ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার

বিপজ্জনক অবস্থায় চলে যেতে পারে রিজার্ভ

এম এম মাসুদ
১৫ মে ২০২২, রবিবার
mzamin

প্রায় সবদিক থেকে ভালো থাকা বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার চেয়ে অর্থনীতির সব সূচকে বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে। তবে এখন যে স্বস্তি অবস্থা আছে সেটা বেশিদিন নাও থাকতে পারে। কারণ টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টানা যাচ্ছে না। রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়েই চলেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। তাই এখনই যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি রির্জাভ দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। 

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে আলাপকালে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম এসব কথা বলেন। 

অধ্যাপক মইনুল বলেন, খুব শিগগির বাংলাদেশ কোনো সংকটে পড়বে না। কিন্তু দেশে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন; রাশিয়ার ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
২০২৫ সাল থেকে যখন কিস্তি শুরু হবে তখন বছরে ৫৬৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্প হচ্ছে। তথ্য বলছে- এখান থেকে যে আয় হবে তা দিয়ে ঋণের কিস্তি শোধ করার কোনো সম্ভাবনা খুবই কম। ফলে এটা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর এডিবি থেকে ঋণ নিয়ে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ করা হবে। এর কিস্তির টাকা এই প্রকল্প থেকে আয়ের টাকায় শোধ করাও সম্ভব হবে না। এ ছাড়া দেশের অন্য প্রকল্পসহ আমাদের ঋণের কিস্তি ২০২৫ সালের মধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সব মিলিয়ে এখনই ঋণ এবং প্রকল্প গ্রহণে যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারি তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো কঠিন অবস্থা হবে বাংলাদেশের। এখন যে স্বস্তি অবস্থা আছে সেটা বেশিদিন নাও থাকতে পারে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ডলারের দাম বেড়েছে ৭০ পয়সা। গত সোমবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব জায়গায় মুদ্রাস্ফীতির আগুন লেগেছে। তেলের বাজারে আগুন। গম সংকট। ডলার ক্রাইসিস। রেমিট্যান্স প্রবাহ ধারাবাহিকভাবে কমেছে। একটা অস্থির অবস্থায় যাচ্ছে আর্থিক ব্যবস্থা। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত রোববার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ২.২৪ বিলিয়ন (২২৪ কোটি) ডলারের আমদানি বিল পরিশোধের পর গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১.৯০ বিলিয়ন ডলার। গত তিন মাস ধরে (জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ) প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে দেশে। এ হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এদিকে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। তবে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩ শতাংশ। আবার প্রবাসী আয় যা আসছে, তা গত বছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। 

এসব বিষয়ে অধ্যাপক মইনুল বলেন, চলতি বছরই আমাদের আমদানি ব্যয় প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু রপ্তানি আয় প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি যেতে পারে। ফলে ৩০ বিলিয়ন ডলারের একটা বাণিজ্য ঘাটতি হতে পারে। সেটা তো রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করতে পারবো না। রেমিট্যান্স দিয়ে সর্বোচ্চ ২০ বিলিয়ন ডলার পূরণ করতে পারবো। কাজেই আমাদের ১০ বিলিয়ন ডলারের একটা ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে।

মইনুল বলেন, ইতিমধ্যেই গত ৮ মাসে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ তা এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। পরের ২ মাসে এটা আরও ৪ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। এভাবে যদি আমাদের আমদানি ব্যয় রপ্তানি আয়ের তুলনায় বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করতে না পারি তাহলে অতি দ্রুত আমাদেরও রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। বিপজ্জনক অবস্থায় রিজার্ভ চলে এলে টাকারও দাম আরও কমবে। তখন অর্থনীতিতে একটা বিপদ দেখতে পাবো। এখন যে স্বস্তির অবস্থানে আছি সেটা বেশিদিন নাও থাকতে পারে। 

বেশকিছু পরামর্শ দিয়ে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারকে এখনই আমদানি ব্যয় কঠোরভাবে দমন করতে হবে। ব্যাণিজ্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনার ওপর জোর দিতে হবে। অবৈধ চ্যানেল বা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার পথ বন্ধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে শ্রীলঙ্কার আজকের এই আর্থিক দেউলিয়ার জন্য অন্যতম দায়ী হুন্ডি ব্যবস্থা বন্ধ করতে না পারা। 
 

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

   

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status