ঢাকা, ১২ মে ২০২৫, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

প্রথম পাতা

চতুর্মুখী সমস্যায় পোশাক খাত

এম এম মাসুদ
১৯ অক্টোবর ২০২২, বুধবার
mzamin

পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের পাশাপাশি জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এরপর শুরু হয়েছে লোডশেডিং। এতে দেশের বেশির ভাগ শিল্পকারখানা বিদ্যুৎ সংকটে ধুঁকছে। পাশাপাশি রয়েছে গ্যাসের সংকট। সাম্প্রতিক সময়ে লোডশেডিং আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে বেড়ে গেছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়। ওদিকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাকের বাজার ইউরোপের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মান ও ফ্রান্সেও বড় ধরনের মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। সব মিলিয়ে এই সমস্যাগুলোর সুযোগ নিচ্ছে বিদেশি ক্রেতারা। ইতিমধ্যেই তারা অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে বলে শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। সংকটগুলোকে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে ক্রেতারা।  সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকটকে সামনে রেখে অর্ডার দেয়ার অনেক সময় নিচ্ছে ক্রেতারা। ফলে আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে। আবার স্থগিতও হয়েছে। উৎপাদন লাইনগুলো অলস বসে থাকে। জার্মানিসহ গোটা ইউরোপে পোশাক রপ্তানির গতি কমে এসেছে। আগামীতে তা আরও কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পণ্য রপ্তানি করলেও অর্থ পরিশোধ হচ্ছে না।  এদিকে শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প এবং সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি উৎপাদন কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। 

 বিজিএমইএ’র পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং খুচরা বাজারে প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোয় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছে। জার্মান গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে জার্মানি সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে জ্বালানি খাতে। সমস্যাটি জার্মানিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সংকটে ফেলেছে। শুধু জ্বালানি খাতের সংকটে চলতি বছর জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে তা ৭ শতাংশ থাকবে বলে মনে করছে দেশটির সরকার।  রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জার্মানিতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হয় ৫৮৯ কোটি ডলারের। সে সময় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৫৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৭৫৯ কোটি ডলারের কিছু বেশি। অর্থবছরটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৭.৫০ শতাংশ। তবে এখন সেই প্রবৃদ্ধি কমতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ১৬৩ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পণ্য, আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা মাত্র ২.৫২ শতাংশ বেশি। ইপিবি’র সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৯৪ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৪৩ শতাংশ।

 ইউরোপীয় ইউনিয়নে বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ১.৩৪ শতাংশ, যার পরিমাণ ১৫২ কোটি ডলার। এসব পরিস্থিতিতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিকারকদের মধ্যে। এরইমধ্যে জার্মানিতে পোশাক রপ্তানির গতি কমে এসেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হারে এ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার জার্মানি। মোট রপ্তানির প্রায় ১৫ শতাংশই হয় দেশটিতে। ২০২১-২২ অর্থবছর জার্মানিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯৫ শতাংশ ছিল পোশাক। পণ্যটির রপ্তানিকারকরা এখন রয়েছেন বড় ধরনের শঙ্কায়।  বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, জার্মানির মন্দার প্রতিফলন এরই মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। রপ্তানি কমছে। জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। অর্থবছরের দ্বিতীয় মাসে এটি ছিল ২০ শতাংশের বেশি। পরের মাসে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে। ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির হার আগামী মাসে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বর্তমানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দিনের বেলায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। 

লোডশেডিংয়ের সময় ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন সচল রাখতে হচ্ছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে বয়লার চালু রাখতেও বাড়তি খরচ হচ্ছে। এদিকে কারখানায় জেনারেটর ব্যবহারের জন্য কম দামে ডিজেল পেতে গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ। চিঠিতে বলা হয়, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখতে তারা জেনারেটর ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন। এতে ডিজেল বেশি লাগছে। বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম কমেছে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয়ভাবে ডিজেলের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হলে সবাই উপকৃত হবেন। বিজিএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, দিনে ৪/৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। জেনারেটরের তেল কিনতে কিনতে কারখানার মালিকেরা ফতুর হয়ে যাচ্ছেন। তৈরি পোশাকের যা অর্ডার আছে, সেটাও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে ঠিকঠাক উৎপাদন করা যাচ্ছে না। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটে কারখানা ভেদে উৎপাদন কমেছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। এদিকে মানবজমিন ডিজিটাল আল-জাজিরার বরাত দিয়ে বলেছে, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মূল্যস্ফীতি এবং সরকারের নীতির বিরুদ্ধে বড় বিক্ষোভ হয়েছে। তিন সপ্তাহ ধরে চলা ধর্মঘটে সমগ্র ফ্রান্সজুড়ে চলছে তেলের তীব্র সংকট। পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিক্ষোভে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ জড়ো হয় বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তারা দ্রুততার সঙ্গে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি ও খাবারের দাম কমানোর দাবি তোলেন।

প্রথম পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

প্রথম পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status