প্রথম পাতা
‘আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির কথা অন্য কোনো দেশে শুনিনি’
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৫ নভেম্বর ২০২২, মঙ্গলবার
নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তির দৃষ্টান্ত পৃথিবীর আর কোথাও শুনেননি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকাস্থ জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। একইসঙ্গে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে এবং বিরোধীরাও এতে অংশ নেবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। সোমবার রাজধানীর গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এক প্রশ্নের জবাবে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি শুনেছি, (গত নির্বাচনে) পুলিশের কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন। আমি অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্তের কথা শুনিনি।’ আমি আশা করবো, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। ইতো নাওকি বলেন, কাজেই এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার। এটাই তার দৃঢ় প্রত্যাশা। ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)। ফ্রেডরিখ-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস) বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ সরকারও বলছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২০১৮ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকায় জাপানি দূতাবাস সেই সময়ে একটি বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল যা তার দেশের জন্য খুবই অস্বাভাবিক ছিল। যদিও সেটিতে সহিংসতার বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্য জটিল বিষয়। তবে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সবসময়ই প্রাধান্য পাবে। কিন্তু মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয়। ইতো নাওকি আরও বলেন, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিগগিরই পূর্ণমাত্রায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আমার মনে হয়, মিয়ানমারে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং সেখানে সহিংসতা বন্ধ, বন্দিদের মুক্তি এবং সেখানে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের পরীক্ষামূলক প্রত্যাবাসন শুরু করা যেতে পারে, তবে তা তাদের পূর্ণ মাত্রায় স্বদেশে প্রত্যাবাসন নয়। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং গত পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হয়নি। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ পরিস্থিতি খুবই দুর্ভাগ্যজনক। প্রত্যাবাসন অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে।’ তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমারের পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের শিগগিরই প্রত্যাবাসন করা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, জাপান বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করেছে এবং তারা বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ও উদারতার প্রশংসা করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিজিএস- এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী দুই দেশের পারস্পরিক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের নাগরিকদের অবদানের কথা তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এবং জাপানের এই ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আলোচনা বক্তব্যে ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং, বাংলাদেশ (এফইএস, বাংলাদেশ)-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস বাংলাদেশ- জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন।