শেষের পাতা
ইরানি ফুটবলারদের যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দিতে বললেন বৃটিশ এমপি-মন্ত্রী
স্পোর্টস ডেস্ক
২৩ নভেম্বর ২০২২, বুধবার
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে ইরানের খেলোয়াড়রা জাতীয় সংগীতের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। কিন্তু জাতীয় সংগীত বেজে উঠলেও, তারা চুপ করে ছিলেন। ম্যাচের আগেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এজন্য নিজ দেশে শাসকদের রোষানলে পড়তে পারেন ইরানি খেলোয়াড়রা। তাদের বিরুদ্ধে তোলা হতে পারে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ। যার পরিনামে তাদের জেল অথবা মৃত্যু হতে পারে। আর এমন অবস্থায় ইরানি খেলোয়াড়দের দিকে ব্রিটেনকে সাহায্যের হাত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির কনজারভেটিভ পার্টির (টরি পার্টি) সিনিয়র এমপি স্যার আয়ান ডানকান স্মিথ ও সাবেক মন্ত্রী ক্যারোলিন নোকস। ইরান ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের (এসাইলাম স্কিম) ব্যবস্থা করতে বললেন তারা। ইংলিশ দৈনিক দ্য সানকে ডানকান স্মিথ বলেন, ‘এমন অবস্থায় ইরান দল হয়তো দেশে ফিরে যেতে নাও চাইতে পারে। আমাদের সরকারের উচিত সেই ব্যক্তিদের জন্য দ্রুত একটি আশ্রয় প্রক্রিয়ার (এসাইলাম স্কিম) ব্যবস্থা করা। ইরান একটি স্বৈরাচারী, নিষ্ঠুর সরকার।’
এর আগে ইরান ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের এসাইলামের জন্য বৃটিশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান যুক্তরাজ্যের সাবেক মন্ত্রী ক্যারোলিন নোকস। টক টিভিকে তিনি বলেন, খুবই সাহসী অবস্থান নিলো এই যুবকরা (ইরান ফুটবল দল) ইরানজুড়ে যেমন সাহসী অবস্থান নিয়েছে দেশটির নারীরা। তারা চাইলে যেন যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পেতে পারে সেজন্য আইনী প্রক্রিয়া চালু করা দরকার।’
কাতার বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচের শুরুতে নিজেদের জাতীয় সংগীত গাইতে অস্বীকৃতি জানায় ইরান দলের খেলোয়াড়রা। এর মাধ্যমে তারা নিজ দেশে চলমান ব্যাপক বিক্ষোভে সরকারের সহিংস দমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচের আগে ইরানের খেলোয়াড়রা মাঠে জাতীয় সংগীতের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। কিন্তু জাতীয় সংগীত বেজে উঠলেও তারা চুপ করে ছিলেন। ম্যাচের আগেই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জাতীয় সংগীত বেজে ওঠার সময়ে খেলোয়াড়দের চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার ঘটনাটি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সেন্সর করে দেয়।
ইরানের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি রোববার তার দেশের ‘শোকসন্তপ্ত পরিবারগুলোর’ প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা মানতে হবে যে আমাদের দেশের পরিস্থিতি ঠিক নেই এবং আমাদের মানুষজন খুশি নয়। আমরা এখানে রয়েছি কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা তাদের কন্ঠস্বর হবো না বা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো না।’
আরেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আলীরেজা জাহানবখশ জানিয়েছিলেন, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রদর্শন করতে ইরান দলের সব খেলোয়াড় মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত গাওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গত ১৬ই সেপ্টেম্বর ইরানের নৈতিকতা পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনি। যথাযথভাবে হিজাব না পরায় তাকে আটক করেছিল ইরানের মোরালিটি পুলিশ। মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা ইরান। পশ্চিমা মিডিয়ার খবরে জানা যায়, সরকারি দমনের মুখে ইরানে এ পর্যন্ত ১৫০০০ বিক্ষোভকারী প্রাণ দিয়েছেন।