এখনও দেশের বাজারে আসেনি। সেগুলো যখন আসবে, তখন নিত্যপণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে।
ড. দেবপ্রিয় তার প্রতিবেদনে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, অপরদিকে টাকার মূল্যমান কমে যাচ্ছে। যেকোনো অর্থনীতির ভেতরে সুদের হার, বিনিময় হার ও মূল্যস্ফীতির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। একদিকে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, আবার অপরদিকে টাকার মান অবনমন হচ্ছে। যে প্রত্যাশায় সুদের হার কম রাখা হচ্ছে, সেই বিনিয়োগ কত কয়েক বছরে বেড়েছে, এমন কোনো তথ্য নেই। সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে এমন সূত্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য নয়।
তিনি বলেন, এখন টাকার আমানতে গড় সুদের হার ৪.৪ শতাংশ। কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৬.২২ শতাংশ। অর্থাৎ, ব্যাংকে টাকা রাখলে প্রতি বছর প্রকৃত মূল্য দুই শতাংশ করে কমে যাবে। এটা বড় ধরনের সঞ্চয়বিরোধী। আগামীতে টাকার মান অবশ্যই নিম্নমুখী হবে। অবশ্যই সুদের হার বাড়াতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিকে ধরে রাখতে হলে, মূল্যস্ফীতিকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ, তাদের আয় পণ্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে না। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভেতরে বড় ধরনের টানাপোড়ন দেখা দিয়েছে। বিগত বছরে আমাদের আর্থিক যে আয়-ব্যয়ের হিসাব রয়েছে, তা সব সময়ই দুর্বল ছিল। দুর্বলতার লক্ষণ হচ্ছে আমাদের কর জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। একইসঙ্গে উন্নয়ন ব্যয়ের চেয়ে পরিচালন ব্যয় বা অপারেটিং ব্যয় অনেক বেশি। দেশে কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা হলো- একদিকে অর্থের অভাব, অপরদিকে সম্পদ থাকলেও তা যথোপযুক্তভাবে খরচ করতে না পারা। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে আসছে উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, একটি বিষয় লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকেই কমার ধারা শুরু হয়েছে। আমাদের বর্তমানে যে মজুত আছে, তা দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।
বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য যদি আরও বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের টান পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজার স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার ছাড়ার সক্ষমতা থাকছে না। এর ফলে টাকার পতনের ধারা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে টাকা ও ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের পার্থক্য হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সামপ্রতিককালে সরকার পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো অনুচিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষায় এডিপি বাস্তবায়নের হার কম উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, যেখানে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৪১ শতাংশ, সেখানে ওই তিন খাতে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৫ শতাংশের নিচে। এই কমের হার গত বছরের ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। মানে আরও কমেছে। গরিব, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সঞ্চয় কমে যাচ্ছে জানিয়ে সিপিডি’র এই বিশেষ ফেলো বলেন, এ কারণে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা করা উচিত। এর পাশাপাশি প্রান্তিক ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ প্রণোদনা রাখতে হবে। সুরক্ষাভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি। আগামী দিনে ভর্তুকি ও পিছিয়ে পড়া মানুষের প্রণোদনা অব্যাহত রাখা কঠিন বিষয় হয়ে যাবে। ভর্তুকির টাকা যেন মেগা প্রকল্পের খাতে ব্যয় না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, এক সময় ছিল তথ্যের নৈরাজ্য, এখন তথ্যে বন্ধ্যত্ব বা অন্ধত্ব চলছে। এর ফলে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status