শরীর ও মন
শীতে পা ফেটে গেলে
ডা. এস এম বখতিয়ার কামাল
২১ নভেম্বর ২০২২, সোমবার
শীতকালে আবহাওয়ার কারণে বাতাসে আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্প কমে যায়, ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। এ সময় ত্বক ধীরে ধীরে লাবণ্যতাও হারায়। আবার অনেকের শীতের সময় পা ও ঠোঁট ফেটে যায়। তবে ঠোঁট ফাটার চেয়ে পা ফাটা বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। কারও কারও পা ফেটে রক্তও পড়ে, ব্যথাও করে থাকে। তবে সবার যে এমনটি হয় তা কিন্তু নয়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের ত্বকের নিচের স্তরে চিড় ধরে ও ফেটে যায়। এ কারণে ব্যথা করে, জ্বালা করে, হাঁটতে সমস্যা হয়। কখনো তাতে সংক্রমণও হতে পারে।
কারণসমূহ
কিছু রোগের কারণে পা ফাটার প্রবণতা বেশি দেখা দেয়। যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা, সোরিয়াসিস, অ্যাকজিমা, ইত্যাদি। স্থ্থূল ব্যক্তিদের পা বেশি ফাটে। এ ছাড়া খুব ঠাণ্ডা শুষ্ক আবহাওয়া, খোলা জুতা বা স্যান্ডেল, জুতার পেছন দিকে ঘর্ষণ, জুতা ঠিকমতো ফিট না করা ইত্যাদি এ সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। শীতে পা ফাটা কারও কারও ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে হয়। অপুষ্টি, মানসিক চাপ, বার্ধক্য, ক্ষারযুক্ত সাবানের বেশি ব্যবহার, যত্ন না নেয়া ইত্যাদি কারণে পা ফাটার সমস্যা হয়। শীতে পা ফাটার জন্য নিম্নোক্ত কারণগুলোকে দায়ী করা হয়। * যদি গোড়ালির চারপাশের ত্বক শুষ্ক হয়। যদি গোড়ালির ত্বক একটু মোটা হয়। * দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় যাদের। * অতিরিক্ত ওজন হলে। * জুতার পেছনের অংশ খোলা হলে পা ছড়িয়ে পড়ে এবং গোড়ালিতে চাপ পড়ে পা ফেটে যায়। * বয়স বাড়ার কারণে ত্বকের পরিবর্তনেও পা ফাটে। * দীর্ঘক্ষণ ভেজা পরিবেশে থাকলে বা স্যাঁতসেঁতে বাথরুমে থাকলে। * জুতার মাপ ঠিক না হলে।
কিছু রোগের কারণে
যেমন- সোরিয়াসিস, অ্যাথলেট’স ফুট, অ্যাকজিমা, থাইরয়েড ডিজিজ ও ডায়াবেটিস। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ভিটামিন, মিনারেলস এবং জিংকের অভাব। শুষ্ক জলবায়ু।
পা ফাটা কমাতে কিছু ঘরোয়া উপায়
গরম পানি-মধু: দুই লিটার হালকা গরম পানির মধ্যে দুই টেবিল চামচ মধু মেশান। এই পানির মধ্যে ১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। মধুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি- ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এটি পা নরম করতে সাহায্য করে, পা ফাটা কমায়। নারিকেল তেল ও হলুদ: নারিকেল তেল ও হলুদের মিশ্রণ পা ফাটা কমাতে চমৎকার ঘরোয়া উপায়। এক চা চামচ হলুদ দেড় টেবিল চামচ নারিকেল তেলের মধ্যে মেশান। রাতে ঘুমানোর আগে মিশ্রণটি পায়ে মাখুন। নারিকেল তেলের মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়ারোধী ও নিরাময়কারী উপাদান। অন্যদিকে হলুদের মধ্যে রয়েছে প্রদাহরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী উপাদান। তবে মিশ্রণটি মেখে মোজা পরতে ভুলবেন না। তা না হলে পায়ে হলুদের দাগ থেকে যেতে পারে। পায়ের গোড়ালি ফাটার চিকিৎসা ২০০ মিলিগ্রামের একটি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মাঝখান থেকে কাটুন। এবার এর মধ্য থেকে তেল বের করে পায়ে মাখুন। দুই পায়ের জন্য দুটি ক্যাপসুল ব্যবহার করুন। এ ছাড়া পা ফাটার অন্য কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া গেলে তার প্রতিকার বা চিকিৎসা করা উচিত। অনেক সময় ইউরিয়া অথবা স্যালিসাইলিক এসিড ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক সাবেক সহকারী অধ্যাপক (চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিভাগ) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চেম্বার- কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, ফার্মগেট, গ্রিনরোড, ঢাকা যোগাযোগ- ০১৭১১-৪৪০৫৫৮