ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

স্থানীয় রাজনীতির হালচাল- ৩

গাজীপুরে অবস্থান সুসংহত করার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে
২৪ নভেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
mzamin

আগামী জাতীয় সংসদ  নির্বাচনকে সামনে রেখে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করার চেষ্টায় রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিভিন্ন আসনে নেতা কেন্দ্রিক আলাদা বলয় রয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গাজীপুর সিটিতে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও আলাদা আলাদা বলয় গড়ে উঠেছে। গাজীপুরে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ছাড়া আরও কয়েকটি দলের কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। বর্তমানে গাজীপুর মহানগরের থানায় থানায় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠছে। সামনের মাসে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃৃত সাধারণ সম্পাদকের সমর্থক ও অনুসারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। আবার নতুন নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। তবে প্রবীণদের চেয়ে নবীন নেতৃত্ব এগিয়ে আসছেন।

বিজ্ঞাপন
কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিগত কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি আবারো সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন। 

 মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারী চিহ্নিত করে মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শতাধিক নেতাকে শোকজ করা হয়েছিল। এ নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লা খান এবং গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন শোকজ পাওয়া নেতৃবৃন্দ ও তাদের সমর্থকরা। আগামীতে সিটি ও সংসদ নির্বাচনে এসব শোকজ পাওয়া নেতাদের ভূমিকা হয়তো স্পষ্ট হবে। ওপর থেকে এক ধরনের চিত্র দেখা গেলেও ভেতরে ভেতরে সরকারি দলে ভিন্ন চিত্র রয়েছে বলেই অনেকের ধারণা। নগরের বিভিন্ন স্তরে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগ, মহিলা লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন কব্জা করা নিয়ে ও নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা আর এক ধরনের খেলা রয়েছে। তবে বিগত কয়েক বছরে নবীন নেতৃত্ব কর্মঠ সিটি মেয়র পেয়ে উন্নয়ন- অগ্রগতিতে নগরবাসী উজ্জীবিত ছিলেন। সেই উন্নয়নসহ নানা বিবেচনায় সামনের সিটি নির্বাচনেও কম বয়সের কোনো প্রার্থীকে নগরবাসী আশা করতেই পারেন। 

নগরের কতিপয় নেতা একদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় পদ পেতে উদগ্রীব, আবার মেয়র-কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পেতে দলের ভেতরে ও বাইরে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। নগর ও জেলায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রতিযোগিতায় রয়েছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে, সংসদ সদস্য পদে দলীয় মনোনয়নের আশায়। মূল দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতৃত্ব তাদের সংগঠনকে সুসংহত করতে তৎপর।  ওদিকে তিন টার্ম টানা ক্ষমতার বাইরে থেকে মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত বিএনপি এই মুহূর্তে গা ঝাড়া দিয়ে ভিত আরও মজবুত করার চেষ্টা করছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি কমিটি গঠনের মাধ্যমে দলকে সুসংহত করার চেষ্টা করছেন। বিগত সময়ে গাজীপুরে বিএনপি’র বিভিন্ন নেতা কেন্দ্রিক যে বিরোধ ও বলয় ছিল তা বর্তমানে অনেকটাই কমে এসেছে। দলের নেতাকর্মীরা নানা ধরনের বাধা-বিঘ্ন ও প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বড় বড় জমায়েত করে প্রায়ই শোডাউন করার চেষ্টা করছে। অবশ্য পদ-পদবি না পেয়ে দল থেকে পদত্যাগ এবং নানা ক্ষোভের কথাও এরইমধ্যে ফুটে উঠেছে। তবে এর মধ্যে জেলা, মহানগর ও বিভিন্ন থানা কমিটি গঠন ও ঘোষণার পর অনেকটা চাঙ্গা হয়েছে তাদের অবস্থান। বিএনপিতে কিছু নবীন নেতৃত্ব নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেও অনেকটা এগিয়ে আসছেন। 

প্রয়াত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে মঞ্জুরুল করিম রনি আগে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেমনভাবে জড়িত না থাকলেও পিতার মৃত্যুর পর মহানগর বিএনপি’র কমিটিতে শক্তিশালী জায়গা করে নিয়েছেন। বিএনপি’র সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল স্বেচ্ছাসেবক দল নেতৃবৃন্দও আলাদাভাবে সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, জাতীয় পার্টিও তাদের কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। মহানগর ও জেলা পর্যায়ে তাদের আলাদা কমিটি রয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জাতীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামী কোণঠাসা হলেও তাদের নানা ধরনের রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা গাজীপুরের তৃণমূল পর্যায়েও রয়েছে। মামলা-মোকদ্দমায় বিপর্যস্ত হওয়ার পরও মাঝে মাঝে বড় বড় মিছিল নিয়ে নিজেদের প্রকাশ্য অবস্থান জানান দেয় এই দলের নেতাকর্মীরা। ভেতরে ভেতরে নীরবে-নিভৃতে সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি ডান রাজনৈতিক দলের অবস্থান এই জেলায় থাকলেও তাদের তেমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। 

বাম রাজনৈতিক দলগুলোর দুর্বল অবস্থান থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে ও মানুষের নানা অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদসহ কয়েকটি বাম সংগঠনের মূলত শ্রমিক ও ছাত্রনির্ভর কিছু কর্মসূচি দেখা গেছে। জাসদ (ইনু) ও ওয়ার্কার্স পার্টি(মেনন) এর সংগঠন এই জেলায় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলন নিয়ে তাদের ভূমিকা দেখা যায়নি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও কিছু রাজনৈতিক দল তাদের মতো করে সংগঠন তৈরি ও নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছে।

(ফরিদপুরের রাজনীতি নিয়ে পড়ুন আগামীকাল)

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status