ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শরীর ও মন

পাইল্স হলে অবহেলা নয়, সুচিকিৎসা নিন

ডা. মোহাম্মদ তানভীর জালাল
২২ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার

পাইল্স রোগ হলে বেশির ভাগ রোগীই অত্যন্ত সাধারণ রোগ মনে করে শুরুতে চিকিৎসা নিতে চায় না। পরে বেশ জটিলতা হলে চিকিৎসা নিতে আসে। প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা নিতে অপারগ বা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ  না করার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায় রোগটি কারো কাছে প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ কাজ করা। বর্তমানে বাংলাদেশে পাইল্স রোগটির আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে এবং এর সঙ্গে বেড়ে চলেছে অপচিকিৎসা।  কিছু হাতুড়ে ডাক্তার ও মুনাফালোভী কাটাছেঁড়ার কথা বলে বা বিনা অপারেশনের কথা বলে রোগীদের বিভ্রান্ত করছে। তাই পাইল্স রোগটি কী, এর সাধারণ লক্ষণসমূহ, কীভাবে প্রতিরোধ করতে পারি ও কি কি চিকিৎসা আছে তা জানা থাকলে আমরা এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমাতে পারি। 
পাইল্স  হলো-
পাইল্স রোগটি  চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইংরেজিতে ঐবসড়ৎৎযড়রফং নামে পরিচিত। যা সাধারণ লোকদের কাছে ভগন্দর রোগ নামেও পরিচিত। দেখা যায়, পাইল্স মূলত: আমাদের পায়ুপথের ভেতরে ফুলে যাওয়া রক্তবাহী শিরা। আমাদের মলদ্বারের ভেতর ও বাইরে রক্ত পরিবহনকারী শিরা (াবরহং) থাকে, এই শিরাগুলো যদি কোনো কারণে ফুলে ওঠে, কিংবা বর্ধিত হয়ে মলদ্বারের বাইরে চলে আসে বা শিরা থেকে রক্তপাত হয় তখন তাকে পাইল্স বা হেমোরয়েড বলে চিহ্নিত করা হয়।
পাইলসের কারণসমূহ হলো-
১। দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্য। 
২।

বিজ্ঞাপন
দীর্ঘমেয়াদি ডায়রিয়া।
৩। আঁশযুক্ত খাবার, শাক-সবজি কম খাওয়া। ভাজা- পোড়া ও লাল মাংস বেশি খাওয়া।
৪। মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও মলত্যাগের সময় অধিক চাপ প্রয়োগ করা।
৫। গর্ভাবস্থায় অনেকের পাইল্স হয়।
৬। স্থূলতা বা শরীরের ওজন বেশি হওয়া।
৭। নিয়মিত ভারী জিনিস উত্তোলন করা।
পাইল্সের লক্ষণসমূহ
১। মলের সঙ্গে ব্যথাহীন তাজা রক্ত যাওয়া।
২। মলদ্বারে চুলকানি ও ব্যথা।
৩। মলদ্বারে কোনো মাংস পিণ্ড বের হয়েছে বলে মনে হওয়া।
৪। মলদ্বারের পাশে গুটির মতো (খঁসঢ়) ফুলে ওঠা।
এসব লক্ষণসমূহ দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ কলোরেক্টাল সার্জন কিংবা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।  চিকিৎসক মলদ্বার পরীক্ষা করে দেখবেন পাইল্স হয়েছে কিনা, বা পায়ুপথের অন্য কোআে রোগ হয়েছে।
মনে রাখবেন কোনোভাবেই কোনো কবিরাজ, হাতুড়ে চিকিৎসক কিংবা  লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে অপচিকিৎসা  নেওয়া যাবে না। দেখা যায় অপচিকিৎসায়  পাইল্স জটিল হয়ে উল্টো মলদ্বারে ক্যান্সার হতে পারে। 
পাইলসের চিকিৎসা
পাইল্স যদি শুরুর দিকেই নির্ণয় করা যায় তাহলে অপারেশন ছাড়াই ওষুধের মাধ্যমেই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব। কিন্তু লক্ষণ লুকিয়ে, রোগ পুষে রেখে দেরিতে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে অনেক সময়ই অপারেশন ব্যতীত অন্য কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। তাই মলদ্বারের রোগ নিয়ে অবহেলা করবেন না।
বর্তমানে অনেক আধুনিক অপারেশন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এসব পদ্ধতিতে অপারেশনে খুবই কম কাটাছেঁড়া করতে হয়, রক্তপাত খুবই কম হয়। তাই অপারেশন ঝুঁকিবিহীন ও নিরাপদ। আধুনিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ সার্জনের মাধ্যমে অপারেশন করালে অপারেশনের একদিন পরেই রোগী বাড়ি যেতে পারেন ও স্বাভাবিক কাজ শুরু করতে পারেন।
পাইল্স প্রতিরোধের উপায়
১। কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেজন্য নিয়মিতভাবে আঁশযুক্ত (ঋরনবৎ ৎরপয) খাবার, শাক-সবজি, সালাদ বেশি খাওয়া।
২। ভাজা-পোড়া ও লাল মাংস খুবই কম খাওয়া।
৩। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা।
৪। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য নিয়মিতভাবে ইসুবগুলের ভুষি খাওয়া যেতে পারে।
৫। মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করা।
৬। মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে না থাকা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, কোলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ, কোলোরেক্টাল, ল্যাপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
চেম্বার: ১৯, গ্রীন রোড, এ. কে. কমপ্লেক্স, লিফ্ট-৪, ঢাকা। যোগাযোগ-০১৭১২-৯৬৫০০৯

 

শরীর ও মন থেকে আরও পড়ুন

   

শরীর ও মন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status