প্রথম পাতা
সাক্ষাৎকার
গেল দুইবারের মতো নির্বাচন আর হবে না
১৪ মে ২০২২, শনিবারড. রেজা কিবরিয়া। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া তনয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী গ্র্যাজুয়েট। দায়িত্ব পালন করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সম্মানজনক পদে। দেশে ফিরে যুক্ত হয়েছেন রাজনীতিতে।
গণফোরামে যোগ দিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে আসা। হয়েছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক। এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন গণঅধিকার পরিষদে। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত নতুন এই রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মানবজমিনের পক্ষ থেকে সমসাময়িক এমন নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন খ্যাতনামা এই অর্থনীতিবিদ। জানিয়েছেন, নিজের পরিকল্পনা, প্রত্যাশা ও ধারণার কথা। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার শাহনেওয়াজ বাবলু।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হতে পারে?
রেজা কিবরিয়া: আগামী নির্বাচন এই সরকারের অধীনে হবে না। এটা হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। সেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে। আর সেই নির্বাচনের ফল খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে। মোট কথা গত দুইবারের মতো বাংলাদেশে আর নির্বাচন হবে না।
নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা কেমন হবে?
রেজা কিবরিয়া: আমার ধারণা তারা সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। আর তারা সেটা চায়ও না। তবে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন তারা অবশ্যই চাইবে। আর যে দল একটু উদারপন্থি, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে না সেই দলের প্রতি তাদের পছন্দ থাকবে এটা স্বাভাবিক।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আপনাদের প্রত্যাশা কেমন?
রেজা কিবরিয়া: গত দুই নির্বাচনে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বেশি সক্রিয় ছিল না। তারা শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করেছে। কিন্তু এই সরকার দুইবার দেশের মানুষকে ঠকানোর পাশাপাশি বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকেও ঠকিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঠিকই বুঝে গেছে এই সরকার সত্য কথা বলে না। আগামী নির্বাচনে বিদেশিরা চেষ্টা করবে এখানে পর্যবেক্ষণ টিম দিতে। তবে আন্তর্জাতিক প্রভাব থেকেও বেশি প্রয়োজন দেশের মানুষকে রাস্তায় নামা।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা?
রেজা কিবরিয়া: ভারত বাংলাদেশের ওপর সব সময় একটা প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতের ওপর মানুষের রাগ হচ্ছে, তারা মনে করে এই সরকারকে ভারত টিকিয়ে রেখেছে। যখন মানুষ বুঝবে তাদের এই ধারণাটা ভুল তখন অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। আর আপনি যদি আপনার অধিকার রক্ষা করতে না পারেন সেই দোষ শুধু ভারতের ওপর দেয়া ঠিক হবে না। আর বিদেশি রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থ রক্ষার বিষয়ে সব সময় সচেতন। এই দিক দিয়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। আমাদের তিন দিকে ভারত। তাদের সঙ্গে শত্রুতা করা আমাদের জন্য কোনো মতেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমি মনে করি আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের একটা পরিবর্তন আসবে।
রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে ভারতের কাছে আপনাদের কোনো প্রত্যাশা আছে কিনা?
রেজা কিবরিয়া: আমরা ভারতের কোনো সমর্থন চাই না। তবে তাদের সঙ্গে কোনো শত্রুতাও চাই না।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা কেমন?
রেজা কিবরিয়া: কোনো দেশের রাজনীতি নিয়ে চীনের তেমন মাথা ব্যথা নেই। তারা কখনো কাউকে রক্ষা করবে না আর কারও বিরুদ্ধে কাজও করবে না। তাদের নিয়ে ধারণা করাটা অনেকটা কঠিন।
সরকারের পক্ষ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের সব আসনে ইভিএমে ভোট করার কথা বলা হচ্ছে। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?
রেজা কিবরিয়া: ইভিএম হচ্ছে একটা ছলনার মেশিন। এটা কোনো দেশেই চলে না। আমরা ইভিএমে নির্বাচন কখনোই মানবো না। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী নির্বাচন হবে ইভিএমের মাধ্যমে। এটা তো বলার কথা নির্বাচন কমিশনের। সরকারের এই কথায় প্রমাণ হয় নির্বাচন কমিশন এই সরকারই চালায়।
র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের সাহায্য চাওয়াটা কীভাবে দেখছেন?
রেজা কিবরিয়া: পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন আর্জি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অনেক ছোট করেছে। তার অনেক কথায় বাংলাদেশকে ছোট করা হয়েছে। কোনো দেশ আমাদের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটা থেকে বাঁচার জন্য অন্য আরেকটি দেশের কাছে ধরনা দেয়া আমাদের জন্য খুবই লজ্জার।
শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশেও হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?
রেজা কিবরিয়া: বাংলাদেশের যে অবস্থা আমি মনে করি আমরাও সেই পথে আছি। এই সরকার যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতোই হবে। শ্রীলঙ্কার জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাদের কি অবস্থা সবাই জানেন। আর বাংলাদেশের সরকার তো নির্বাচিত নয়। এই দেশও যদি শ্রীলঙ্কার মতো হয় তাহলে আমাদের এমপি-মন্ত্রীদের অবস্থা কেমন হবে সেটাই কেউই জানে না।
নির্বাচনের সময়ে কেমন সরকার চাইছেন আপনারা?
রেজা কিবরিয়া: আমরা সব সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে। আমি মনে করি যদি তাদের সেই ক্ষমতা দেয়া হয় তাহলে সেই সরকার অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারবে। এর জন্য কিছুটা সময় লাগবে। তবে এই সরকারের রূপরেখা কেমন হবে সেটা আগে থেকে বলা যায় না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেমন হবে সেটা বর্তমান সরকার পতনের মাধ্যমেই বুঝা যাবে। ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের যে সরকার হয়েছিল এ সম্পর্কে তো দুইদিন আগেও কারও ধারণা ছিল না। আমাদের প্রথম কথা হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ। এর আগে আমরা কারও সঙ্গে কোনো বিতর্কে যেতে রাজি না।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে হতে পারে?
রেজা কিবরিয়া: রাজনীতিতে পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয়। এটা আগে থেকে বলা মুশকিল। আসলে পরিস্থিতিই সব কিছু বলে দিবে কখন কি হবে। তবে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি কোনো কিছু করা হয় তাহলে ওই সরকারের কাজ করতে অসুবিধা হবে। বাংলাদেশের জনগণকে যেখানে সুযোগ দেয়া হয়েছে তারা কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেয়নি। জনগণের ওপর বিশ্বাস রেখেই আমি মনে করি ভালো কিছু একটা হবে। আর সেটা খুব তাড়াতাড়ি।
গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক অবস্থা কেমন?
রেজা কিবরিয়া: আমরা দলের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সবখানেই আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। শুধু আমরা না দেশের প্রায় সব বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে প্রতিনিয়তই আক্রমণ করা হচ্ছে। একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া এই সমস্যারও সমাধান হবে না।
দলের নিবন্ধন না পেলে আগামী নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদ কীভাবে অংশ নেবে?
রেজা কিবরিয়া: এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই আমরা অংশ নেবো না। আর নিবন্ধন করার একটাই কারণ সেটা হচ্ছে, আমাদের দলের লগোটাকে নিবন্ধন করা। আমার রাজনীতি করার অধিকার নিবন্ধনের কারণে হয় এটা আমি মানি না। প্রয়োজনে আমরা নিবন্ধন ছাড়াই রাজনীতি করবো। আমার দলীয় প্রতীককে নিবন্ধন করার জন্য নিবন্ধন প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো সংলাপের আয়োজন করা হয় আপনারা সেখানে অংশ নেবেন কিনা?
রেজা কিবরিয়া: এই সরকার যে সত্য কথা বলে এটার প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি। তাই তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা আলোচনার বিষয় আসার কথা না। আর আমি আওয়ামী লীগকে বলবো আগামী নির্বাচন নিয়ে যাতে তারা চলচাতুরি না করে। কারণ নির্বাচন আর এই সরকারের অধীনে হচ্ছে না।