ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

বাংলারজমিন

১৪ শিক্ষার্থী ও ৪ শিক্ষক নিয়ে চলছে বিদ্যালয়!

এইচ এম জসিম উদ্দীন, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) থেকে
২৬ অক্টোবর ২০২২, বুধবার
mzamin

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষ মিলে উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৪ জন। আর তাদের পড়ানোর জন্য আছেন ২ জন শিক্ষক। মানসম্মত পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 
ছোট ছোট পাহাড়-টিলা বেষ্টিত উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নে ৩১ নম্বর রাজাঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে শিক্ষকের পদ রয়েছে ৬টি। তার মধ্যে শিক্ষক আছে ৪ জন। এর মধ্যে ১ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণে। আরেক শিক্ষিকা চিকিৎসার ছুটিতে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে আছেন প্রধান শিক্ষিকাসহ ২ জন। ৬ শিক্ষকের বিদ্যালয়টিতে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষকের দাবি তাদের শিক্ষার্থী রয়েছে ৬৩ জন। যদিও সে সংখ্যা শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। স্থানীয়রা বলেন, শিক্ষকরা বলেন শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন পাবো, না থাকলেও পাবো। এমনিতেই নূরাণী মাদ্রাসা ও কিন্ডারগার্ডেন স্কুল হওয়াতে শিক্ষার্থী কম। এরপরেও যা ছিল তাদেরও যদি ভালোভাবে পড়াতো তাহলে এই অবস্থা হতো না।
সরজমিন দেখা গেছে, এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত আছেন ২ জন শিক্ষক। এরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে এক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন ৫ জন শিক্ষার্থীকে। অপর শিক্ষক দাঁড়িয়ে আছেন বিদ্যালয়ের বারান্দায়। ৫ম শ্রেণিকক্ষে ৯ জন শিক্ষার্থী গল্প করছে। অন্য শ্রেণিকক্ষগুলো তালাবদ্ধ। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভের পর থেকে শিক্ষার্থী কমে আসে। এলাকার অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদেরকে শিক্ষার জন্য নূরাণী ও এবতেদায়ী মাদ্রাসায় ভর্তি করছে। এসব ছেলেমেয়েরা অত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না আসলে শিক্ষকদের করার কী আছে।
জানা গেছে, উপজেলার এ এলাকায় শিক্ষা বিস্তার ও জনমানুষকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে এলাকার সচেতন ও গুণী লোকজনদের সহযোগিতায় ১৯৩৭ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। এক সময় শিক্ষার্থী ছিল এই বিদ্যালয়ে ভরপুর। কিন্তু, ধীরে ধীরে পড়ালেখার মান, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে ঝরতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এরইমধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত ২ বছর বিদ্যালয় বন্ধ থাকে। বিদ্যালয় খোলা হলেও পরিচালনা কমিটি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রভাব পড়ে বিদ্যালয়ের ওপর। ভেঙে পড়ে পড়ালেখার মান। ফলে, শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠিানে ভর্তি হয়ে যায়।
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা জানান, অন্তত ১ বছর থেকে এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই। উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আওতায় কলাউজান ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুককে প্রধান করে ইতিমধ্যে একটি এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রক্রিয়া চলছে অত্র বিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের। প্রধান শিক্ষিকা আরও বলেন, অত্র বিদ্যালয়ে আর কোনো সমস্যা নেই। জানতে চাইলে বলেন, অন্তত ১২ বছর থেকে অত্র বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে পারিনি। কেন জানি না, কিছু লোক তার বিরুদ্ধে। তারা লিখিতভাবে একাধিক অভিযোগও করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে শিক্ষকেরা সবাই মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের বিদ্যালয়ে নিয়ে আসতে পারিনি। 
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কামাল উদ্দীন বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব রয়েছে। তিনি কোনো বিষয়ে আমার সঙ্গে সমন্বয় করেন না। তার একগুয়েমি আচরণের কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। শিক্ষকেরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না এবং ভালো পড়ালেখা করায় না। যে কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো ফল পাইনি। তবুও আমি গতকাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবারো লিখিত অভিযোগ করেছি।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ওমর ফারুক বলেছেন, মাসখানেক আগে তিনি ক্লাস্টারের দায়িত্ব নিয়েছেন। রাজঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের জন্য কাজ করছেন। চেষ্টা করা হচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণের জন্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ উল্যাহ বলছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status