ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

মমতাজ কেন ওএমএস’র লাইনে?

নাজমুল হুদা
২ ডিসেম্বর ২০২২, শুক্রবার
mzamin

মমতাজ বেগম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। কথা বলেন জিরিয়ে জিরিয়ে। হাঁটা-চলা করেন গুটিগুটি কদম ফেলে। তার বয়স ৮৫ বছর। শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। তিন দিন ধরে অসুস্থ। জ্বর। এরপরও  ওএমএসের লাইনে দাঁড়িয়েছেন। আড়াই ঘণ্টা পর পাঁচ কেজি চাল পেয়েছেন।

বিজ্ঞাপন
চালের ভারী ব্যাগ ফুটপাথে রেখে      জিরিয়ে নিচ্ছেন। মমতাজ বলেন, জ্বর-শরীর ব্যাথা। তিন দিন ধইরা কানে ব্যাথা। তাও আসতে হইলো চাল নিতে। ছেলের বউ দুই বেলা মানুষকে ভাত খাওয়ায়। তার পাক করা লাগে। আসতে পারব না। আমার কোনো কাম নাই। সকালেই চলে আসছি। এহন চাল পাইলাম। বৃদ্ধ বয়সেও কষ্ট তার পিছু ছাড়ছে না। স্বামীকে হারিয়েছেন তিন যুগ আগে। দুই সন্তানের মধ্যে একজন বেঁচে আছেন। অন্যজন পরিবার রেখে স্ট্রোকে মারা গেছেন। এখন তার বিধবা স্ত্রী ও দুই নাতির সঙ্গে থাকেন মমতাজ। ছেলে মারা যাওয়ার পর ছেলের বউ একটি গার্মেন্টেসে কাজ করতেন। বেতন পেতেন ১২ হাজার টাকা। দুই মাস ধরে তিনি বেকার। এখন চারজন মানুষকে বাসায় দুই বেলা ভাত খাওয়ান। বিনিময়ে প্রতিদিন ৪০০ টাকা পান। তা দিয়েই কোনো রকম পরিবার নিয়ে বেঁচে আছেন। মমতাজ বলেন, এখন তো বউয়ের গার্মেন্টেসে কাম নাই। 

অনেক টাকা ঘরভাড়া দেয়া লাগে। বাজার খরচ লাগে। ধার করে চলতে হয়। খুব কষ্টে আছি। নইলে কি এখানে চাল নিতে আসি।  রাজধানীর মুগদা প্রধান সড়কে মিনারা আক্তার গিয়েছিলেন ওএমএসের চাল কিনতে। তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়েও লাইনের অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছান। তার সামনে অসংখ্য মানুষ। শেষ অবদি চাল পাবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছেন। মিনারা বলেন, রোদের মধ্যে এতক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে যদি চাল না পাই তাহলে সময়টাই নষ্ট হয়। কম কষ্ট থেকে এখানে চাল নিতে আসি নাই। যারা আসছে সবাই কষ্ট করে চলে। নইলে পাঁচ কেজি চালের জন্য কেউ আসতো না। মিনারা জানান, তার স্বামী মারা গেছেন। পরিবারে তিনি ও চার সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে হেলাল টাইলসের কাজ করে। বাকিরা সবাই অনেক ছোট। হেলাল কাজ করে প্রতিদিন ৪০০ টাকা পান। তাও মাসে ২০ দিনের মতো কাজ হয়। এই আয়ের তাদের পাঁচজনের সংসার চালাতে হয়। তবে তাতে হিমশিম খেতে হয় মিনারাকে। তাই সবসময় ওএমএস থেকেই চাল কিনেন তিনি। মিনারা বলেন, ট্রাক থেকে চাল নিতে চাইলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা লাগে। ধাক্কাধাক্কি করা লাগে। এখান থেকে চাল নেয়া অনেক কষ্ট। যদি সামর্থ্য থাকতো তাহলে এখানে আসতাম না। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিম্নআয়ের মানুষকে বাধ্য করছে ট্রাকসেল থেকে চাল নিতে। তাই নিয়মিত ওএমএসের লাইনে মানুষের ভিড় বাড়ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। চাল না পেয়ে অনেকেই কষ্ট চেপে খালি হাতে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। ভ্যানচালক কবির মিয়া বলেন, বাজারে এখন চালের কেজি ৭০ টাকার বেশি। আমার মতো গরিব মানুষের সেই চাল কিনে খাওয়া সম্ভব না। তাই ট্রাকের চাল নিতে আসছি। পাঁচ কেজি চালে যেই টাকা বাঁচব তা দিয়া বাজার খরচ হইয়া যাইবো। সামান্য টাকা বাঁচলে তাই লাভ।  দিনমজুরের কাজ করেন আজিজুল ইসলাম। গতকাল কোনো কাজে ডাক পরেনি তার। তাই ট্রাক থেকে চাল কিনতে গিয়েছেন। তবে দীর্ঘ লাইন দেখে চাল না কিনেই ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। আজিজুল বলেন, লাইনে অনেক ভিড়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম। মানুষের ধাক্কাধাক্কি, রোদ। তাই চলে আসছি। এত ভিড়ের মধ্যে লাইনে দাঁড়ানো সম্ভব না। তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন আয়শা বেগম। তবে তিনি ট্রাকের সামনে আসতে আসতে চাল বিক্রি শেষ হয়ে গিয়েছে। চাল না পেয়ে আক্ষেপ করে আয়শা বলেন, ধাক্কাধাক্কি করে মানুষ সামনে থেকে নিয়ে যায়। আমরা লাইনে দাঁড়িয়ে নিতে পারি না। কম টাকায় চাল নিতে পারলে বাকি টাকা দিয়ে দোকান থেকে ডাল কিনে নিয়ে যেতাম। কিন্তু এতক্ষণ দাঁড়িয়েও পাইলাম না। ট্রাক চলে গেছে।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status