শরীর ও মন
শিশুর ইপিলেপ্সি
ডা. সৈয়দা নাফিসা ইসলাম
৩০ অক্টোবর ২০২২, রবিবারইপিলেপ্সি মস্তিষ্কের এমন এক ধরনের রোগ যা বার বার খিঁচুনি তৈরি করে। শিশুদের ব্রেইনের রোগের মধ্যে ইপিলেপ্সি রোগ সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হয়। একে মৃগি রোগ বা মূর্ছা যাওয়াও বলা হয়। আর ইপিলেপ্সি রোগটি শতকরা ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশু বয়সে শুরু হয়।
রোগের কারণ
অজানা কারণ-
শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে। কখনও বা পরিবারের অন্য কারও একই সমস্যা পাওয়া যায়। যমজ বাচ্চার একজনের থাকলে অন্যজনেরও হতে পারে।
ক্ষতিগ্রস্ত মস্তিষ্ক-
শতকরা ২০-৩০ ভাগ ক্ষেত্রে যেমন-
মাথায় আঘাত পাওয়া, স্ট্রোক হওয়া, ব্রেইন টিউমার, মস্তিষ্কে ইনফেকশন, জন্মগত ক্রটিপূর্ণ মস্তিষ্ক, জন্মের সময় নবজাতকের মস্তিষ্কের অক্সিজেনের
অভাব, নিউরোমেটাবোলিক- নিউরোডিজেনারেটিভ ইত্যাদি রোগ।
প্রকারভেদ
আংশিকভাবে-
এক্ষেত্রে শিশুর জ্ঞান হারায় না। শরীরের নির্দিষ্ট অংশে খিঁচুনি হয় বা কখনও এক অংশে শুরু হয়ে অন্য অংশ পর্যন্ত শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুরু শরীর জুড়ে খিচুনি হতে পারে।
সর্ব শরীরর জুড়ে-
এই খিঁচুনি হতে পারে সর্বশরীর একসঙ্গে শক্ত অবস্থায় চলে যায় কিংবা শিশু হাত-পা একটানা ভাঁজ করতে থাকে এবং খুলতে থাকে।
* কখনও শান্ত অবস্থায় থাকা একটি শিশু চোখের পলক বার বার ফেলতে থাকে অথবা শূন্য দৃষ্টিতে টানা একদিকে তাকিয়ে থাকে।
* কিছু শিশুর খুব কম সময়ের জন্য (২ সেকেন্ডের কম) শরীরের ছোট কোনো মাংস পিণ্ড কেঁপে ওঠে যা সাধারণ মনে হতে পারে। কিন্তু বার বার হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।
* হঠাৎ করে সর্বশরীর এক সাথে শক্তিহীন হয়ে পড়তে পারে।
* কারণ ছাড়া শিশু অনর্গল হাসতে ও কাঁদতে পারে।
* ইপিলেপ্সি সিনড্রোম
এসব ইপিলেপ্সি ১ বছর থেকে শুরু করে ১২ বছর পর্যন্ত হতে পারে। এসব শিশুর খিঁচুনি বন্ধ করা তুলনামূলকভাবে কঠিন।
কী করবেন
খিঁচুনি হলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে নিকটস্থ চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান। খিঁচুনি বন্ধ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না। জোর করে চেপে ধরে রাখবেন না বা মুখে কিছুই দেবেন না।
রোগ নির্ণয়
রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইনের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। তবে সমস্ত পরীক্ষার চেয়ে চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত এখানে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসা
বিভিদ ওষুধ আছে। চিকিৎসায় সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব কিছু ক্ষেত্রে। তবে ওষুধের পাশাপাশি নিয়মমাফিক জীবনযাপন ইপিলেপ্সি নিরাময়ের মূলমন্ত্র।
এছাড়া
* ওষুধের ডোজ বাদ দেওয়া যাবে না ।
* চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতেই হবে।
* নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করা যাবে না।
* ওষুধ চলা অবস্থায় খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
* সুষম খাবার খেতে হবে। কোক, আইসক্রিম জাতীয় খাবার যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় তা পরিহার করতে হবে।
* পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে।
* টিভি দেখা বা লেখা পড়ার সময় পর্যাপ্ত আলোতে থাকতে হবে।
* আগুন ও পানির কাছে একা যাওয়া যাবে না।
* সব সময় চিকিৎসার কাগজ নিকটে বা সঙ্গে রাখতে হবে।
লেখক: কনসালট্যান্ট, শিশু বিভাগ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চেম্বার: (১) ডা. নাফিসা’স চাইল্ড কেয়ার শাহ্ মখদুম, রাজশাহী।
(২) আমানা হাসপাতাল, ঝাউতলী মোড়, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী। মোবাইল-০১৯৮৪-১৪৯০৪৯